ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কতদূর ?

প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৩১, ২০২০

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন কতদূর ?

আনোয়ার ফারুক তালুকদার

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা প্যাকেজের মাত্র ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করতে পেরেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রণোদনা ছিল ২০ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে বলা ছিল শিল্প খাতে ৫০ ভাগ, সেবা খাতে ৩০ ভাগ এবং ব্যবসা খাতে ২০ ভাগ ঋণ দিতে হবে। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায় দেশে শিল্প খাতের অবদান ৫০ শতাংশ নয় , তেমনি সেবাখাতের অবদানও ৩০ শতাংশ নয়। ফলে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সমস্যায় পড়ে। দেখা গেল ব্যাবসা খাতে ২০ ভাগ বেশ কিছু ব্যাংক দিতে সক্ষম হয়েছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক এবং ব্যাবসায়ী সংগঠনের আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিবর্তিত আরেকটি নির্দেশনা দেয় যেখানে বলা হয় শিল্প এবং সেবা খাত মিলয়ে ৮০ শতাংশ করা যাবে। অর্থাৎ আলাদা আলাদা ভাবে ৫০ এবং ৩০ শতাংশ না করলেও চলবে। কিন্তু তাতে করেও প্রণোদনার ঋণ বিতরণে খুব একটা অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় না । ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাবসায়ী এবং ব্যাংকারদের পূর্ববর্তি দাবীর প্রতি নমনীয় হয়ে আবার আরেকটি নির্দেশনা দেয় যেখানে ব্যাবসা খাতের বরাদ্দ ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। অর্থাৎ ১০ ভাগ বাড়ানোর ফলে আগে যে ব্যাংক মোট ১০০ টাকা প্যাকেজের মধ্যে ২০ টাকা দিতে পারত এখন তারা ৩০ টাকা ব্যবসা খাতে বিতরণ করতে পারবে। এই ১০ ভাগ বাড়ানোর পরেও শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। একদিকে যেমন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যদিকে বৃহৎ শিল্পের বেশীরভাগ ঋণই প্রদান করা হয়ে গেছে। এবং সম্প্রতি নতুন করে আরও ৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ বৃহৎ শিল্প ও সেবা খাতের জন্য ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে একটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য- কেন ব্যংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে প্রণোদনার ঋণ বিতরণ করতে পারছে না? তার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে ব্যাংকাররা চিহ্নিত করেছেন ঋণ বিতরণের খাতভিত্তিক বিভাজন। এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের মোট ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ঋণের ৬০ ভাগই হচ্ছে ব্যবসা খাত। এই কারনে ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। এই খাতে ঋণপ্রাপ্তিতে যে সীমাবদ্ধতাগুলো রয়েছে, সেগুলো দ্রুত দূর করতে হবে। এতে কর্মসংস্থান টিকিয়ে রেখে এ খাত পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। নইলে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে বিকাশের ধারায় ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। এ খাতের উদ্যোক্তাদের আয় ও সঞ্চয় সীমিত হওয়ায় যেকোনো অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলার সক্ষমতাও কম। আশা করা যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন নির্দেশনায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আরও ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ দ্রুতই বিতরণ সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু এগিয়ে এসেছে তাই ব্যাংকার এবং ব্যবসায়ীদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের শিল্প এবং সেবা খাতের বরাদ্দকৃত ১৪ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সকল পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। কারণ শিল্প এবং সেবা খাতই প্রকৃত অর্থে অর্থনীতির চালিকা শক্তি এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম খাত।

ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31