এর মানে যতই ঘরে দ্রব্য থাকুক, ব্রাহ্মণ তবুও ভিক্ষা বা চেয়ে বেড়াবে। এই অভিশাপ কলিযুগে আরোও প্রভাব শালী । প্রমাণ তো আপনারাই নিজ চোখে দেখেন । এরপর সীতাদেবী তুলসীকে বললেন- “হে হরির প্রিয়া বৃন্দারানী। বল ত । আমি পিণ্ড দিয়েছি কিনা? সত্যি বল।” তুলসী বলল- “না আপনি পিণ্ড দেননি । কোথায় দিলেন ? আমি ভগবান হরির পাদপদ্মে বিরাজ করি। মিথ্যা আমি বলবো না। ধর্মে সইবে না।” জানকী দেবী রেগে বললেন- “তুমি হরির পাদপদ্মে থাকো, অথচ তোমার মুখে এমন অসত্য বচন । আমি যদি সত্য হই তবে আমার অভিশাপ অক্ষরে অক্ষরে ফলবে। তোমাকে শাপ দেবো।”

তুলসী দেবী যেখানে সেখানে জন্মায়। এমনকি দেওয়ালেও জন্মায়। যারা গ্রামে থাকেন তারা দেখবেন তুলসী মঞ্চে উঠে কুকুর মূত্র ত্যাগ করে। আবার মুরগী তুলসী গাছে বিষ্ঠা ত্যাগ করে। তাই হিন্দু বাড়ীতে মুরগী পালন নিষিদ্ধ। এমনকি এক সময় মুরগীর ডিম্ব ও মুরগী ভক্ষণ হিন্দু গৃহে নিষেধ ছিলো। এখন অবশ্য এই সব নিয়ম হিন্দুরাই জলাঞ্জলি দিয়ে দিয়েছেন ।

এরপর সীতাদেবী ফল্গু নদীকে জিজ্ঞেস করলেন- “বল নদী । তুমি তো দেখেছো। এখানে আমার শ্বশুরের আত্মা এসেছিলেন। আমার কাছে পিণ্ড চেয়েছিলেন। আমি দিয়েছি। রঘুনাথকে সব সত্য বল।” ফল্গু বলল- “জানকী দেবী। আপনি কেন রঘুনাথের সামনে অসত্য বলছেন ? আমাকে কেন মিথ্যা বলতে বলছেন। আমি পবিত্র নদী। এই গয়াধামে আমার জলে সকলে পিণ্ড দেয়। আমি কিভাবে মিথ্যা বলি? এখানে স্বর্গীয় রাজা দশরথের আত্মা আসেন নি। আর আপনিও পিণ্ড দেন নি।” সীতাদেবী ক্রোধে বললেন-

সীতাদেবীর অভিশাপে ফল্গু নদীর উপরে বালির চড়া পড়লো। একটু খুঁড়লে সেখানে জল পাওয়া যায়। আজও পবিত্র গয়া ধামে ফল্গু নদী এইভাবে আছে । রামচন্দ্র কৌতুকে মজা পাচ্ছিল্লেন। তিনি বললেন- “সীতা । আর প্রমাণ আছে কি?” সীতাদেবী তখন বট বৃক্ষকে বললেন- “বাছা বট! তুমি তো সত্যি বল। নাহলে স্বামী ভাববেন আমি অসত্য বলছি ।তুমি বল যে এখানে আমি আমার শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বালিকার পিণ্ড দিয়েছি।” বট ভক্তিভাবে বলল- “মাঃ । প্রভু রামচন্দ্র অন্তর্যামী। তিনি সব জানেন। তবুও আমি বলছি- আমি দেখেছি আপনার শ্বশুর তথা শ্রীরামচন্দ্রের

পিতা স্বর্গীয় রাজা দশরথের আত্মা এখানে এসে আপনাকে পিণ্ড দিতে বলেছিলেন। আপনি বালুকা দ্বারা পিণ্ড দিয়েছেন। আমি এই ঘটনার সাক্ষী।” বট বৃক্ষ এরপর রামচন্দ্রকে প্রনাম জানিয়ে বললেন- “প্রভু! আমি এর সাক্ষী। মাতা সীতা ঠিক বলেছেন। সেই ব্রাহ্মণ, তুলসী আর ফল্গু নদী আপনাকে মিথ্যা বলেছে।” সীতাদেবী বললেন- “বাবা বট! তোমায় আশীর্বাদ করি, তুমি চিরজীবি ও অক্ষয় হও।” এই জন্য দেখবেন বট বৃক্ষের ঝুড়ি নামে, সেখান থেকে অপর গাছ হয়। বট বৃক্ষ তলে দেবতারা থাকেন। সাধনার উপযুক্ত যে বৃক্ষ গুলি আছে তাদের একটি বট বৃক্ষ । রাম সীতার যুগল রূপ দেখে বট বৃক্ষ ধন্য হল। অতঃ রামচন্দ্র , সীতাদেবীকে বললেন- “জানকী! আমি তোমার কথা বিশ্বাস পূর্বেই করেছিলাম। কৌতুকচ্ছলে তোমার সাথে ঠাট্টা করেছি।” অপরদিকে দশরথের আত্মা রামসীতাকে দেখা দিলেন। বললেন- “পুত্র রাম আমি সীতাপ্রদত্ত বালুকার পিণ্ড তৃপ্তির সহিত নিয়ে প্রসন্ন হয়েছি। আমি সীতাকে এরূপ আদেশ করেছিলাম।” রাম সীতা দশরথ রাজাকে প্রনাম জানালেন ।