ছাত্রদলের ১২ কেন্দ্রীয় নেতা বহিষ্কার!

প্রকাশিত: ১:৫২ অপরাহ্ণ, জুন ২৩, ২০১৯

ছাত্রদলের ১২ কেন্দ্রীয় নেতা বহিষ্কার!

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার :

দলীয় শৃঙ্খলা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ১২ নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
শনিবার রাত ১১টা ৮ মিনিটে গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে’।
বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতারা হলেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সভাপতি জহির উদ্দিন তুহিন, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট, সাবেক সহ-সভাপতি ইকতিয়ার কবির, সাবেক সহ-সভাপতি জয়দেব জয়, সাবেক সহ-সভাপতি মামুন বিল্লাহ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বায়েজিদ আরেফিন, সাবেক সহ-সাধারণ সম্পাদক দবির উদ্দিন তুষার, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত, সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মালেক, সাবেক সদস্য আজীম পাটোয়ারী।
২০১৪ সালে রাজিব আহসান ও আকরামুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথমে ১৫৩ সদস্যর দুই বছর মেয়াদী ছাত্রদল কমিটি ঘোষণা করে বিএনপি। পরে এই ১৫৩ সদস্যের কমিটি বাড়তে বাড়তে তা ৭৩৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে পৌঁছায়। যা নিয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক হাস্যরসের সৃষ্টি হয়। এত ঢাউস সাইজের কমিটি গঠনের পেছনে ব্যাপক অর্থ লেন-দেনের প্রকাশ্য অভিযোগও উঠে এই কমিটির বিরুদ্ধে। ঢাউস সাইজের ওই কমিটির অধিকাংশ নেতাদের বয়স চল্লিশের বেশি ও তাদের সিংহভাগেরই ছাত্রত্ব অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়। এছাড়া দেশীয় রাজনীতিতে এত বিশাল কমিটি গঠনের পরও সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদল বিশেষ করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ পদের নেতাদের নিষ্ক্রিয়তাকে রহস্যজনক হিসেবে সমালোচনা করে দলটির সাধারণ নেতাকর্মীরা।
নির্দিষ্ট মেয়াদেরও তিন বছর বেশি পার হওয়ায় গত ৩ জুন ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলের মাধ্যমে সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। আর কাউন্সিলে প্রার্থী হতে ২০০০ সাল থেকে পরবর্তী যেকোনো বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া এবং অবশ্যই বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী হওয়াসহ তিনটি শর্ত নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু বিলুপ্ত কমিটির নেতারা এর প্রতিবাদে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল গেটে তারা লাগিয়ে অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে। এরপর ধারাবাহিকভাবে তারা পরপর কয়েকদিন বিএনপির সদর দপ্তরের সামনে নিয়মিত অবস্থান কর্মসূচিও পালন করে। একই সঙ্গে তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেড়ে চলে যাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী পরিষদের একটি বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দিতে কার্যালয়ের নীচে নামেন রিজভী আহমেদ। এ সময় বিলুপ্ত কমিটির বিক্ষুব্ধ নেতারা তাকে সেই মিছিলে নেতৃত্ব দিতে বাধা দেন। এক পর্যায়ে রিজভী আহমেদ মিছিল করতে না পেয়ে আবারও কার্যালয়ের ভেতরে চলে যান। এরপর বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতারা বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকে বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ থেকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
এদিকে, বহিষ্কৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকি শনিবার রাতে বহিষ্কারের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা বিগত কমিটির নেতারা একটি যৌক্তিক দাবিতে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছিলাম। বিগত সময়ে আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ছাত্রদলই সামনে থেকে জেল-জুলুম, নির্যাতন উপেক্ষা করে আন্দোলন করেছে। কিন্তু আমাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে তৃণমূলে ভুল বার্তা দিল বিএনপি।
বাশার আরও বলেন, একটি ষড়যন্ত্রকারী মহল আমাদের প্রিয় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ছাত্রদল সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌছে দিয়েছে। যে কারণে বিএনপি ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে অবশ্যই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপলব্ধি করতে পারবেন বিএনপির ষড়যন্ত্রকারীদের পরামর্শ আসলেই ভুল ছিল।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31