আম্পানে সুন্দরবনের ১২ হাজার গাছ ভেঙ্গেছে

প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, মে ২৬, ২০২০

আম্পানে সুন্দরবনের ১২ হাজার গাছ ভেঙ্গেছে

ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ১২ হাজার ৩৫৮ টি গাছ ভেঙেছে ।

সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বন বিভাগের গঠিত চারটি কমিটির প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে উঠে এসেছে এ চিত্র।

তাতে বলা হয়েছে, এবার আম্পানে বনের ১২ হাজার ৩৫৮টি গাছ ভেঙেছে। বন বিভাগের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে অন্তত ২ কোটি ১৫ লাখ টাকার।

২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে সুন্দরবনের ৪ হাজার ৫৮৯টি গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন বিভাগের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৬২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

বনবিভাগের খুলনা অঞ্চলেরর বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খাঁন সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “সুন্দরবনকে সময় দিলে সিডর, আইলা ও বুলবুলের আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার মত করেই আম্পানের ক্ষয়ক্ষতিও কাটিয়ে উঠবে।”

অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পান গত ২০ মে দুপুরের পর সুন্দরবনের কাছ দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করে।

সে সময় এ ঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ছিল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১২ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস।

পশ্চিমবঙ্গে তাণ্ডব চালিয়ে আম্পান ওই রাতেই পুরোপুরি বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে পরদিন পরিণত হয় স্থল নিম্নচাপে।

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: তমজিদ মল্লিকঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সুন্দরবন ঘেঁষা শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: তমজিদ মল্লিক
এ দুর্যোগে মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ে গাছ বা ঘর চাপা পড়ে অন্তত ২৩ জনের প্রাণ যায়। প্রবল বাতাসে বহু গাছপালা ভেঙে পড়ে, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন দেশের অর্ধেকের বেশি গ্রাহক। উপকূলের বিভিন্ন এলাকার বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু মানুষ।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুন্দরবন ঢাল হয়ে ঝড়ের গতি কমিয়ে না দিলে জানমালের ক্ষতি হত আরও অনেক বেশি।

এক যুগ আগে ঘূর্ণিঝড় সিডরও গিয়েছিল সুন্দরবনের উপর দিয়ে, যা রক্ষা করেছিল উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা।

সেই ঝড়ে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল অনেক বেশি। তবে কয়েক বছরের মধ্যে প্রাকৃতিক নিয়মে অনেকখানি সামলে ওঠে সুন্দরবন।

গতবছরের শেষ দিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলও এসেছিল একই পথ ধরে, তখনও ঢাল হয়ে ছিল সুন্দরবন।


আম্পানের তাণ্ডবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে ২১ মে চারটি কমিটি করে দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

সেই কমিটিগুলো রোববার বিকালে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষকের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। সোমবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন কর্মকর্তারা।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আম্পানের আঘাতে পশ্চিম সুন্দরবনের দুটি রেঞ্জ এলাকায় ১২ হাজার ৩৩২টি গাছ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এ সব গাছের মধ্যে গরান গাছের সংখ্যা বেশি, যার মূল্য প্রায় ১০ লাখ ১০ হাজার ৫৬০ টাকা।

এ ছাড়া স্থাপনা, জেটি, উডেন ট্রেইল, ওয়াচ টাওয়ারসহ অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার মত।

আর পূর্ব সুন্দরবনের দুটি রেঞ্জ এলাকায় ২৬টি গাছ ভেঙেছে। এ বিভাগের আওতায় জব্দ থাকা বেশকিছু কাঠ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। তাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ ৬ হাজার ৮৩০ টাকা।

পাশাপাশি পূর্ব বনবিভাগে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

তবে বাঘ, হরিণসহ অন্য কোনো বন্যপ্রাণীর তেমন ক্ষতির তথ্য মেলেনি বলে ধারণা করছেন কন বিভাগের কর্মকর্তারা।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশিরুল আল মামুন বলেন, সুন্দরবনে সব ধরনের গাছ কাটা নিষিদ্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত হলেও গাছগুলো ওইভাবেই থাকবে। কোনো গাছ কাটা হবে না।

আর সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবন নিজে থেকেই বুলবুলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে। আম্পানের ক্ষয়ক্ষতিও সুন্দরবন নিজেই কাটিয়ে উঠবে। আমাদের কেবল বন বিভাগের প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোগুলো মেরামত করতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31