ইসলামে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর

প্রকাশিত: ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০২০

ইসলামে রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর

কাজী আনারকলি

প্রতিবছর রমজান মাস আসে আর যায়। কিন্তু এবারের রমজান এলো যেনো একটু ভিন্ন আঙ্গিকে। মুসল্লিদের তারাবির নামাজ আদায় করতে না পারার দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ের জমাট বাঁধা অভিমান নিয়ে। বিরাট নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাংশের মেহনতি মানুষের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে, মসজিদে, রেস্তোরাঁয় , এখানে সেখানে , যে যেভাবে পারে রকমারী ইফতার করার আনন্দে অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত হবার মাধ্যমে।

‘করোনা’র ভীতিকর পরিস্থিতিতে সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জীবন যাপন করলেও এটা সত্য রমজান মাস এসেছে। আর মুসলিম জাহানের মানুষেরা রোজা রাখছেন ।

ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোজা । নামাজের পরে মুসলমানদের প্রতি মহান আল্লাহ তাআলা যে ইবাদত ফরজ করেছেন সেটি হচ্ছে এই ৩০ দিন রোজা রাখা। হিজরী দ্বিতীয় সালে মুসলমানদের উপর রোজা ফরয করা হয়।

ইহকালীন ও পরকালীন কল্যাণ লাভের এক উৎকৃষ্ট পথ এই রমজান মাস ।পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এর মাধ্যমে ।

‘রামাদান’ শব্দটি আরবী ‘রামদ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত । এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘দহন , প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা’ । এক মাস রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ তার জাগতিক কুপ্রবৃত্তিগুলো পরিহার করে সুপ্রবৃত্তি গুলোর বিকাশ ঘটায়। মানুষ তার কামনা বাসনার যে লুলোপ দৃষ্টি, তা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দূরে ঠেলে দিয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে ওঠে এ মাসেই।

রোজা রাখার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ‘সেহরি’ খাওয়া। শেষ রাতে অর্থাৎ সুবহে সাদিক এর পূর্বে ‘সেহরি’ খাওয়ার মধ্যে আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত ও নিয়ামত রয়েছে । এ সম্পর্কে আমাদের নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর নির্দেশ – ” তোমরা সেহরি খাও, কারণ ‘সেহরি’ খাওয়ার মধ্যে ‘বরকত’ নিহিত রয়েছে” ( বুখারী ও মুসলিম )।

‘সেহরি’ শব্দটি মূলত উর্দু শব্দ। মূল আরবী ‘সহুর’ ; এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে ‘নিদ্রাভঙ্গ’ । রোযা পালনের জন্য সুবহে সাদিক এর পূর্বে শেষ রাতে যা কিছু পানাহার করা হয় সেটাকেই উর্দুতে ‘ সাহরি ‘ আর আরবীতে ‘সহুর’ বলা হয় ।

পরম করুণাময়, সর্ব শক্তিমান আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য ‘সেহরি’ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ।নবী করীম (সঃ) সেহরি ও ইফতারের সময় নির্দিষ্ট করে আমাদের জন্য রোজা রাখা টা অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন । সারাদিন সর্ব প্রকার পানাহার থেকে বিরত থেকে সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট সময় শেষে ইফতার করার মধ্যে আল্লাহর অশেষ রহমত ও ফজিলত রয়েছে। এভাবে রোজার মাসটি মুসলমানদের কাছে হয়ে উঠেছে আত্মবিশ্লেষণ ( self analysis)এবং আত্মসংযমের(self restraint) মাস ।

ইসলামের essential উপাদান হিসেবে মাস ব্যাপী সিয়াম সাধনা সব অন্যায়, অমানবিক এবং harmful কাজ করাকে নিষেধ করে । মিথ্যা ,অন্যায় ,বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা এবং সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা ও সবধরণের প্রতারণা, প্রবঞ্চনা থেকে পরিত্রান পেতে পারি শুধু এ মাসেই।নিজেদের বিচার বিশ্লেষণ করতে পারি , নিজেদের সংশোধন করতে পারি এ মাসেই।

পবিত্র রমজান মাস শেষে আসে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান ‘ঈদ-উল- ফিতর’ ।’ঈদ’ অর্থ খুশি। মাসব্যাপী সিয়াম পালনকারীদের জন্য ‘ঈদ’ আনন্দের বন্যা বয়ে আনে । ” Eid is also a communion of souls ” . ঈদ জাগতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের মূর্ত প্রতীক ।ঈদের নামাজের পর ছোট-বড় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একজন আরেকজনের সাথে কোলাকুলি করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় । সব মুসলমান ভাই ভাই , আমরা সবাই সমান, এক সূত্রে গাঁথা। এভাবে সব মুসলমান রমজান মাসের পর পুনরায় তাদের গতানুগতিক জীবনে ফিরে আসে।

আমাদের এবারের ‘ঈদ-উল- ফিতর’ ও যেনো উৎসব মুখর পরিবেশে পালন করতে পারি , মহান স্রষ্টার কাছে এই মিনতি জানাই।

আমাদের এবারের রোযা পালন কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় পালন করলেও আগামী বছর যেন মহান আল্লাহ পাক আমাদের আবার সুন্দর ভাবে ,মুক্ত ভাবে ‘করোনা’ ভাইরাসহীন রোযা পালনের তৌফিক দান করেন। আমীন।

কাজী আনারকলি : কবি ও শিশু সাহিত্যিক

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31