আবদুল মতিন চৌধুরী ছিলেন সিলেটে গণভোটের অন্যতম নায়ক

প্রকাশিত: ৮:৪৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২০

আবদুল মতিন চৌধুরী  ছিলেন সিলেটে গণভোটের অন্যতম নায়ক

আবদুল মতিন চৌধুরী ছিলেন অবিভক্ত ভারতে আসাম প্রদেশের একজন প্রভাবশালী নেতা । ১৯৪৭ সালে সিলেটে গণভোটের অন্যতম নায়ক । তিনি ১৮৯৫ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারী সিলেট জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । ১৯৪৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর করাচীতে মৃত্যুবরণ করেন ।

রাজনৈতিক কাজে আসাম মুসলিম লীগ নেতা, প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রী ও দেশভাগের পর পাকিস্তানের মন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর মেঘালয়ের শিলং শহরের ক্যান্টনমেন্ট রোডের বাড়িতে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে মাঝেমধ্যে যেতে হতো চরাঞ্চল ধুবরী থেকে । মতিন চৌধুরীর জন্ম সিলেটের গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে, শ্রীহট্টের মানুষ তাকে চিনত ‘কলা মিয়া’ নামে । ১৯৩৩ সালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ্ ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি’ গঠন করলে মতিন চৌধুরী ছিলেন পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক । ‘জিন্নাহর ডানহাত’ বলে পরিচিত সিলেটের ভাদেশ্বরের মতিন চৌধুরীকে বলা হতো, ‘আসাম মুসলিম লীগের জনক’ । মতিন চৌধুরীর সহধর্মিণী বেগম চৌধুরী ফখরুন নেসা খাতুনের মুখে শোনা কথাগুলো ‘ভাসানী কাহিনী’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছিলেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ ।

রাজনৈতিক কাজে মওলানা সাহেব শিলং এর ক্যান্টনমেন্ট রোডের বাড়িতে প্রায়শঃই আসতেন । উল্লেখ্য যে, শিলংয়ের এই বাড়ীতে ১৯৪৫ সালে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ্ সিলেট থেকে গুয়াহাটি যাবার পথে রাত্রিযাপন করেছিলেন । তখন মওলানা সাহেব আসাম আইনসভার সদস্য । একবারের কথা মনে আছে, সেবার খুব শীত, সম্ভবতঃ মাঘ মাস । সন্ধ্যাবেলা গিয়ে উঠলেন তিনি । শেষরাতেই আবার চলে যাবেন গৌহাটি কী জরুরী প্রয়োজনে । লক্ষ্য করলাম লুঙ্গি-পাঞ্জাবী আর চাদর গায়ে, কিন্তু পা খালি ।
বললাম, খালি পায়ে আপনার শীত লাগে না । ঠান্ডা লেগে তো বিছানায় পড়ে যাবেন ।
শিশুর মতন সরল কোমল ভাসানী বললেন, চৌধুরী সাহেবের একজোড়া মোজা আমাকে দ্যান, ঠান্ডাটা বেশীই পড়েছে ।
মতিন চৌধুরীর এক জোড়া পুরনো মোজা পরেই ভোররাতে ভাসানী আসামের গৌহাটি চলে গেলেন ।
বেগম চৌধুরী জানান, গৌহাটি থেকে ফেরার পথে মওলানা আবার তাঁদের বাড়িতে এসে একদিন থাকলেন । দেখা গেল তাঁর মোজা জোড়া নেই ! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মোজা দেখছি না যে ! মওলানা বললেন, আমার এক মুরিদানকে দিয়ে এলাম ।
বেগম চৌধুরী আরো একজোড়া মোজা ভাসানীকে দিলেন । এভাবে আরো কয়েকবার তাঁকে মোজা দেয়া হয়, কিন্তু প্রতিবারই তিনি তা অন্যকে দিয়ে দিতেন ।

অন্য আরেকদিনের গল্প, তখনো মেঘালয়ের শিলংয়ে বড় রুই মাছ কেটে বিক্রি করা হতো, যেমনটা এখনো হয় । মাছের তেলটা আলাদা বিক্রি করা হতো । কোনো কোনোদিন মওলানা ভাসানী শুধু তেলটা কিনে আনতেন । বলতেন, শর্ষের শাক দিয়ে পাক করবেন । রুই মাছের তেল দিয়ে শর্ষে শাক তিনি খুব পছন্দ করতেন । যা কিছু খেতে দেয়া হতো খুব তৃপ্তির সঙ্গে খেতেন মওলানা সাহেব । আমাদের সিলেঠীদের মতো সাতকরার আচার পছন্দ করতেন ভীষণরকম । তাঁকে খেতে বসালে সাতকরার আচার সামনে রাখতাম, আচার দেখে খুব খুশি হতেন । শুধু সাতকরার নয়, অন্য আচারও পছন্দ করতেন । আমের কাশ্মিরী আচারও ভালোবাসতেন । আমাদের সিলেটের মানুষ সাতকরা দিয়ে রান্না করা মাংস খেতে ভীষণ পছন্দ করে । মিসেস চৌধুরীর বাড়িতে এসেও তিনি বাজার থেকে মাংস ও সাতকরা আনাতেন । মওলানা সাহেব ভালো খেতে পছন্দ করতেন । আবার মাঝে মাঝেই রোজা রাখতেন, অল্প পরিমাণে ইফতার করতেন । তাঁর প্রিয় খাদ্য ছিল ঠিকই, কিন্তু যে কোন খাবারই তিনি খুব তৃপ্তির সঙ্গে ধীরে সুস্থে খেতেন । ঝাল পছন্দ করতেন, সেজন্য তাঁর তরকারীতে বিশেষভাবে ঝাল দেয়া হতো । ঝাল কম হলেই কাঁচামরিচ চাইতেন । আলু-বেগুনের খুব ভালো ভর্তা তৈরী করতে পারতেন তিনি । শুকনো মরিচ পুড়িয়ে খাঁটি শর্ষের তেল বা ঘি দিয়ে খুব চমৎকার ভর্তা বানাতেন মওলানা ।

ভাদেশ্বরের কলা মিয়ার পরিবারের সঙ্গে মওলানা সাহেবের ছিলো হৃদ্বিক সম্পর্ক । সিলেটে কোন সভা-সমাবেশে মওলানা সাহেব আসলে রাত্রি যাপন করতেন গোলাপগঞ্জের ভাদেশ্বরে মতিন চৌধুরীর বাড়ীতে ।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31