অভিজ্ঞতা অর্জনের সীমা বা শেষ নেই

প্রকাশিত: ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০১৮

অভিজ্ঞতা অর্জনের সীমা বা শেষ নেই

নুরুল ইসলাম নাহিদ
উত্তরা ইউনিভার্সিটি এর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত হয়েছি। আমি আপনাদের সবাইকে সমগ্র শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।

আজ আপনাদের জন্য আনন্দের দিন। আজকের এই প্রাণবন্ত ও আনন্দমুখর পরিবেশে আমরা একত্রিত হয়েছি এক ঝাঁক মেধাবী ছাত্রছাত্রীর শিক্ষা সমাপনী ডিগ্রি প্রাপ্তির মিলন মেলায়। আপনাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজ পূরণ হচ্ছে। আজ আপনারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত সনদ গ্রহণ করছেন। আপনাদের এই সাফল্য ও গৌরবের পেছনে রয়েছে আপনাদের অভিভাবকদের অপরিসীম অবদান ও শিক্ষকদের নিরলস প্রচেষ্টা। আপনাদের এই অর্জনের পেছনে এদেশের জনগণ, সমাজ, দেশ ও জাতির অবদান রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জাতির উন্নয়নের জন্য আপনারা সততা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আপনাদের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাবেন- এটিই আজকের দিনের প্রত্যাশা।

আপনারা আমাদের দেশের সম্পদ, দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের একাংশ। আপনাদের আগামী দিনের কার্যক্রমের উপর নির্ভর করছে আমাদের দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির। তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে আপনাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্বায়নের এই যুগে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং দক্ষ মানব সম্পদ অপার সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। আমাদের দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।
আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা জীবন এখানে শেষ হলেও আপনাদের কর্মজীবন এখান থেকেই শুরু হলো। আপনাদের অর্জিত শিক্ষা ও জ্ঞান এখন বাস্তব কর্মজীবনে প্রয়োগ করতে হবে। জ্ঞান ও মেধার প্রয়োগে সৃজনশীলতা ও উদ্যোগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জনের সীমা বা শেষ নেই। জীবনভর তা আয়ত্ব করে আরও বড় সাফল্য অর্জন অব্যাহত রাখা সম্ভব। আপনাদের এ যাত্রাপথ শুভ হউক, সফল হউক।
সুধিমন্ডলী,
আমাদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে। আপনারা জানেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়কে নতুন জ্ঞান অনুসন্ধানের পাশাপাশি অর্জিত আধুনিক জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেয়ার মহান দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানচর্চা এবং সৃজনশীল ও গবেষণা কর্মকান্ড দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এক্ষেত্রে উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কাজে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে দেশে বিদেশে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদির আয়োজন করে আসছে যা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। তাছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সেল প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত গবেষণা, পত্রিকা প্রকাশ এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গবেষণা কাজে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে গবেষণার প্রতি আগ্রহ ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার প্রমাণ দিয়েছে। আমি এ জন্য উত্তরা ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি আগামীতে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি গবেষণা, শিল্প চর্চাসহ বিভিন্ন প্রকার সহশিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সমানভাবে এগিয়ে নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপযোগি করে গড়ে তুলবে। এসব শিক্ষার্থী আমাদের সমৃদ্ধ আগামীর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করবে।

আমাদের শিক্ষার মূল লক্ষ্য — আমাদের নতুন প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসাবে প্রস্তুত করা। প্রচলিত গতানুগতিক শিক্ষায় তা সম্ভব নয়। বর্তমান যুগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আধুনিক বিশ্বমানের শিক্ষা ও জ্ঞান- প্রযুক্তিতে দক্ষ, নৈতিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এক পরিপূর্ণ মানুষ তৈরী করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তারা আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবে এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে। আমরা জানি বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশী দেশ। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য সুদূর প্রসারি এবং দৃঢ়। ২০২১ সালের মধ্যে অর্থাৎ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চাই। বিশ্বব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী ইতিমধ্যে বাংলাদেশ নি¤œমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালে আমরা উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব সমাজে স্থান করে নেব। দারিদ্র দূরীকরণ এখনও আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। দারিদ্র দূরীকরণে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ততদিন দেশ উন্নত হবে না, যতদিন পর্যন্ত দেশ পরিচালনার জন্য, দেশের অর্থনীতির হাল ধরার জন্য, পর্যাপ্ত সংখ্যক জ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ প্রকৃত উচ্চশিক্ষিত নাগরিক আমরা সৃষ্টি করতে না পারি। আমি নবীন ¯œাতকদের আহবান জানাবো দেশের জন্য, দশের জন্য, নিজেদের প্রস্তুত করে তুলতে, ভালো মানুষ হয়ে এই বিশ্বসভায় দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বহুমাত্রিক শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে শিক্ষার্থীদেরকে সম্পৃক্ত করার যথোপযুক্ত পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থাকতে হবে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের থাকতে হবে বিশ্বজনীন দৃষ্টিভঙ্গি এবং জাতি ও বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো জ্ঞান ও অর্ন্তদৃৃষ্টি। আর এজন্যে বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও তথ্য বিপ্লবের সুযোগ গ্রহণ করে তাঁদেরকে যুগোপযোগী মানবসম্পদে পরিণত হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও নতুন জ্ঞান অনুসন্ধান করতে হবে। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সৃষ্ট জ্ঞান আমাদের জাতির মৌলিক ও বিশেষ সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারে। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সে ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ এবং গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য বিষয় বাছাই, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, শিক্ষাদানের পদ্ধতি অব্যাহতভাবে উন্নত ও যুগোপযোগী করতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিজেদেরকে দায়িত্বশীল এবং দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করে তাদের অর্জিত জ্ঞান ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেদের জীবনকে সার্থক করে তুলতে হবে।
আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই তারা যেন আমাদের দেশের বাস্তবতা এবং জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ও টিউশন ফিসহ সকল প্রকার ব্যয় একটি সীমা পর্যন্ত নির্ধারিত রাখতে উদার দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন। এটি আনন্দের বিষয় যে, উত্তরা ইউনিভার্সিটি সীমিত ব্যয়ে মানসম্পন্ন শিক্ষাদানে সচেষ্ট। শিক্ষার মান উন্নয়নে উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তরোত্তর উন্নতি করবে বলে আমি আশা করছি।

আমরা পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। সকল শিক্ষার্থীই আমাদের সন্তান ও ভবিষ্যত। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরো দায়িত্বশীল হতে হবে এবং জনগণ ও দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দেরও এ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ, তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। শুধু শিক্ষা ও জ্ঞান দান বা অর্জনই শেষ কথা নয়, প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বশীল মানুষ তৈরী ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক বিশ্বমানের শিক্ষা, জ্ঞান, দক্ষতা এবং নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমে উজ্জিবিত পরিপূর্ণ মানুষ তৈরী আমাদের কর্তব্য।
সুধীমন্ডলী,
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক বিরাট সম্ভাবনাময় উচ্চ শিক্ষার খাত হিসেবে গড়ে উঠেেছ। ইতোমধ্যে এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশী। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষের বেশী। অনেক প্রতিষ্ঠান মান বৃদ্ধি করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি আশা করি উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ও এক্ষেত্রে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রিয় গ্রাজুয়েটবৃন্দ,
আমাদের নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা লাভকারী গ্রাজুয়েটবৃন্দ দেশ ও জাতির ভবিষ্যত গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। আমরা দেশ ও জনগণের প্রতি আমাদের কর্তব্য ও দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ত্রিশ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীনতা অর্জন করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ এবং উদ্দেশ্য আজও সম্পূর্ণ অর্জিত হয়নি। ক্ষুধা, দারিদ্র, নিরক্ষরতা ও পশ্চাৎপদতামুক্ত এবং সুখী-সমৃদ্ধ, স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধের সেই লক্ষ ও উদ্দেশ্য অর্জিত হতে পারে।

আমি আপনাদের উদ্দেশ্যে পুনরায় বলতে চাই আজ আপনাদের জীবনের একটি অত্যন্ত স্মরণীয়, বরণীয় দিন। আপনারাই এদেশের ভবিষ্যৎ নেতা; রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান, গবেষণা – সকল ক্ষেত্রে আপনাদের মতো উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাই নেতৃত্ব দেবেন। আজ আপনাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ হলো, কিন্তু শুরু হলো আরেকটি অধ্যায় – কর্মজীবন। সেখানে আপনারা একই দ্যুতিতে ভাস্বর হবেন, নিজ প্রতিভার স্বাক্ষর রাখবেন, আমি সেই প্রত্যাশাই করি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31