তেজগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও অবহেলার অভিযোগ

প্রকাশিত: ১১:২৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৯

তেজগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও অবহেলার অভিযোগ

তেজগাঁও থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব ও অবহেলার অভিযোগ ।
৫ মাস আগে রাজধানীর ফার্মগেইটের সম্রাট হোটেল দুই তরুণ-তরুণীর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনও আদালতে জমা না পড়ায় অভিযোগ করেছেন বাদী।

সম্রাট হোটেলের অষ্টম তলার একটি কক্ষ থেকে গত ২ এপ্রিল বিকালে আমিনুল ইসলাম সজল ও মরিয়ম চৌধুরী জেরিন নামে ঢাকার দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্নাতক পর্যায়ের দুই শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

ওই ঘটনার দেড় মাস পর হোটেলের মালিক জসীম উদ্দিন চৌধুরী কচি, হোটেলের ব্যবস্থাপক রাসেল আহমেদ সুমন ওরফে লিটন ও হোটেলের তত্ত্বাবধয়ক আহাম্মদ হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন মরিয়মের বাবা মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী।

মঙ্গলবার তিনি বলেন, পুলিশ আসামিদের পক্ষ নিয়ে শুধু যে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করছে, তা নয়, এ মামলাকে কীভাবে চাপা দেওয়া যায় সে বিষয়ে নানা রকমের উদ্যোগ নিয়েছে।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক শরীফুল ইসলাম ইসলাম বলেছেন, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়ায় তারা আদালতে জমা দিতে পারেননি। তদন্তে তাদের দিক থেকে কোনো ত্রুটি নেই।

মোস্তাক আহম্মেদ চোধুরীর মেয়ে মরিয়ম ঢাকার ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়তেন। ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী থাকতেন ধানমণ্ডির একটি মহিলা হোস্টেলে ।

আর তেজগাঁও কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র আমিনুল কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের মোশাররফ হোসেনের ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি মেসে থাকতেন। ১ এপ্রিল মরিয়মকে নিয়ে তিনি স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সম্রাট হোটেলে উঠেছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

মোস্তাক আহম্মেদ চোধুরীর অভিযোগ, তেজগাঁও থানা পুলিশ তাদের ‘অপমৃত্যু’ মামলা করতে বলেছিল। তাতে আপত্তি জানিয়ে তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাতে ‘গড়িমসি’ করায় গত ১৪ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন তিনি।

মামলার আরজিতে মোস্তাক বলেন, তার মেয়ের সঙ্গে কারও সম্পর্ক নেই। হোটেলের মালিক ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে তার মেয়েকে হত্যা করেছে। পুলিশ প্রথমে তার মেয়ের ময়নাতদন্ত করাতে রাজি হয়নি। হত্যা মামলা করতে চাইলে তাও গ্রহণ করেনি।

আমিনুলের বাবা মোশারফ হোসেনও সে সময় হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, হোটেল মালিক আসল ঘটনা চাপা দেওয়ার জন্য ওই কক্ষে ‘যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট পাওয়ার নাটক’ সাজিয়েছে। তেজগাঁও থানা পুলিশও কোনো সহযোগিতা করেনি।

মরিয়মের বাবা মোস্তাক বলেন, ঘটনার সময় তেজগাঁও থানার ওসি ছিলেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি প্রথমে ওই হোটেল থেকে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের কথা বললেও পরে তা অস্বীকার করেন। পরে তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় বদলি হলে তার জায়গায় আসেন শামীম অর রশিদ তালুকদার।

তদন্তের অগ্রগতি জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা শামীম বলেন, আমরা এখনো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাইনি। পোস্টমর্টেম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এলে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে পাঠাব।

ওসির এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বাদী মোস্তাক বলেন, তদন্তে পুলিশের অবহেলার বিষয়টি তার বক্তব্যেই স্পষ্ট। তারা আসামিদের প্রতি পক্ষপাত করছে। ঢাকা মেডিকেলে নয়, পোস্টমর্টেম শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হয়েছে, নতুন ওসি শামীম এটাই জানেনই না!

মরিয়মের বাবা বলেন, পুলিশ বলছে, আমার মেয়ে আর আমিনুল ইসলাম সজল নামের ওই ছেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে হোটেলে উঠেছিল। আমিনুলের পকেটে নাকি যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ছিল। কিন্তু এটা অবিশ্বাস্য। সাংবাদিকরা বিভিন্ন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছে। ওই ওষুধ বেশি পরিমাণে খেলেও কারও মারা যাওয়ার কথা নয়।

পুলিশ আমাদের সহযোগিতা তো করছেই না, বরং আমাদের গায়ে কলঙ্ক চাপিয়ে দিয়ে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে । আসামিপক্ষ খুব শক্তিশালী । তারা ঘটনা চাপা দিতে মরিয়া হয়ে লেগেছে।

অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তদন্ত কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম বলেন, তদন্তে কোনো ত্রুটি তারা রাখছেন না।

ওই তরুণ তরুণীর মৃত্যু রহস্যজনক। মৃতদেহ দুটির ময়নাতদন্ত, হিস্টো টেস্ট, মাইক্রো অ্যানালাইসিস সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে আর কেমিকেল অ্যানালাইসিস ও ভিসেরা পরীক্ষা মহাখালীর রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

সোমবার রাতে আমি সোহরাওয়ার্দীর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে ফোন দিয়েছিলাম । তিনি বলেছেন দুই চারদিন পরেই রিপোর্ট থানায় পাঠানো হবে। ওই প্রতিবেদন ছাড়া আমি বাকি কাজ করতে পারছি না। আমার সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই।

বাদীর আইনজীবী আল আহাদ খান জিকু জানান, গত ২৮ মে মামলাটি গ্রহণ করে তেজগাঁও থানার ওসিকে ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন ঢাকার মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলাম।

কিন্তু মঙ্গলবার নির্ধারিত তারিখে সেই প্রতিবেদন জমা না পড়ায় ২৮ নভেম্বর নতুন তারিখ রেখেছে আদালত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31