বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোন স্থান হবেনা, মাহফুজ উল্লাহর স্মরণ সভায় বক্তারা

প্রকাশিত: ১:০৯ পূর্বাহ্ণ, মে ১৪, ২০১৯

বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোন স্থান হবেনা, মাহফুজ উল্লাহর স্মরণ সভায় বক্তারা

মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দিকী তালুকদার:

সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ স্মরণে আয়োজিত নাগরিক শোক সভায় দেশের বিশিষ্টজনরা বলেছেন, যারা মনে করেন স্বৈরতন্ত্র দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, বিভিন্ন রকমের প্রভাব খাটিয়ে চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। এই দেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো স্থান হবে না। স্মরণসভায় মাহফুজ উল্লাহর অবদানের কথা শিকার করে বক্তারা বলেন, ৬০ এর দশকে ছাত্র থাকা অবস্থায় মাহফুজ উল্লাহ মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন। সাংবাদিক হওয়ার পর জীবনের শেষ দিন পর্যন্তও তিনি সে লড়াই চালিয়ে গেছেন। দেশের গণতন্ত্রহীনতা, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তিনি জাতীয়তাবাদী শক্তিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন। জনগণের ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। তিনি মারা গেলেও জনগণের মুক্তি আন্দোলনের আকাক্সক্ষার মধ্যে তিনি বেঁচে থাকবেন। মাহফুজ উল্লাহ গত ২৭ শে এপ্রিল থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।
সোমবার (১৩ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ শোকসভার আয়োজন করা হয়। এতে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। তারা মরহুম মাহফুজ উল্লাহর রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহ যেন তাকে বেহস্ত নসিব করেন সেজন্য দোয়া করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খানের সভাপতিত্বে ও ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক রুবায়েত ফেরদৌসের পরিচালনায় শোকসভায় বক্তব্য রাখেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য নূহ আলম লেলিন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজ উদ্দিন আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তত্তা¡বধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সিপিডির ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদা’ত হোসাইন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, শওকত মাহমুদ, বর্তমান সভাপতি সাইফুল আলম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক নবনীতা চৌধুরী, মরহুম মাহফুজ উল্লাহর ভাই ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, মাহফুজ উল্লাহর বড় মেয়ে মুসাররাত হুমায়রা অঙ্গনা। নাগরিক সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন মাহফুজউল্লাহ বড় ভাই অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ।
বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, শামা ওবায়েদ, জহিরউদ্দিন স্বপন, তাবিথ আউয়াল, শায়রুল কবির খান, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, বিকল্পধারা শমসের মবিন চৌধুরী, সুশাসনের বদিউল আলম মজুমদার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, নবনীতা চৌধুরী, এনাম আবেদীন, লোটন একরামসহ মরহুম সাংবাদিকের পরিবারের সদস্যরাও ছিলেন নাগরিক সভায়।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ’৬০-এর দশক থেকেই মাহফুজ উল্লাহ জাতির মুক্তি আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। সে সময় বর্তমানের গণতন্ত্রহীন ও স্বৈরতান্ত্রিক পরিবেশের চেয়েও কঠিন অবস্থা ছিল। পরবর্তীতে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অনেক জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মুক্তির লড়াই এখনো অব্যাহত রয়েছে। যারা মনে করেন স্বৈরতন্ত্র দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, বিভিন্ন রকমের প্রভাব খাটিয়ে চিরস্থায়ী হওয়া যায় তাহলে তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করেন। তিনি আরো বলেন, মাহফুজ উল্লাহ সাংবাদিক জীবনেও সত্য কথা বলতেন। বর্তমান ঝুঁকিপূর্ণ সময়েও তিনি সাহস নিয়ে উচিত কথা বলতেন। তার এ অবস্থান থেকে আমাদের তরুণদের শিক্ষা নিতে হবে। মৃত্যুর পরও তিনি আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।
কামাল হোসেন আরো বলেন, এখানে আজ বিভিন্ন মতের মানুষ এসেছেন, এটা একটা ঐক্য। এটাই চেয়েছেন মাহমুজ উল্লাহ। সব মহলের লোক আজ এখানে এসেছেন, ওনাকে সম্মান জানাতে এসেছে কারণ তিনি ঝুঁকি নিয়ে কথা বলেছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আবার ষাটের দশকের একত্র হই। বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নেই, যারা মনে করে তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করে।
ড. কামাল বলেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের কোনো জায়গা নাই, হবেও না। এটা আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। যারা মনে করে, চাপ দিয়ে, অস্ত্রের মুখে বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে স্বৈরতন্ত্রকে এদেশে চিরস্থায়ী করবে, তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছে। তিনি বলেন, এখন আমরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও চারদিকে স্বৈরতন্ত্রের আলামত লেগে রয়েছে। তবে এজন্য নিরাশ হওয়ার সুযোগ নেই।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাহফুজ উল্লাহ ছাত্রজীবন থেকে সমাজ পরিবর্তনে চেষ্টা করতেন। সাংবাদিক জীবনেও তিনি দেশের স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে কাজ করেছেন। বর্তমান কঠিন সময়ে যখন দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, রাজনীতি নেই, এ সময়ে তিনি নির্ভিকভাবে সত্য বলতেন। তিনি বিএনপির কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি আমাদের জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করতেন। আমাদের অনুপ্রেরণা দিতেন। তার অকালে চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমাদের এখন তার দেখানো পথে দেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা, সত্যিকার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে হবে।
আসম আবদুর রব বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, আইন নেই, মূল্যবোধ নেই। প্রতিদিন ধর্ষিত হচ্ছে, সব খবর পত্রিকায় আসে না। কোনো বিচার হচ্ছে না, দীর্ঘসূত্রতা। এ কি অরাজগতা। সরকার বলছে পুলিশকে ডিসটার্ব করে, তাদেরকে দিয়ে ভোট ডাকাতি করাইছি, তাদেরকে পুরস্কার দেবো, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পুরস্কার দেবো। পুলিশ এখন তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার পরিবর্তে চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। দেশে জনগণের প্রতি সরকারের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে, বাকরুদ্ধকর পরিবেশে আমরা কেউ বাঁচব না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি প্রতিবাদ করতে চাই, জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে যদি প্রতিবাদ করতে চাই, আসুন জনগণের ঐক্য গড়ে তুলি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র উদ্ধার ঐক্য ছাড়া হবে না, স্বৈরতন্ত্রের বিদায় ঐক্য ছাড়া হবে না, ফ্যাসিবাদের অবসান ঐক্য ছাড়া হবে না। জনগণের ঐক্য কোনো দলের নেতা বা ব্যক্তির নয়। জনগণের আকাংখারই এই ঐক্য।
রাশেদ খান মেনন বলেন, মাহফুজউল্লাহ ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। পরে তিনি সাংবাদিকতায় আসেন। দু’জায়গাতেই তিনি সফল ছিলেন। তার লেখালেখি ও কাজের মাধ্যমে তিনি আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন।
আকবর আলী খান বলেন, তিনি পরিবেশ সাংবাদিকতার পথিকৃত ছিলেন। তিনি লেখালেখির মাধ্যমে জাতিকে সমৃদ্ধ করে গেছেন। এ দেশে তার জন্ম হওয়ায় দেশ উপকৃত হয়েছে। তিনি আজ বেঁচে থাকলে গণতন্ত্রের যাত্রাপথে আমাদের সাহস যোগাতেন। আকবর আলি খান বলেন, মাহফুজ উল্লাহর সাথে পরিচয় আমার অনেকদিনের। তার ভাইও আমার অনুজ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে আমি প্রথম যাকে খুঁজেছি তিনি হলেন মাহবুব উল্লাহ। তারা দুই ভাই ছিল একবৃন্তে দুই ফুলের মত। কিছুদিন আগে তার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। আল্লাহ মাহফুজ উল্লাহর মত একজন গুনী মানুষকে দিয়েছেন এজন্য আমাদের শুকরিয়া করতে হবে। তার মূল অবদান হচ্ছে পরিবেশ সাংবাদিকতা। পারিবেশ সাংবাদিকতায় অনেকদিন অমর হয়ে থাকবেন। সেইসঙ্গে তিনি ছিলেন বিশিষ্ট লেখক। লেখায় অত্যন্ত বিচক্ষণ ছিলেন। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
নূহ আলম লেলিন বলেন, ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি মানুষের মুক্তি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। তার সাথে আমার বিভিন্ন বিষয়ে মতের মিল না থাকলেও তার যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনা তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি রাজনীতি না করলেও রাজনীতিবিদদের জন্য আদর্শ ছিলেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যখন মুখ খুলতে সাহস পান না। যারা টকশোতে যান তাদের মধ্যে যারা সত্য কথা বলেন তাদের নানা হুমকি দেয়া হয়। তখন তিনি সাহস নিয়ে সত্য কথা বলতেন। তিনি আমৃত্যু সত্যের জন্য সংগ্রাম করেছেন।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিনি হেসে হেসে কঠিন সত্য কথা বলতেন। তার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত থাকলে তিনি ঠান্ডা মাথায় যুক্তি দিয়ে তার উত্তর দিতেন। এজন্য তিনি সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠতে পেরেছিলেন।
ড. এমাজ উদ্দিন বলেন, মাহফুজ উল্লাহ একজন যুক্তিবাদী ও পরিচ্ছন্ন চিন্তাচেতনার অধিকারী ছিলেন। তিনি এমন সময় চলে গেছেন তার খুব বেশি প্রয়োজন ছিল। তবে তিনি চলে গেলেও আমাদের মাঝে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবেন। তরুণদের জন্য তার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার রয়েছে।
মাহমুদুর রহমান বলেন, মাহফুজউল্লাহ একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। আপাদ মস্তক রাজনীতির চিন্তাধারায় পরিচালিত হতেন। যে কয়টা টকসোতে আমি তার সঙ্গে ছিলাম, আমার সবচাইতে ভালো লেগেছে এটা দেখে যে, নিজের রাজনৈতিক বিশ্বাসকে ধারণ করবার পরেও অন্যের বিশ্বাসের প্রতি সম্মান দেখাবার অপরিসীম ভালোলাগা। যে মত অন্যের মতগুলোকেও ধারণ করতে পারে, নিজের মতকে সাহসের সাথে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে পারে সেই মতের মানুষের আমাদের খুব দরকার। আমি বলব, এই সময়ে মাহফুজউল্লাহ চলে যাওয়া মানে এদেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামের জন্য বেশ বাধাগ্রস্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশ একজন সম্পদ হারিয়েছে। তিনি সর্বশেষ দুটি বই লেখেন। এর একটি বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে এবং আরেকটি জেনারেল ওসমানিকে নিয়ে। খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় কেমন বিপদে কাটিয়েছেন এবং জেনারেল ওসমানির বিরুদ্ধে ভারত থেকে ফেরত আসতে না চাওয়ার যে প্রপাগান্ডা চালানো হয় সে বিষয়ে এ বই দুটিতে তিনি সত্য ইতিহাস তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস কোন এক ব্যক্তির ইতিহাস নয়, লাখো মানুষের রক্তের ইতিহাস। এ সময় তিনি মানুষের বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার প্রবণতা কমিয়ে আনার আহবান জানান।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, মাহফুজ উল্লাহ একজন উচ্চমানের সাংবাদিক ছিলেন। সমসাময়িক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে তার প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞানের অভাব হতো না। তিনি বলেন, দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা নেই। ক্ষমতাসীনরা সংবাদপত্রকে দায়িত্বশীল হওয়ার উপদেশ দেয় কিন্তু জনস্বার্থ রক্ষায় তারা কতটা দায়িত্বশীল তা বলবে কে? তিনি আরো বলেন, দেশ স্বাধীন হলেই জনগণের মুক্তি আসে না। এজন্য জনগণের প্রকৃত মুক্তি আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের রাজনীতিতে জড়িত না হতেও তিনি পরামর্শ দেন।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে পছন্দ করতেন মাহফুজ উল্লাহ। তিনি কথাও বলতেন স্পষ্টভাবে। দেশের সাংবাদিকতার সংকট নিয়েও চিন্তিত ছিলেন তিনি।
শওকত মাহমুদ বলেন, একজন মুক্তবুদ্ধি চর্চার জলন্ত উদাহরণ ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ। তার সাহসী উচ্চারণে অনেকে মনে কষ্ট পেলেও তার যুক্তিপূর্ণ উপস্থাপনের কাছে তারা পরাজিত হতেন। এজন্য তিনি তরুণ সাংবাদিকদের কাছে একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।
সাইফুল আলম বলেন, তার মত সৎ, নির্ভিক ও নির্লোভ সাংবাদিক খুব কম দেখা যায়। তিনি সব সময় মেরুদ- সোজা করে চলতেন। সব সমাজেই তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের দার্শনিক নেতা। তাকে হারিয়ে সাংবাদিক সমাজ একজন অভিভাবক হারিয়েছে।
নূরুল কবির বলেন, মাহফুজ উল্লাহ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি চাইতেন দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক। এজন্য বিএনপিতে থাকা তার বন্ধুদের এ বিষয়টি বোঝাতে চেষ্টা করতেন। তিনি বলেন, পুলিশ দিয়ে রাতের অন্ধকারে ভোট হওয়ার পর পুলিশ এখন এমপিদের মানতে চাচ্ছে না। পুলিশের এসপি এমপিকে বলছেন আমরা আপনাকে এমপি বানিয়েছি, আপনি আমাকে এসপি বানাননি।
দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, আমার সৌভাগ্য হয়েছিল মাহফুজ উল্লাহ ভাইকে টকশোতে আনার। তিনি যুক্তিতে কথা বলতেন। যদিও যুক্তির জোর এখন কম। মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন সত্য ও ন্যায়ের একজন নির্মোহ বক্তা। তার সঙ্গে আমার মতপার্থক্য ছিলো। তার সঙ্গে ঝগড়া করা যেতো। কিন্তু আজকাল কথাও বলা যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, মাহফুজউল্লাহ ভাই কোনো অনুগত দল ছিলো না। উনার পছন্দের দল ছিলো। উনি এতোই আত্মমর্যাদাশীল ছিলেন, ব্যক্তিত্ববান ছিলেন এবং এতো তুচ্ছ লোভ ছিলেন যে উনি কারো অনুগত ছিলেন না। আমাদের এই সরকারের আমলে গত ১০ বছরে যারা ভিন্ন মতাবলম্বী আছেন, যারা টকসো যান, লেখালেখি করেন তাদের কাউকে কাউকে বিদেশে চলে যেতে হয়েছে চিরদিনের জন্য, কেউ কেউ বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, জেলে গিয়েছেন, মামলা খেয়েছেন, কেউ কেউ নিজের থেকে বীতশ্রদ্ধ হয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। সব কিছুর মধ্যে উনি একা অবিচলভাবে একটা ভারসাম্যমূলক কথা বলে গেছেন। উনাকে আমার মাঝেমধ্যে মনে হতো উনি হয়ত জাস্ট ওয়ান ম্যান বিকল্প পার্লামেন্ট। বাট কথাগুলো বলে গেছেন।
পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেন বলেন, মাহবুব উল্লাহর ছোট ভাই হিসেবে আমাদের কাছে আসতো। ওই সময় থেকে আমাদের ছেড়ে কথা বলতো না। তিনি সাংবাদিকতায় এসেও যুক্তির নিরিখে কথা বলে গেছেন। টকশোতে মাহফুজ উল্লাহ কোনো ভয়ে কথা বলতো না। মাহফুজ উল্লাহর কথায় আমি মুগ্ধ হয়ে থাকতাম, তার কাছ থেকে আমি শিখেছি। মাহফুজ উল্লাহ অনন্য সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অত্যন্ত সজ্জন একজন ব্যক্তি ছিলেন। আমরা একই রাজনীতি করেছি। মাহফুজ উল্লাহর টকশোর কথায় আমি ছিলাম মুগ্ধ। তার বইগুলো এত সুন্দর ছিলো যা প্রশংসনীয়।
সিপিডি ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মাহফুজ উল্লাহ ভাই ছিলেন একজন গবেষক। তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো নিবিড়। তিনি যুক্তির নিরিখে কথা বলতেন । তার সঙ্গে মতপার্থক্য কখনো হলেও অনেক সম্মান দেখাতেন।
অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, আজকে আমাদের জাতীর জীবনে যেরকম অন্ধকার নেমে এসেছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে ওইটা মৃত্যু সমাজ। এক্ষেত্রে মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন ব্যতিক্রম। মাহমুজ উল্লাহ ছিলেন সত্য প্রকাশে আপসহীন। আমরা প্রায় একইসঙ্গে টকশোতে বসতাম, এক এলাকায় থাকতাম। ওর আমার ভিতর কোনো বিভেদ ছিলো না। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31