বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে ঃ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১:৪৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০১৯

বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে হবে ঃ তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসে গতকাল উত্থাপিত প্রস্তাবনায় জামায়াতে ইসলামী এবং এর সাথে যুক্ত সংগঠনগুলোর সাথে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং একইসাথে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতেও বলা হয়েছে। আশাকরি, মার্কিন কংগ্রেসের এই প্রস্তাবের পর বিএনপি অতিশীঘ্র জামায়াতের সাথে তাদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে ঘোষণা দেবে এবং তাদের সাথে জোট করে সরকার গঠন করেছে সেজন্য জাতি এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইবে।’

বুধবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে তথ্য কমিশনে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তথ্য আইনের ব্যবহার’ শীর্ষক কর্মশালা উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী একথা বলেন। প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ, তথ্যসচিব আবদুল মালেক, তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম এনডিসি ও নেপাল চন্দ্র সরকার এসময় উপস্থিত ছিলেন।

তথ্যমন্ত্রী এসময় প্রস্তাবনার মূল অংশ থেকে উদ্ধৃত করে বলেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসের প্রস্তাবনায় বিএনপিকেও জামায়াতের সাথে সবসর্ম্পক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এতোদিন যে আহŸান জানিয়ে আসছিলাম, সেটিই মার্কিন কংগ্রেসের প্রস্তাবনায় প্রতিধ্বনীত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতা হচ্ছে বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীর সাথে জোট গঠন করে তারা নির্বাচন করেছে, সরকার গঠন করেছে, এখনো ২২ দলীয় জোটের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী আছে।’

‘সরকারের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বিষয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যুদ্ধপরাধীদের বিচার করা হয়েছে এবং জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি আদালতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, এবং তাদের সাথে যুক্ত জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে’ উলে­খ করে মন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘কিন্তু দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি যখন জামায়াতের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হয়, তাদের জোটের মধ্যে যখন জামায়াত থাকে, তখন তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়।’

‘আমি আশা করবো, মার্কিন কংগ্রেসের এই প্রস্তাবের পর বিএনপি অতিশীঘ্র জামায়াতের সাথে তাদের সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বলে ঘোষণা দেবে এবং তাদের সাথে জোট করে সরকার গঠন করেছে সেজন্য জাতি এবং বিশ্ব স¤প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইবে’, বলেন ড. হাছান।

বেগম জিয়ার জন্য বিএসএমএমইউ’র বিশ্বমানের চিকিৎসা-তথ্যমন্ত্রী

তথ্য কমিশনে বিএনপি নেত্রীর চিকিৎসা সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন এবং দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। উপমহাদেশের সকল রীতিনীতি ভঙ্গ করে আদালতের বিশেষ বিবেচনায় কারাগারে সর্বোচ্চ বিশেষ সুবিধা তাকে দেয়া হয়েছে। এমনকি গৃহপরিচারিকার সুবিধাও দেয়া হয়েছে যা ব্রিটিশ, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কোনো আমলে হয়নি।’

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেগম জিয়া রাজবন্দী নন, সাজাপ্রাপ্ত আসামী, তারপরও রাজবন্দীদের বেলাতেও যা হয়না, তার বেলায় সেই সুবিধাগুলো দেয়া হচ্ছে। সার্বক্ষণিক ডাক্তার, নার্স, ফিজিওথেরাপিস্ট সবই রয়েছে তার জন্যে।’

‘তারপরও বিএনপি নেতারা ক’দিন পরপরই বেগম জিয়ার অসুস্থতার কথা বলেন, কিন্তু তার এ অসুস্থতা নতুন নয়’ উলে­খ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসুস্থতা নিয়েই তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন, এই অসুস্থতা নিয়েই বেগম খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন, এই অসুস্থতা নিয়েই বেগম খালেদা জিয়া বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেছেন।’

‘এরপরও তার জেল-কোড অনুযায়ী যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা তিনি পান, সেজন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে’ উলে­খ করে ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক অসুস্থ হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এখানকার চিকিৎসা যে বিশ্বমানের ছিল, সেটি ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সিঙ্গাপুর থেকে যারা এসেছিলেন তারাও বলে গেছেন।’

অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মডিউল প্রণয়ন ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক অনলাইন ট্রাকিং সিস্টেম উদ্বোধন

এর আগে প্রধান অতিথি হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, প্রধান প্রতিবেদক এবং সম্পাদকগণের অংশগ্রহণে “অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার” শীর্ষক কর্মশালা ও তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক অনলাইন ট্রাকিং সিস্টেম উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী। অনলাইন ট্রাকিং সিস্টেম চালু হওয়ায় দেশের জনগণ এখন থেকে অনলাইনে তথ্য প্রাপ্তির আবেদন, আপীল এবং তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। প্রধান তথ্য কমিশনার জনাব মরতুজা আহমদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক।

দিনব্যাপী কর্মশালায় তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে সাংবাদিকতা চর্চা, বিশেষত: এই আইন ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকতর ও গভীরতর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহিত করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণ মডিউল চুড়ান্ত করা হয়।

কর্মশালা উদ্বোধনকালে মন্ত্রী বলেন, জনগণের ক্ষমতায়নে ২০০৯ সালে সরকার প্রথম অধিবেশনে তথ্য কমিশন গঠন করতে তথ্য অধিকার আইন পাশ করে। এরই ধারাবাহিকতায় তথ্য কমিশন অনেক শক্তিশালী হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন স্বর্বক্ষেত্রে ডিজিটালাইজেশন করতে অনলাইন ট্রাকিং সিস্টেম একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। এজন্য তিনি তথ্য কমিশনকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধান তথ্য কমিশনার বলেন, তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণ তথ্য অধিকার আইনের লক্ষ্য। তথ্য অধিকার আইন জনগণের ক্ষমতায়নের অন্যতম হাতিয়ার। তিনি বলেন, এই আইনের চর্চা বৃদ্ধির জন্য জনগণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করা, অনুপ্রাণিত করা সাংবাদিকদের অন্যতম দায়িত্ব।

মরতুজা আহমদ বলেন, কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠায়, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে, প্রতিটি জনগণের অর্থের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণে, অসৎ ও গোপন তৎপরতা ফাঁস করে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করা প্রভৃতি ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে সাংবাদিকগণ তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার করতে পারেন। বিশুদ্ধ তথ্য সম্বলিত গভীরতর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরীতে তথ্য অধিকার আইন অত্যন্ত কার্যকর।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম রহমান, খসড়া প্রশিক্ষণ মডিউল ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করেন তথ্য কমিশনার নেপাল চন্দ্র সরকার এবং তথ্য অধিকার আইন বিষয়ক অনলাইন ট্রাকিং সিস্টেম উপস্থাপন করেন তথ্য কমিশনার সুরাইয়া বেগম এনডিসি। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন জিটিভি ও সারাবাংলা.নেট এর প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইসতিয়াক রেজা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল বারিক, তথ্য কমিশনের সচিব মোঃ তৌফিকুল আলম, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, ডিবিসি নিউজ এর সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিণ্টু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন এর প্রধান নিউজ এডিটর আশীষ সৈকত, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশ গুপ্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ সাইফুল আলম চৌধুরী, এমআরডিআই এর নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, বিএনএনআরসি এর সিইও এ.এইচ.এম. বজলুর রহমান প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।

চ্যানেল নাইন এর বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী

চ্যানেল নাইন এ বার্তা বিভাগ বন্ধ হওয়া সংক্রান্ত সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই টেলিভিশনগুলোতে যারা কাজ করে সেই সাংবাদিকদের সুরক্ষা বজায় থাকুক। লক্ষ্য করছি, অনেক টেলিভিশন তাদের আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে বিরাট ফারাক। তাদের আয় যাতে বৃদ্ধি পায়, আমাদের দেশের বিজ্ঞাপনগুলো বিদেশে চলে না যায়, সে নিয়ে কাজ করছি। ধীরে ধীরে এক্ষেত্রে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। হঠাৎ করে অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া সমীচিন নয়। এক্ষেত্রে যথেষ্ট সময় দেয়া প্রয়োজন, সেখানে যারা কাজ করে তাদের সংসার আছে, তাদের রুজির ব্যাপার আছে। কোনো কারণে যদি বন্ধ করতে হয় নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে কয়েক মাসের বেতন দিতে হয়।’

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930