পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে রাজধানী ঢাকা

প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০১৯

পরিবেশ বিপর্যয়ের কবলে রাজধানী ঢাকা

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার: ঢাকার নাগরিক জীবন ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ে ত্রাহি অবস্থা। যে বায়ু জীবন ধারণের জন্য অপিরিহার্য, সে বায়ুদূষণ মাত্রাতিরিক্ত। নিঃশ্বাসের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বিষ গ্রহণ করছি আমরা! রাজধানী ঢাকার চারপাশের নদ-নদীর পানি এতটাই দূষিত যে, আলকাতরায় পরিণত।বাতাসে সিসার পরিমাণ আশঙ্কাজনক।ক্ষতিকর ধুলাবালি প্রতিনিয়ত জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় আইন মেনে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয় কাজ না হওয়ার কুফল ভোগ করছেন নাগরিকরা।সবার সামনে যখন আইন ও নিয়ম না-মানার সংস্কৃতি অবাধে চলছে, তখন ঢাকার বাইরে সেটা বেশি হবে- এটাই স্বাভাবিক।আর বাস্তবে হচ্ছেও তাই।উদাহরণ মেট্রো রেলের কাজসহ ছোট-বড় নানা প্রকল্প। ধুলাবালি নিবারণের কাজটায় শুভঙ্করের ফাঁকি দৃশ্যমান হলেও তদারককারীরা জেগে জেগে ঘুমাচ্ছে। সৌন্দর্যের আধার রাজধানীর হাতির ঝিল পর্যটক আকর্ষণের স্থানটিও জনজীবনের জন্য নিরাপদ রাখতে পারছেন না দায়িত্বশীলরা। এটির পানির রং আলকাতরাকে হার মানাচ্ছে।হালে এটি পরিণত হয়েছে মশা উৎপাদনের অনন্য কারখানায়।পানির দুর্গন্ধের ফিরিস্তি না দেওয়াই শ্রেয়। এটি যারা দেখভাল করেন, ক্ষুব্ধ অনেকেই তাদের রুচি, মন-মানসিকতা ও যোগ্যতা নিয়ে কদর্য মন্তব্য করেন। ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলো নেয়ামত হিসেবে কাজ করার কথা।দায়িত্বশীল মহলের নিত্য অবহেলায় এটি প্রাচ্যের ভেনিসনগরী না হয়ে আজ অনেকটা আবর্জনার ভাগারে পরিণত।এগুলোর পানিতে নোংরা দুর্গন্ধ আর কালো রং আমাদের দায়িত্বশীলদের মনের কুৎসিত কালিমাকে সামনে নিয়ে আসছে বলে মনে করেন পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞরা। এ নেয়ামতকে কাজে লাগাতে না পারা দুঃখজনক। ঢাকায় এখনো কালো ধুঁয়া ছেড়ে অবাধে যান চলাচল করে।আকাশ নামক পরিবহনের বেশির ভাগ বাসেরই কাহিল অবস্থা।আর তিন ভাগের এক ভাগ কালো ধোঁয়ায় পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছে।ঢাকার চারপাশের ইটের ভাটা বন্ধে সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরও গতকাল দেখা গেছে ঢাকার চারপাশে ইটের ভাটাগুলো কালো ধোঁয়ার রাজত্ব বহাল রেখে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে! যে গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয় উপকারী সেগুলোর অভাব ক্রমেই বাড়ছে। ঢাকার নিরাপদ পানির আধারগুলো ভরাট করে ইট-পাথরের ভবন উঠছে। পরিবেশকে সহনীয় রাখার কাজের পরিবর্তে প্রতিনিয়ত আমরা একে বিষিয়ে তোলার কাজে বেশি ব্যস্ত। এর কুফলে পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে, আর সেটা আমরাই করছি। পরিবেশকে সহনীয় রাখার কাজটা আমরা যেন বেমালুম ভুলে গেছি। এসব কারণে রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।এক গবেষণায় ঢাকার রাস্তার ধুলায় সর্বোচ্চ মাত্রায় সিসা, ক্যাডমিয়াম, দস্তা, ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ ও কপারের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মাটিতে যে মাত্রায় ক্যাডমিয়াম থাকার কথা, ধুলায় তার চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। আর নিকেল ও সিসার মাত্রা দ্বিগুণের বেশি। আশঙ্কার কারণ হচ্ছে,দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটি ও পানিতে অদৃশ্য বিষ হিসেবে পরিচিত মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের ঝুঁকি আগেই ছিল, এবার ঢাকার রাস্তার ধুলার মধ্যেও নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। এসব ভারী ধাতু কণার আকার এতটাই সূক্ষ্ম যে,এগুলো মানুষের চুলের চেয়ে ২৫ থেকে ১০০ গুণের বেশি সরু। ফলে খুব সহজেই এসব সূক্ষ্ম ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকণা ত্বকের সংস্পর্শে আসছে; শ্বাসপ্রশ্বাস, খাদ্য ও পানীয়র মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করছে। মানব শরীরে এসব বস্তুকণা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটাচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্য,রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অবাসযোগ্য রাজধানীরগুলোর শীর্ষে অবস্থান করে নিয়েছে। যে মহানগরীর খাবার পনি থেকে শুরু করে বাতাস পর্যন্ত মারাত্মক দূষণে আক্রান্ত। যে দায়িত্বশীলরা আগাম ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এই মহানগরীকে বাসযোগ্য রাখার কথা,তাদের অবহেলায় এটি আজ নাগরিকদের জীবন ধারণের জন্য হুমকি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। অনেক মানুষ পরিবেশ বিপর্যয় টেরে পেয়ে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্ব যাদের ছিল, তাদের প্রতি একরাশ ঘৃণা প্রকাশ ছাড়া আর কি-ইবা করার আছে। তার পরও নাগরিকদের আশা, নাগরিক জীবনের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলো চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে কার্যকর উদ্যো্গ গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি নিঃশ্বাসে বিষ গ্রহণের এ বিপজ্জনক অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো অতীব জরুরি। রাজধানীর মতো একটি মহানগরীতে পরিবেশ বিপর্যয় চরম লজ্জা ও গ্লানির পাশাপাশি জীবন ধারণের জন্য মারাত্মক হুমকি। মহূর্তমাত্র সময় নষ্ট না করে এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপগ্রহণ সময়ের দাবি। লেখকঃ- ব্যবস্থাপনাঃ দৈনিক আপন আলো, কাউন্সিলর বিএফইউজে-বাংলাদেশ ও সদস্য ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31