বইমেলার কড়চা

প্রকাশিত: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৮

বইমেলার কড়চা

কামরুল হাসান 

কারুবাকের সত্ত্বাধিকারী, ‘অামির তিমুরের দেশে’র প্রকাশক গোলাম কিবরিয়াকে নিয়ে চা-পানে যাই রেস্তোরাঁয়। কারুবাক স্টলটি যে সারিতে, তার পূবের সারিতেই বাংলা একাডেমির ব্যানার টাঙানো ভ্রাম্যমান খাবারের দোকানটি। কোণার একটি খালি স্টলে মানুষের ভীড়, ভেতরে উজ্জ্বল অালো দেখে বুঝলাম শ্যুটিং চলছে। ঠিক তাই, শ্যুটিং ঠিকই, তবে সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন কবি নাসির অাহমেদ। তিনি বিটিভিতে অাছেন, ধারণা করি বিটিভির জন্যই রেকর্ডিং হচ্ছে। হাসানুল হক ইনু রাজনীতির মানুষ, তিনি কথা বলতে ভালোবাসেন।

বাংলা একাডেমির একটি কাজ বই প্রকাশ ও বই বিক্রি, অবশ্যই চটপটি বানানো ও বিক্রি নয়। মেলায় অাগত মানুষদের কথা ভেবেই এরা খাবারের স্টলের অনুমোদন দেয়, কিছু টাকার বিনিময়ে এসব রেস্তোরাঁ পরিচালনার ভার পায় কিছু ফটকা খাদ্য ব্যবসায়ী, যাদের অাচরণ বাণিজ্যমেলার খাবারের দোকান যারা খোলে, তাদের মতো। সস্তা চেহারার প্লাস্টিক চেয়ার-টেবিল, সস্তা খাবার পরিবেশনের তৈজস, খাবারের মান ফুটপাতের মতো, দাম কিন্তু চড়া। আমরা গিয়েছিলাম চা পান করতে, ফিরে অাসি চটপটি ও সফট ড্রিংক খেয়ে।

কারুবাক স্টলের সমুখে ক্ষণিক দাঁড়াই। অতঃপর চলে আসি জাতীয় কবিতা উৎসবের প্যান্ডেলে। পথে ‘দেশ প্রকাশনীর’ স্টলে একটু দাঁড়াই, কেননা এখানে রয়েছে আমার প্রথম ভ্রমণগ্রন্থ ‘বিলেতের দিনলিপি।’ পরিচিত হই শাহানা চৌধুরীর সাথে। তার কাব্যটির খোলনলচে বড়ই অভিনব। চল্লিশটি কবিতা মোটা কাগজে অালাদা করে একটি প্যাকেটে ঢোকানো। প্যাকেটটি মানুষের মুখের পার্শ্বচিত্রের মতো কাটা, ভেতরের কবিতাগুলোও। শাহানা চৌধুরীকে বলি সেই উপন্যাসটির কথা যেটি তাসের মতো শাফল করে পড়া যায়। শুনে তার মাথায় আইডিয়া অাসে তাসের সাইজে কবিতা মুদ্রণ, একপাশে তাস, অন্যপাশে কবিতা। তাস খেলতে খেলতে কবিতা পড়া যাবে। তার সঙ্গে থাকা রনি নামের যুবাটি বল্ল, ‘এরকম বই কি কলকাতায় আগে প্রকাশিত হয়নি?’

কবিতা উৎসবে প্রথম সারিতে সোফা পাতা থাকে, এরপরে সব প্লাস্টিকের চেয়ার। হালকা বলেই সেগুলোর সারি ভেঙে যায়, লোকেরা সুবিধামতো সেগুলোকে তুলে নিয়ে অন্যত্র বসে, ফলে পেছনের দিকটা এলোমেলো। সোফায় বসে অাছেন এবারের কবিতা উৎসবের পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। তার পাশেই ছড়াকার

জাতীয় কবিতা উৎসব শুরু হয়েছিল ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচার বিরোধী অান্দোলন দিয়ে। গোড়া থেকেই তার এই গণমুখী, শোষণবিরোধী, সংগ্রামী ও প্রতিবাদী রাজনৈতিক চরিত্রটি বজায় অাছে। সেসময় যারা এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল তারাই এখনো এর নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি চলে গেছে ক্ষমতাসীন দলটির পকেটে, কেননা নিয়ন্তণকারী কবিরা ক্ষমতাসীন দলের কেবল সমর্থক নয়, কর্মী। তাদের দুজনকে মঞ্চে দেখা গেল, একজন কবিতা পড়ার অপেক্ষায়, দ্বিতীয়জন ঘোষককে বলে দিচ্ছিল এরপরে কে কবিতা পড়বে, সে হাঁটছিল মোড়লের মতো, তৃতীয়জনকে সক্রিয় দেখা গেল মঞ্চের নিচে প্যাণ্ডেলে।

প্রতিবছরই কবিতা উৎসবের একটি শ্লোগান থাকে। বত্রিশতম উৎসবটির শ্লোগান ‘দেশহারা মানুষের সংগ্রামে কবিতা’। আরাকানে নির্যাতিত, দেশহারা রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ঐ শ্লোগান। প্রতিবছরই পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা থেকে কিছু কবি যোগ দেন, কিছু ভিন্ন ভাষার কবিও অাসেন। বইমেলায় আমি যে কবিদের সাক্ষাৎকার দিতে দেখেছিলাম, সেসব দেশের পতাকা ব্যানারে মুদ্রিত দেখে বুঝি তারা এই জাতীয় কবিতা উৎসবের আমন্ত্রিত বিদেশী কবি।

জাতীয় যেহেতু, সকলেরই অধিকার অাছে মঞ্চে উঠে কবিতা পড়ার। নামমাত্র নিবন্ধন ফি দিয়ে তারা কবিতা পড়তে মঞ্চে উঠে পড়েন। জাতীয় চরিত্রটি অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থেই টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার সকল নবীন-প্রবীন, নতুন-পুরাতন কবিদল, কবিযশোপ্রার্থী, কবিতাকে সিঁড়ি বানিয়ে উপড়ে ওঠার মতলববাজ- সকলেই উঠে পড়েন বিরাট মঞ্চটিতে। শর্ত একটাই – মুজিব আদর্শের সৈনিক হতে হবে। ফলশ্রুতি নেতা-নেত্রীর নামে অনেক স্তুতিমূলক পদ শুনতে হয়। সেগুলো পদবাচ্য নয়, স্রেফ শ্লোগান কিংবা বিবৃতি। সেসব শুনে শ্রোতারা ভাবেন জগতে সবচেয়ে সোজা কাজ হচ্ছে কবিতা লেখা। কলকাতার বাঙালি কবিরা বাংলাদেশী কবিতার মান দেখে আত্মশ্লাঘা অনুভব করেন। বস্তুত প্রকৃত কবিদের নব্বইভাগ ঐ মঞ্চ ছেড়ে দিয়েছেন বহু পূর্বেই, কবিতার নামে সেখানে যা পঠিত হয়, তার নব্বইভাগই রাজনৈতিক বিবৃতি, শিশুতোষ ছড়া ও কথামালা বা বিবরণভরা পদ্যরূপী গদ্য।

এসব অায়োজনে টাকা লাগে, বিশেষ করে, প্যাণ্ডেল ও মঞ্চ নির্মাণ, বিদেশী কবিদের যাতায়াত, থাকা-খাওয়া বাবদ ভালোই খরচ হয়। এসব যারা নিয়ন্ত্রণ করেন তারাই অর্থের ব্যবস্থা করেন, রাষ্ট্রের কিছুটা অানুকুল্য পান, অার পান রাষ্ট্রের অানুকুল্য পেতে আগ্রহী ধনকুবেরদের। কেন জানি না এই কবিতা উৎসবটি ছড়া উৎসবে পরিণত হয়েছে। এর কারণ হতে পারে অন্যতম নিয়ন্ত্রক অাসলাম সানী একজন ছড়াকার, যিনি সবাইকে একটা করে ছড়া পড়ার পরামর্শ দিয়ে নিজে তিনটি ছড়া পড়লেন। তার একটি ছড়া ‘কাজিনস’ বেশ মজার, অামার পছন্দ হলো।

এবার কবিতায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন কবি মোহাম্মদ সাদিক। তার অন্ত্যমিলের ছন্দোবদ্ধ কবিতাটি বরঞ্চ ভালো লাগলো, তিনি উর্দু শায়েরির ঢঙ্গে পঙক্তির পুনরাবৃত্তিযোগে দুহাত ঊর্ধ্বে তুলে বেশ জোরালো কণ্ঠে নাটকীয় ভঙ্গীতে কবিতাটি পাঠ করলেন। অাশ্চর্য যে, কবি মোহাম্মদ সাদিক যে এবছর বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন- তা মূর্খ কিংবা বেখেয়ালি ঘোষক বল্লেন না। বাঙালির গড় উচ্চতার তুলনায় উঁচু স্ট্যান্ডটি আড়াল করে রাখল অনেক কবিকেই, বিশেষ করে নারীদের, জলের উপর ভেসে থাকা মুখের মতো লাগলো তাদের মুখ। অনেক খ্যাত কবিকেও দেখলাম কবিতা নামের বিবৃতি পড়তে। কবিতা কি বিবৃতি, রাজনৈতিক ভাষ্য, শ্লোগান, নাকি পার্টির মেনিফেস্টো? কবিতা এর কোনটিই নয়। জাতীয় কবিতা উৎসবের মঞ্চে কবি হয়তো কিছু অাছেন, কবিতা নেই।

জাতীয় কবিতা উৎসবের মঞ্চে নিচু বেদীর উপর বসে অাছেন বেশ কিছু কবি ও কবিযশোপ্রার্থী। নিচে অাসন পেতে বসে অাছেন অারেক সারি, তারা সকলেই ছড়াকার। ঘোষক যতই বলুক ছোট কবিতা পড়ুন, বেশিরভাগই শুনছে না। কেবল যারা একটু লাজুক বা মঞ্চভীতু, তারা ছোট কবিতা বা ছড়া পড়ে দ্রুত লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাচ্ছেন। অনেকে মঞ্চ বা মাইক দুটোই না ছাড়ার পক্ষে। বঙ্গবন্ধুর জন্য তাদের ভালোবাসা উপচে পড়ছে ছত্রে ছত্রে। তা পড়ুক, কিন্তু কবিতামঞ্চে ভাষণ কেন?

কক্সবাজার থেকে এসেছেন বয়োজেষ্ঠ্য কবি অমিত চৌধুরী, তিনিও মুজিবাদর্শে বিশ্বাসী। রোহিঙ্গাদের প্রতি মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্মম নিষ্ঠুরতায় তিনি বিপুলভাবে ক্ষুব্ধ, কবিকে সেটাই মানায়। শান্তিতে নোবেল পাওয়া সুচির ভোল পাল্টানো ও সহিংসতা সমর্থন তার তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি করেছে। রাগ, ঘৃণা, প্রতিবাদ – সবই মানবিক অাবেগ, কিন্তু সেসব অাবেগকে কবিতা করে তোলা কঠিন। বাংলাদেশের বেশিরভাগ কবিই তা পারেননি। তার দীর্ঘ কবিতার যে অংশটুকু তিনি পড়লেন প্রবল অাবেগে, তাতে সুচিকে বারংবার অশুচি বল্লেন । ঐ খণ্ডিত অংশটুকুই বিরাট, পুরো কবিতা শুনতে না জানি রাত ভোর হতো। অতিকথন অামাদের কবিতার এক বড় সমস্যা।

সোফায় বসে ঐ সার্কাস দেখছি আর ভাবছি কবিসভাগুলো কীভাবে রাজনৈতিকসভায় পরিণত হলো। কবি নন এমন কিছু লোক এসব করে ভালোই বাগিয়ে নিলো অর্থকড়ি, নাম ও পুরস্কার। অাত্মসম্মান ভুলে কবিদল দলে দলে নাম লেখালো রাজনৈতিক দলের খাতায়। নেতা-নেত্রীরা নামে প্রকাশ করলো ঢাউস সব সঙ্কলন, বিশেষ দিবসে জোর করে লিখলো স্তুতির পদ্য, বানানো কবিতার স্তূপ জমে উঠলো। যাদের কাজ সত্য প্রকাশ করা, তারা চোখে কালো কাপড়ের ফেট্টি বেঁধে নিল।

কাল কবিতা উৎসবের প্রথমদিনে অামি আসতে পারিনি। আমাকে ফোন করেছিলেন কবি ও শিল্পী দেওয়ান মিজান, যিনি শুধু অামার তরুণ কবিবন্ধু নন, আমার অনেকগুলো গ্রন্থের প্রচ্ছদ তার জাদুকরি তুলিতে অাঁকা। আজ কথা দিয়েছিলাম দেখা করবো। তাকে পেলাম অনতিবিলম্বেই। আমি প্রায়শঃই দেখেছি তিনি একদল ভক্ত ছাত্র নিয়ে মেলায় বা উৎসবে যান। তিনি হলেন অাধুনিককালের সেই শিক্ষক যার প্রভাব পুরাকালের গুরুদের মতো, যারা সবদাই ভক্ত বেষ্টিত থাকতে ভালোবাসতেন। আজও তার ব্যত্যয় দেখি না।কবিতা উৎসবের রেজিস্ট্রেশন তাবুর মতো গোলাকার অস্থায়ী স্থাপনাটির নিচে গোল হয়ে বসে অাছেন রফিকুল ইসলাম দাদুভাই, খায়রুল অালম সবুজ প্রমুখ। তারা লবন দিয়ে বাদাম খাচ্ছেন, আমাকেও অাহবান জানালেন সে আড্ডায় যোগ দিতে। এপাশে বসে অাছেন কয়েকজন শিল্পী, যাদের মাঝে সবচেয়ে ঊল্লেখযোগ্য রফিকুল ইসলাম, যাকে সবাই আবিদা সুলতানার স্বামী হিসেবে চিনলেও তিনি নিজেও ভালো গান করেন। সেই অাস্তানার দূরত্ব থেকেই দেখি গাঢ় লাল। শাড়ি পরিহিতা এক ফর্সা প্রখরাবতী কবিতা পড়ছে। তার কবিতা কানে অাসে না, রূপ চোখে অাসে। সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র, কবিতামঞ্চ ব্যতিক্রম নয়। দেওয়ান মিজানকেও দেখি। সে কখন নাম নিবন্ধন করলো অার মঞ্চে গিয়ে উঠলো খেয়াল করিনি।

কেবল একদল ছাত্র নয়, দেওয়ান মিজানের সঙ্গে মেলায় এসেছে তার স্ত্রী নিপা, নিপার কাজিন শারমিন ও শারমিনের মেয়ে তূর্ণা। আমরা সবাই হাকিমের চা দোকানে যাই। সে এক হুলস্থুল দোকান, কে এসে কী অর্ডার করে কোথায় গিয়ে খাচ্ছে ইয়ত্তা নেই, চা পরিবেশিত হচ্ছে অবিরত। চাহিদা অার যোগানের সে এক চলমান জটিল জগৎ। হিসেব রাখা মুশকিল, ক্রেতারা সবাই সৎ বলেই দোকানির নির্ভরতা। কবি রাসেল অাশেকী ফ্রেঞ্চ টোস্ট নিয়ে আসেন, কবি অমিত চৌধুরী দুধহীন চায়ের সাথে সেটা ভিজিয়ে খান। ভীড়ের কারণে মেয়েরা অাসতে চাচ্ছিল না। তখন দেওয়ান মিজান গ্রন্থাগারের সমুখের চত্বরে যাওয়ার প্রস্তাব করে। ল্যান্ডস্কেপিং করে জায়গাটিকে নতুন করা হয়েছে, অাঁধারের মাঝে জ্বলছে বিবিধপ্রকার বাতি। ডাকসু অফিস সংলগ্ন একটি চা-দোকানের উপর ছায়াবিছানো গাছগুলোয় গাঢ় লালরঙের ঝাড়বাতিগুলো অাশ্চর্য প্রভা ছড়াচ্ছিল।

আমরা দুধ চায়ের সন্ধানে এসেছিলাম, কিন্তু এখানেও দুধহীন চা। মিজানের বৌ নিপা ভারি মাধুর্যময়ী, তার চোখে সবুজ দ্যুতি, সম্ভবত সে সবুজ কন্ট্রাক্ট লেন্স পরেছে। মিজানের সাথে আমার দেখা হওয়ার একটি ফেসবুক পোস্ট তার খুব ভালো লেগেছে জানালো। তার কাজিন শারমিন একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার, তার মেয়েটি ফ্যাশন ডিজাইন পড়ে শান্ত মরিয়ম ইউনিভার্সিটিতে, মিজান যেখানে চিত্রকলা শেখায়। পাশের মানুষটি আবার ফ্যাশন ডিজাইনের শিক্ষক, তার নাম মেহেদী সুমন। সব মিলিয়ে সৃজনশীল মানুষদের চমৎকার সান্নিধ্য। আমি বলি আমার খুব প্রিয় সাবজেক্ট হলো আর্কিটেকচার, আমি মুগ্ধ হয়ে দালান দেখি। ফ্যাশন তত প্রিয় নয় আমার, তবে ফ্যাশন করা মেয়েদের ভালো লাগে। শারমিন ও মেহেদী সুমনের বৌ দুজনেই ভারি সুন্দর দেখতে।

মেলা থেকে অানা এক কপি ‘অামির তিমুরের দেশে’ এনেছিলাম। ফার্স্ট কপি নিয়ে আমি উত্তেজিত। আগ্রহ নিয়ে সবাইকে দেখাই। যাকেই দেখতে দেই, সে-ই ভাবে সৌজন্য কপি। দাদুভাই বলেছিলেন, “বইটি কি অামি রাখতে পারি?” অমিত চৌধুরী চেয়েছিলেন বইটি কক্সবাজারে নিয়ে যেতে। মিজানকে যখন দেখতে দিলাম, সেও ভাবলো তাকে বইটি দিয়ে দিয়েছি।

অাজ মেলায় এসেছিলাম নিজের পুরনো গাড়িটি চালিয়ে। রেখেছিলাম আইবিএর ভেতর। এখানে পড়েছি, পড়িয়েছি, সুতরাং অাপন জায়গা। সেদিকে এগুচ্ছিলাম পেছন থেকে ডাক শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখি কবি সৌমিত্র দেব। আরও একজন ডাকলো ‘কামরুল ভাই’ বলে। অাধো-অালো, অাধো-অন্ধকারে আবির্ভূত হলো ইমরান মাহফুজ। সৌমিত্রকে নিয়ে অতঃপর পাড়ি দেই অনেকটা পথ। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল ফার্মগেট অবধি যাবো, পরে আমার মেয়েকে আনতে বসুন্ধরা যাবার ডাক এলে সৌমিত্রকে তার বাড়ির ঘাটাতেই নামিয়ে দিতে পারি। সে থাকে লেক সিটি কনকর্ডে। যেতে যেতে আমরা গল্প করি। মৌলভীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে সৌমিত্র যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল, অামি জানতামই না। সেখানে অল্প ভোট পাওয়া, ক্ষমতাসীনদের কারচুপি, ঘড়েল রাজনীতিকদের কাছে একসময়কার ছাত্র নেতা ও কবির হেরে যাওয়া ইত্যাদি শুনি। মনে পড়ে জাতীয় নির্বাচনে কবি নির্মলেন্দু গুণও বিপুল ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। তার জামানতই বাজেয়াপ্ত হয়েছিল। সৌমিত্রর ফলাফল তার চেয়ে উন্নত কিছু হয়নি। ‘আগামী নির্বাচনে সবগুলো ভোট পাবেন একজন কবি’- বলে শহীদ কাদরী যতই ঘোষণা দিন না কেন, বাংলাদেশের রাজনীতি বড় বিচিত্র জিনিষ!