২৯শে মার্চ ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২, ২০২০
রবিশঙ্কর মৈত্রী
এক.
গুনে গুনে চৌদ্দ বছর আগের কথা, আমি তখন প্রাইভেট টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনে কর্মরত। একদিন কবি নির্মলেন্দু গুণ ফোনে বললেন, তোমার কাছে লক্ষ্মীকে পাঠালাম।
আমি বললাম, লক্ষ্মী আমার সয় না দাদা।
কবিদার সঙ্গে প্রাণখোলা হাস্যালাপ শেষ হবার কিছুক্ষণ পরই লক্ষ্মী এল।
লক্ষ্মী তার পারিবারিক ডাকনাম। আসলে সে বনানী বিশ্বাস। বাংলায় অনার্স মাস্টার্স শেষ করে সবে ঢাকাবাসী হয়েছে।
বাংলাভিশনে নয়, চ্যানেল আইয়ের একটি খণ্ডকালীন কাজে তাকে লাগিয়ে দিলাম। তারপর আমারও মনে হল, গণমাধ্যম বনানীর জন্য নয়। সে নিজেই একদিন নাগরিক উদ্যোগে কাজ খুঁজে নিল। দলিত সমাজের উন্নয়নমূলক কাজ।
তারপর এশিয়াটিক সোসাইটির বৃত্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করল, লিখে ফেলল যৌনকর্মীদের জীবন ও উপাখ্যান। তারপর একটি বাড়িতে গিয়ে আবৃত্তি শেখানোর কাজ শুরু করল, সঙ্গে চলল আবৃত্তি দলের কাজ। এবং তারপর একদিন নিজেই অভিযান নামের সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে গেল। তার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়াল দলিতদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই।
বনানী এবং তার সহযোদ্ধা স্বামী তন্ময়ের দীর্ঘ জার্নির সঙ্গে আমিও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ছিলাম। এবং দেশ ছেড়ে আসার পরও দূর থেকে শুধু তাকে সমর্থনই দিয়ে আসছি কিন্তু উদারহৃদয় লেখক মোয়াজ্জেম হোসেন আলমগীর সুদূর সুইডেন থেকে সবসময় বনানীর সকল সমাজকর্মে যুক্ত আছেন মননে ও অর্থায়নে।
দুই.
কত শত বছর আগে বিনামূল্যের হাট বিলুপ্ত হয়েছে ঠিক ঠিক বলতে পারব না। তবে বলতে পারব, বাংলাদেশের একটি গ্রামে এই করোনাকালে বিনামূল্যের হাট আবার ফিরে এসেছে– আর এই কাজটি করেছে সেই বনানী বিশ্বাস।
যে একদিন কবি নির্মলেন্দু গুণের স্নেহধন্যা ছিল এবং আমার কাছেও এসেছিল একজন গণমাধ্যম কর্মী হবার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু আজ সে নিজেই গণমাধ্যমের সংবাদ।
বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্তিক জনপদ যখন কোভিড ১৯-এর আতঙ্কে সংকুচিত তখন বনানীর নেতৃত্বে নড়াইল জেলার এগারোখান গ্রামটি করোনামুক্তই শুধু নয়, খাদ্যেও স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং ত্রাণমুক্ত।
বনানী করোনাকালে ঢাকা থেকে ফিরে গেছে তার শ্বশুরালয় এগারোখান গ্রামে। সে পুরো গ্রামটিকে আগলে রেখেছে। গ্রামের প্রতিটি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গৃহ ও গ্রামব্রত পালন করছেন। বনানীর উদ্যোগে
সবার বাড়িঘর এবং রাস্তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। এখন কেউ গ্রামের বাইরে যাচ্ছেন না এবং বহিরাগতও এগারোখান গ্রামে প্রবেশ করতে পারছেন না।
তিন.
এগারোখান গ্রামের এক প্রান্তে বাঁশঝাড়ের বেদীতে অভূতপূর্ব এক হাট বসিয়েছে বনানী বিশ্বাস– এই হাটের নাম বিনামূল্যের হাট।
ক্ষেতের বাড়তি শাক সবজি এবং ঘরের চাল ডাল কেউ কেউ হাটে রেখে যাচ্ছেন, বিনিময়ে তাঁরা একটি পয়সাও নিচ্ছেন না। যাঁর প্রয়োজন তিনি হাট থেকে বিনামূল্যে সদাই নিয়ে ঘরে ফিরছেন।
মানুষ যখন তখন মহৎ উদার হয়ে উঠতে পারে– যদি মানুষকে জাগিয়ে তোলা যায়। বনানী যোগ্য নেত্রী। সে আটপৌরে শাড়ি পরে বৈশাখের তাপদাহ এবং কালবৈশাখী উপেক্ষা করে এগারোখান গ্রামের ঘর থেকে মাঠ পর্যন্ত কাজ করে চলেছে। চরম দুঃসময়ে সে এক অনন্য সাহসিকা হয়ে উঠেছে।
বনানী হোক করোনাকালের ঘুমভাঙানিয়া। বনানী বিশ্বাস , তোমাকে অভিবাদন৷
সকলের মঙ্গল হোক।
২রা মে ২০২০
আলেস, ফ্রান্স
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com