২৬শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫:৪১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১১, ২০১৭
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কয়েকশত মানুষ একটি হিন্দু গ্রামে হামলা করার সময় পুলিশের পাল্টা গুলিতে অন্তত এক জন নিহত হয়েছে। পুলিশ বলছে, ঐ হিন্দু গ্রামের ঢাকায় বসবাসকারী টিটু রায় নামের একজন ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননামূলক পোস্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে সেখানে হামলা করা হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত এবং গ্রেফতারের আশ্বাস দেবার পরেও হামলাকারীদের কোনক্রমে আশ্বস্ত করা যায়নি। পরিস্থিতি থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় স্থানীয় দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করে সকাল থেকেই। জুমার নামাজের পর রংপুর সদর ও তারাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে হাজার হাজার মুসল্লি শলেয়াশাহ বাজার এলাকায় জড়ো হতে শুরু করে। হঠাৎ করে বিপুল সংখ্যক মুসল্লির এমন উপস্থিতিতে হতবাক হয়ে পড়ে স্থানীয় ও পার্শ্ববর্তী এলাকার সাধারন জনগন। নিরাপত্তা জোরদার করতে পুলিশের সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু শলেয়াশাহ বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ঠাকুর পাড়া গ্রামে অভিযুক্ত টিটুর বাড়ীর উদ্দেশ্যে মুসল্লিদের বিশাল মিছিলের ঢেউ ক্রমশ এগিয়ে যেতে থাকলে এক পর্যায়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। হিন্দুপাড়ায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে নির্বিচারে চালানো হয় লুটপাট।
তিনদিন আগে গত ৭-ই নভেম্বর, ফরিদপুর শহরের পূর্বখাবাসপুর তালতলা এলাকার বনিক পাড়ার হিন্দু পল্লীতে অনুরূপভাবে দলবেঁধে হামলা চালিয়ে ৩ নারীসহ ও এক অবুঝ শিশুসহ মোট ৫জনকে আহত করেছে। আক্রান্ত ছয়বছরের শিশু দীপ দত্তকে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গত ৯-ই অক্টোবর রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার ভেন্ডাবাড়ির সকল সম্প্রদায়ের হিন্দুদের বাসা-বাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নামে-বেনামে চিঠি দিয়ে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।
গত ১২-ই মার্চ, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে চাদা না পেয়ে হিন্দু পাড়ায় রাতে হামলা চালিয়ে তিনজনকে কুপিয়ে আহত করেছে বলে মামলাসূত্রে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ সকল হামলা-ই ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় উপসম্প্রদায়ের বসবাসের জন্য বাংলাদেশ যে দিনদিন অযোগ্য হয়ে ওঠেছে, বিজাতিমুক্ত নব্য বালাদেশ গড়ার সূদুরপ্রসারী চক্রান্তের অংশ হিসাবে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে বহির্বিশ্বের কাছে এমন একটি জোরালো বার্তা পৌঁছে দেয়ার সিক্রেট মিশন হিসাবেই। আর গেম-কাউন্টারগেমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যেকোন মূল্যে জন্মভূমি থেকে জাতিগতভাবে সবংশে উৎখাত করে একটি বিশেষ মহল কর্ত্তৃক স্থাবর-অস্থাবর সমূদয় সম্পদ কুক্ষিগত করার গোপন পায়তারা। ধর্মের নামে ধর্মরাষ্ট্রে দিনশেষে এটাই হলো ধর্মরাজনীতির নৃশংস নিষ্ঠুর নগ্ন আসল চেহারা।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তুলে বা তুচ্ছ ঘটনার অজুহাতে সংখ্যালঘুদের গ্রামে হামলার এরকম ঘটনা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও এমন ঘটেছে। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে এক বৌদ্ধপল্লীতে একই অভিযোগ তুলে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিলো, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো রামুর শতবর্ষীয় বৌদ্ধ মন্দির। আর গত বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে অনেকটা একই কায়দায় একটি হিন্দু পল্লীতে হামলা চালানো হয় একই ধরণের ধর্মাবমাননার ভূয়া অভিযোগ তুলে। কিংবা তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে বছরের বিভিন্ন সময়ে দলবদ্ধভাবে হামলা করা হয়েছে পাবনার সাঁথিয়ায়, গোবিন্দগঞ্জ, ফেনী কিংবা নড়াইলের গোবিন্দ নগর গ্রামের হিন্দু পল্লীতে।
ধর্মানুভূতির বায়বীয় ধূয়া তুলে কারা আসলে এই সকল সাম্প্রদায়িক হামলা চালায়, দলেদলে নারায়ে তাকবির বলে ইমানী বলীয়ানে হাজার মুসল্লির বেশে ঘটনার ঠিক পূর্বমুহুর্তে কারা জড়ো হয়, কারা পেছন থেকে এই হামলার সর্বাত্মক মদদ জোগায়, কারা মাইকিং করে প্রচার-পাবলিসিটির দায়িত্ব নেয়? নামে-বেনামে কারা সকল সম্প্রদায়ের হিন্দুদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়ে উড়ো চিঠি পাঠায়? সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণু পরিস্থিতি সৃষ্টে স্বার্থান্বেষী বিশেষ এই মহলটি চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাওয়া মোটেও দূরূহ কিছু নয়। সেখানে ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া না পাওয়াও নিশ্চয় বড় বিষয় নয়।
তাদের উদ্দেশ্যটা মোটেও তাৎক্ষণিক উম্মাদনা হিসাবে ছোট ভেবে হালকা হিসাবে খাটো করে নেবার জো নেই, বরং তারা সাংগঠনিকভাবে যথেষ্ঠ সংঘবদ্ধ সুদৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং পরিকল্পনামাফিক রাজনৈতিক চিন্তাধারায় সুদূরপ্রসারী। চিরসহিষ্ণু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লোকায়ত সমাজ-সংস্কৃতির বাঙালির ভ্রাতৃত্ববোধের অবশিষ্ট বন্ধনটুকু ধরে রাখার শেষ চেষ্টা হিসাবে, দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংস জাতিগত বিদ্বেষের এমন বিষ পুরো শরীরে সংক্রমনের আগেই ধর্মীয় মৌলবাদের হিংস্র জীবানুবাহক উৎপাদক পোষককে সমূলে বিনাশ করা আজ একান্ত জরুরী।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com