১৮ই এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০১৮
রানী মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহ। হাসপাতালে গিয়ে শনাক্ত করলেন নিজের ছেলের ক্ষত-বিক্ষত লাশ। নখ উপড়ে নেয়া হয়েছে। ঘাড়ে ধারালো অস্ত্রের কোপ। লাশটি আধপোড়া, পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।
এরপরও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার যে নজির রেখেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের এই ইমাম তা কল্পনাতীত।
ইমামের ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যার খবরে যাতে এলাকায় দাঙ্গা ছড়িয়ে না পড়ে, তাই নিজেই মাইক নিয়ে নেমে যান রাস্তায়। সবাইকে সহিংসতায় না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানালেন তিনি। দৃশ্যত এতে কাজও হয়েছে।
আসানসোলের যে অঞ্চলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে দাঙ্গা শুরু হয়েছিল সেই চাঁদমারি আর কুরেশী মহল্লায় নূরানী মসজিদ। বৃহস্পতিবার খবর আসে, মসজিদের ইমাম মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহর নিখোঁজ ছেলের লাশ পড়ে আছে স্থানীয় হাসপাতালে।
আগের দু’দিন ধরে নিখোঁজ ছেলেকে খুঁজেছেন ইমাম ইমদাদুল্লাহ। সেই সঙ্গে মহল্লার সব মানুষ। কোথাও পাওয়া যায়নি তাকে। ক্ষত-বিক্ষত লাশটি যখন মহল্লায় আনা হলো, পরিস্থিতি হয়ে উঠলো আরো অগ্নিগর্ভ।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমাম মুহাম্মদ ইমদাদুল্লাহ বুঝতে পারলেন এই প্রতিহিংসার রাশ টানতে হবে এখনই। নইলে আরো রক্ত ঝরবে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। প্রাণ যাবে আরো মানুষের।
একটা মাইক হাতে বেরিয়ে পড়লেন ইমাম। মহল্লায় মহল্লায় ঘুরে সবার প্রতি আবেদন জানালেন, আপনারা শান্ত হোন।
ছেলে হারানোর কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে গেল ইমামের। তবে তার মধ্যেও বলছিলেন, ‘এই অবস্থাতেও আমি সবার কাছে আবেদন করতে রাস্তায় বেরিয়েছিলাম। সবাইকে বুঝিয়েছি- আমার যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা যেন আর কোনো বাপ-মায়ের না হয়।- কেউ যেন দাঙ্গা না বাঁধায় ছেলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।’
পুত্রশোকের মধ্যেও এলাকায় ঘুরে ছেলের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্তি না ছড়ানোর জন্য তার এই আবেদনে কাজ হলো। লোকজন ঘরে ফিরে গেল।
আসানসোলের চাঁদমারি আর কুরেশী মহল্লা মূলত মুসলমান প্রধান এলাকা। মহল্লার বাসিন্দা মুহম্মদ ফারহাদ মালিক বলেন, ‘ইমাম সাহেবের ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটা শুনে প্রথমে সবারই মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল। এটা তো রক্ত গরম করে দেয়ার মতোই ঘটনা।’
ইমামের ১৬ বছরের ছেলে মোহাম্মদ শীবগাতউল্লাহ দাঙ্গা শুরুর পর দু’দিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। বৃহস্পতিবার প্রথম তার লাশের সন্ধান পান তারা।
ইমাম বলেন, ‘ছেলেটা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল, একই সঙ্গে নানা জায়গায় কোরআন পড়তেও যেত। বুধবার যখন অশান্তি শুরু হয়, তখন নেহাতই কৌতূহলবশে দেখতে গিয়েছিল। আমার বড় ছেলে খবর দেয় যে একদল লোক ওকে টেনে নিয়ে যায়। পরদিন জানলাম, একটা মৃতদেহ পাওয়া গেছে- ওটাই আমার ছেলের দেহ।’
তিনি বলেন, ‘খুব যন্ত্রণা দিয়ে মেরে তো ফেলেছে ছেলেটাকে, তারপরে দেহটা জ্বালিয়েও দিয়েছিল। এটা কেন করল ওরা!’
এই নিদারুণ পুত্রশোক ভুলে ইমদাদুল্লাহ যে বলিষ্ঠ অবস্থান নেন, সেটি যেন আসানসোলকে আরো বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এই ভয়ঙ্কর ঘটনার পরও তার এলাকায় আরো দাঙ্গা তথা সাম্প্রদায়িক অশান্তি রোধ করা গেছে।
ওই মহুয়াডাঙ্গাল এলাকারই বাসিন্দা প্রমোদ বিশ্বকর্মা বলেন, ‘ইমাম সাহেবকে যে কী বলে ধন্যবাদ দেব! ছেলে হারানোর পরেও রাস্তায় মাইক নিয়ে বলে বেরিয়েছেন যে সবাই যেন শান্তি বজায় রাখে।’
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com