২৯শে মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:৫৩ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯
সরওয়ার আহমদ:
যুবলীগের দুই মহারথী খালেদ মাহমুদ ভূইয়া এবং জি.কে শামীম র্যাবের হাতে আটক এবং তাদের নিকট থেকে রক্ষিত টাকার ভান্ডার উদ্ধার নিয়ে নিস্তরঙ্গ সামাজিক প্রেক্ষাপটে এক প্রকার আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে বৈ কি। অধ্যাপক মুনতাসির মামুনের ভাষায়- সব সম্ভবের দেশে অসম্ভব বলতে কিছু নেই। অপার সম্ভাবনাময় এদেশে দুহাত ভরে টাকা কামাই করে রাতারাতি আঙ্গুঁল ফুলে বটগাছের অবয়ব ধারণ এবং অধিপত্যের মৃগয়া ক্ষেত্র রচনা করে নিজেকে তরুণতুর্কী ঘোষনা যেমন সম্ভব, তেমনি বটগাছের ধপাস পতন সহ তরুণতুর্কীরূপী সিংহের বিড়াল সাজাটাও অসম্ভব কিছু নয়। চলমান দৃশ্যপট এটাই জানান দিচ্ছে। যুবলীগের তথাকথিত এই দুই নেতার অপকীর্ত্তি তথা কান্ডকারখানা নিয়ে নানামুণীর নানামত সামাজিক মাধ্যমে গুঞ্জরণ তুলছে। তন্মধ্যে যুবলীগের বয়স্ক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন- যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এতোদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়নি কেনো? প্রশ্নটি বড় গুরুত্বপূর্ণ এবং যথাযথ। এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজে বের করাটাও দুরূহ ব্যাপার নয়। প্রবচন আছে- বিষবৃক্ষ বেড়ে উঠে মাটি ও পরিবেশ গুণে। বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে উর্বরাশক্তির ভূমিকাটাও হেলাফেলার নয়। রাজনৈতিক মাঠে গজিয়ে উঠা বিষবৃক্ষের বেলায়ও তদ্রুপ ঘটে। ফ্রীডমপার্টি থেকে আগত খালেদ মাহমুদ এবং যুবদল থেকে আগত জি.কে শামীম যুবলীগের মতো সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করণের পেছনে কি যুবলীগ নেতৃবৃন্দের আশ্রয় প্রশ্রয় সহ সমর্থন ছিল না? এই সমর্থন বা আশ্রয় প্রশ্রয় প্রদান কি এমনিতেই হয়েছে। নিশ্চয়ই লেনদেনের প্রশ্ন নিহিত আছে তাতে। তাদের অনৈতিক রুটি রুজির খবর স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী মহলের অবগতির বাইরে অবশ্যই ছিলোনা। তাদেরকে ম্যানেজ করে উড়নচন্ডীদের উর্দ্ধবিকাশের ধারা গতিশীল ছিলো। কিন্তু পাপ বালেগ হলে সেই পাপের ভারে একসময় ডুবে যেতে বাধ্য। স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্রয় এবং রাজনৈতিক মহলের মৌন সমর্থন পুষ্ট হয়ে খালেদ-শামীমরা যখন দুর্দমনীয় হয়ে উঠে তখন তাদের আমলনামা সরকারের উর্দ্ধমহল তথা প্রধানমন্ত্রীর অবগতিতে পৌছে। অত:পর প্রধানমন্ত্রীর সৃদৃঢ় নির্দেশনায় তাদেরকে পাকড়াও করা সম্ভব হয়েছে। এখানে “ছোট মিয়া ও মেজো মিয়াদের” দোহাইয়ে কোন ফলোদয় হয়নি। পারিবারিক ক্ষেত্রে ছোট মিয়া এবং মেজো মিয়ারা জঞ্জাল সৃষ্টি করে পরিবার কর্ত্তার অবস্থান যেমনি ক্ষুন্ন করে, তদ্রুপ দল কিংবা সরকারের বেলায়ও এমনটি ঘটে। অতীতের রেফারেন্স টানলে এমন নজির পাওয়া যাবে ভুরিভুরি। এক্ষত্রে দলকর্ত্তা এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবস্থানটা হচ্ছে প্রধান বিবেচ্য বিষয় এবং ভরসাস্থল। নেত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা প্রশ্রয়হীন এবং কঠোর বলেই প্রতীয়মান হয় । যার ফলশ্রুতিতে ধান্ধাবাজ ছাত্রলীগারদের এবং হাইব্রীড যুবলীগারদের উৎপাটন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বলাবাহুল্য ক্ষমতাকে ভর করে যুগে যুগে ধান্ধাবাজরা রাজনৈতিক সাইনবোর্ডকে সামনে ধরে আখের গোছানোতে ব্যাপ্ত হয়। হাল আমলেও তার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তৃণমূলকে পেছনে টেনে হাইব্রীডরা তাদের অবস্থান সংহত করতে তৎপর সবখানে। দল এবং সরকারের জন্য এটি এক অশনি সংকেত। সাহসী যোদ্ধা হিসেবে এখানে শেখ হাসিনার ভূমিকাটাই মুখ্য। এতো দিন তিনি লড়েছেন প্রত্যক্ষ বৈরীর বিপক্ষে এবং জয়ীও হয়েছেন। এখন তার লড়াই শুরু হয়েছে সত্তাশ্রিত রিপুর বিরুদ্ধে। প্রত্যক্ষ শত্রুর চাইতে সত্তাশ্রিত রিপু ভংঙ্কর এবং আত্মবিনাশী। এই রিপু বিরোধী যুদ্ধে তৃণ মূলের অকুন্ট সমর্থন যে তার আছে- সেটি কানখাড়া করলেই অনুমিত হয় সহজে।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com