- একই দিনে ঢাকা উত্তর দক্ষিণে সিটি করপোরেশন নির্বাচন
- আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে নেতা কর্মীদের মধ্যে ব্যপক কর্ম চাঞ্চল্য
- সাংবাদিকদের কল্যাণের জন্য বহু সংগঠন দরকার ঃবিচারপতি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন
- জঙ্গিবাদে জড়ানোর কারণ খুঁজতে হবে ঃস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- এস কে সিনহার বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র
- ব্যয় বেড়েছে হযরত শহজালাল বিমান বন্দর প্রকল্পের
- অধ্যাপক অজয় রায় ছিলেন আর ১০ জন থেকে আলাদা
- রেমিটেন্স চাঙ্গা করেছে অর্থনীতিকে
- শেখ হাসিনার নির্দেশমতো সরকার চলবে
- মৌলভীবাজারে কালিবাড়িতে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন
» নব্য জেএমবির ৭ সদস্যের ফাঁসির রায়, খালাস ১ জন
প্রকাশিত: ২৭. নভেম্বর. ২০১৯ | বুধবার

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ২২ জনকে হত্যার দায়ে নব্য জেএমবির ৭ সদস্যের ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে ।
বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, আব্দুস সবুর খান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, হাদিসুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন এ সময় কাঠগড়াতেই উপস্থিত ছিলেন।
রায় শুনে তাদের কারও চেহারাতেই অনুশোচনার কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি। তাদের একজন উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আল্লাহু আকবর, আমরা কোনো অন্যায় করিনি।
অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলায় বিচারের মুখোমুখি করা আরেক আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়েছে রায়ে। তাকে রায় শুনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বিশ্বজুড়ে উগ্রপন্থার প্রসারের মধ্যে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে একদল তরুণের ওই আত্মঘাতী হামলা বাংলাদেশকে বদলে দেয় অনেকখানি।
এ ঘটনা জানান দিয়েছে, কেবল মাদ্রাসাপড়ুয়া গরিব ঘরের ছেলেরা জঙ্গি হয় না । নামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া ধনী পরিবারের সন্তানরাও বাড়ি থেকে পালিয়ে দীক্ষা নিয়েছে জঙ্গিবাদে ।
গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের শেষ মাথায় লেকের তীরে হলি আর্টিজান বেকারি ।এর সবুজ লন ছিল বিদেশিদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। বিদেশিদের নিয়মিত আনাগোনা এবং শিথিল নিরাপত্তার কারণেই ওই রেস্তোরাঁকে জঙ্গিরা হামলার জন্য বেছে নিয়েছিল বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
রোজার ঈদের মাত্র এক সপ্তাহ আগে যেদিন ওই হামলা হয়, সেদিন ছিল শুক্রবার। পিস্তল, সাব মেশিনগান আর ধারালো অস্ত্র হাতে পাঁচ তরুণ রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই ক্যাফেতে ঢুকে শুরু করে নৃশংসতা।
জবাই ও গুলি করে ১৭ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে তারা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযানের সময় ও পরে হাসপাতালে মারা যায় হলি আর্টিজান বেকারির দুই কর্মচারী।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই হামলার খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর শিরোনামে চলে আসে । তখনও অনেকে হলি আর্টিজানের ভেতরে কার্যত জিম্মি হয়ে ছিলেন।
রুদ্ধশ্বাস রাত পেরিয়ে ভোরে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা নামে অভিযানে । ‘থান্ডারবোল্ট’ নামের সেই অভিযানে হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়ে। ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয় মোট ১৩ জনকে।
এরপর দুই বছরে হামলায় জড়িত আরও অনেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন। গুলশান হামলার তদন্তে মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও তাদের মধ্যে জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার আটজনকেই কেবল বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হয়।
মামলা দায়ের: ২০১৬ সালের ২ জুলাই, সন্ত্রাস দমন আইনে, গুলশান থানায়।
মামলাকারী: গুলশান থানার এসআই রিপন কুমার দাস।
তদন্তকারী: কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির।
জিজ্ঞাসাবাদ: জিম্মি অবস্থা থেকে উদ্ধার হাসনাত রেজাউল করিম ও তাহমিদ হাসিব খানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পরে আসামি করা হয়নি।
অভিযোগপত্র দাখিল: ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই। হামলায় জড়িত মোট ২১ জনকে চিহ্নিত করা হলেও জীবিত ৮ জনকেই কেবল আসামি করা হয়।
হামলায় জড়িত, অভিযানে নিহত: তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, সরোয়ার জাহান, তানভীর কাদেরী, বাশারুজ্জামান চকলেট, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ছোট মিজান ও রায়হানুল কবির রায়হান।
দুই বছরের বেশি সময় ধরে তদন্তের পর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন।
সেখানে বলা হয়, হলি আর্টিজানে হামলার পেছনে মূলত তিনটি উদ্দেশ্য ছিল জঙ্গিদের। ১. কূটনৈতিক এলাকায় হামলা করে নিজেদের সামর্থ্যের জানান দেওয়া; ২. বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে নৃশংসতার প্রকাশ ঘটানো এবং ৩. দেশে বিদেশে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পাওয়া এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর ৩ ডিসেম্বর মামলার বাদী এসআই রিপন কুমার দাসের জবানবন্দি নেওয়ার মধ্য দিয়ে এ মামলার বিচার শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে সবশেষ সাক্ষ্য দেন তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।
সাক্ষ্যে তিনি বলেন, “হলি আর্টিজানে হামলার আগে জঙ্গিরা বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করে। এর অংশ হিসেবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া বাজার এলাকার কলেজ মোড়ে একটি বাসায় মিটিং করে প্রথমে তারা হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনা করে।
নব্য জেএমবির জঙ্গিরা ছয় মাস ধরে ওই হামলার পরিকল্পনা করে জানিয়ে পরিদর্শক হুমায়ুন বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানো।”
রাষ্ট্রপক্ষে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ১১৩ জনের সাক্ষ্য এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে আসামিদের বক্তব্য শোনার পর উভয় পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক শুনানি হয়। সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে গত ১৭ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করে দেন বিচারক মজিবুর রহমান।
রায়কে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত থেকেই আদালতপাড়াসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা বাড়ানো হয়। সকালে আট আসামিকে কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় আদালতে।
বিপুল সংখ্যক সংবাদকর্মী সকাল থেকেই উপস্থিত ছিলেন আদালত প্রাঙ্গণে। গুলশান হামলায় যেসব দেশের নাগরিকরা নিহত হয়েছিলেন, সেসব দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও রায় শুনতে আদালতে এসেছিলেন।