তীব্র যানজটে আর গণপরিবহন সংকটেে চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

প্রকাশিত: ২:১৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১৯, ২০১৯

তীব্র যানজটে আর গণপরিবহন সংকটেে চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার:

তীব্র যানজট আর গণপরিবহনের সংকটে নগরীর যাত্রী সাধারণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। পরিবর্তিত অফিস সময় অনুযায়ী বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের প্রায় ৯৭ শতাংশ সিটিং সার্ভিসের নামে দরজা বন্ধ করে যাতায়াত করছে। এতে নগরীর মাঝপথের বিভিন্ন স্টপেজের যাত্রীসাধারণ চরম নৈরাজ্যের শিকার হচ্ছেন। কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে এমন চিত্র ওঠে এসেছে।
পবিত্র রমযানের শুরু থেকেই ইফতারির পূর্ব মুহূর্তে যানজট, গণপরিবহন সংকট আরও তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে সংকট তত বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে নগরের মানুষ আসলেই অসহায়।
গতকাল শনিবার সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
এতে বলা হয়, বাসগুলো সরকার নির্ধারিত ভাড়ার পরিবর্তে কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এতে করে নিম্নআয়ের লোকজনের যাতায়াত দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে নগরীতে চলাচলকারী সিএনজি অটোরিক্সা শতভাগ চুক্তিতে চলাচল করছে। এতে মিটারের প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়াও যাত্রীদের পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হয় না ৯৩ শতাংশ অটোরিক্সা। অনেকটা কাকতালীয়ভাবে ড্রাইভারের পছন্দের গন্তব্যে মিলে গেলে রাজি হয় যাত্রীর গন্তব্যে যেতে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, কমলাপুর, মগবাজার, শনিরআখড়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা, শাহবাগ, ফার্মগেইট, মিরপুর-১০, মহাখালী, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারাসহ নগরীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকার রাস্তায় ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও ট্যাক্সি ক্যাবের দেখা মেলে না। নেরাজ্যে প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছে রাইড শেয়ারিং এর নামে চলাচল করা মোটরবাইকগুলো। বিকাল ৪টার পর থেকে অ্যাপস এর পরিবর্তে খ্যাপে ৩ থেকে ৪ গুণ অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী বহণ করার চিত্র নগর জুড়ে দেখা গেছে।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী ছাউনি না থাকায় বা যাত্রী ছাউনিগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় তীব্র গরমে নাজুক পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন নগরীর রোজাদার যাত্রী-সাধারণ। বিশেষত নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা এ পরিস্থিতিতে ভয়াবহ অবস্থার মুখোমুখি হলেও রাস্তার কোথাও দাড়াঁনো বা বসে বিশ্রামের সুযোগ মেলে না।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলছে, রমজানে নগরীতে যাত্রীসাধারণের যাতায়াত পরিস্থিত সরেজমিন পর্যবেক্ষণকালে এ চিত্র উঠে এসেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গপরিবহনে ভাড়া নেরাজ্য ও যাত্রীসেবা পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির সদস্যরা রমজানের শুরু থেকে যাত্রীসাধারণের কর্মস্থলে যাতায়াত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে।
এই সময় দেখা গেছে, অফিস ছুটি শেষে ইফতারকে কেন্দ্র করে ঘরমুখী যাত্রীকে টার্গেট করে নগরীতে চলাচলকারী বাসের প্রায় সবক’টি এখন রাতারাতি সিটিং সার্ভিস বনে যায়। এইসব বাসগুলো বিশেষত ইফতারের সময় যাত্রীদের ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দ্রত গন্তব্যে যাত্রা করে। এই সময়কালে একমাত্র বি আরটিসি ও হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানির বাস লোকাল হিসেবে চলাচল করে। এইসব বাসে মাঝপথের যাত্রীরা বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনের ভাড়া নেরাজ্য ও যাত্রীসেবা পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ৩টি টিম গত ৭ দিন যাবৎ নগরীতে উল্লেখিত স্পটসমূহে রমজান মাসে যাত্রী ভোগান্তি ও ভাড়া নেরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণে এসব এলাকায় বাস-মিনিবাস, অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাব, রাইড শেয়ারিং সার্ভিসসমূহের যাত্রীসেবা পরিস্থিতি, চালক ও যাত্রীসাধারণের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি তেরি করে।
সমিতি বলছে, পর্যবেক্ষণকালে ৯০ শতাংশ যাত্রী রমজানে গণপরিবহন ব্যবস্থার এ কর্মকান্ডের ওপর তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ৯৫ শতাংশ যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াতে দূর্ভোগের শিকার হন। ৯৮ শতাংশ যাত্রী অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নেরাজ্যের শিকার হয়। ৬৮ শতাংশ যাত্রী চলন্ত বাসে উঠানামা করতে বাধ্য হন।
সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও ৩৬ শতাংশ যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হন। হয়রানীর শিকার হলেও অভিযোগ কোথায় করতে হয় জানে না ৯৩ শতাংশ যাত্রী। তবে ৯০ শতাংশ যাত্রী মনে করেন অভিযোগ করে কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না বলেই তারা অভিযোগ করেন না। যাত্রী ভোগান্তির এ চিত্র জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় গুরুত্ব পেলেও এসব ভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31