ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যাই পাঁচজন

প্রকাশিত: ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০১৮

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যাই পাঁচজন

ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে একটি পরিবারের সদস্য সংখ্যাই পাঁচজন। সিটি ব্যাংকের কথা বলছি ।

১৯৯১ সালের ব্যাংক কোম্পানি আইনের ১৫ (১০) ধারা অনুযায়ী, একই সময়ে একটি পরিবারের দুজনের বেশি সদস্য কোনো ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন না। এই আইনটিই এখনও বলবৎ আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আছেন শিল্পপতি এম এ হাসেমের পরিবারের দুইয়ের অধিক সদস্য।

পর্ষদে এক পরিবারের চার সদস্য যাতে থাকতে পারেন, সে জন্য সম্প্রতি একটি সংশোধনী জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হলেও এখনও তা পাস হয়নি। ফলে অনেক বছর ধরেই ব্যাংকটিতে পরিবারিক একাধিপত্য কায়েম হয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এক পরিবারের বহু সদস্য পরিচালনা পর্ষদে থাকা ব্যাংকিং খাতের জন্য শুভকর নয়।’

কী কারণে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের অধিক সদস্য রাখার বিষয়ে উদ্যোক্তারা আগ্রহী হন -জানতে চাইলে ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূলত ব্যাংকে নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্যই এ কাজটি করা হয়ে থাকে। এতে করে ঋণদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওই পরিবারের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়। এ ছাড়া অধিক সুবিধা লাভসহ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিক ক্ষমতার আশায় পরিচালনা পর্ষদ নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি চেষ্টা করা হয়।’

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি এম এ হাসেমের দুই ছেলে রুবেল আজিজ ও আজিজ আল কায়সার সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তাদের স্ত্রীরা রয়েছেন এই পর্ষদে। আরেক ছেলে আজিজ আল মাহমুদের স্ত্রীও আছেন পরিচালক হিসেবে।

আজিজ আল কায়সারের স্ত্রী তাবাসসুম কায়সার এখন সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান। রুবেল আজিজের স্ত্রী সৈয়দা শাইরিন আজিজ ব্যাংকটির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আজিজ আল মাহমুদের স্ত্রী সাভেরা এইচ মাহমুদও ব্যাংকটির পরিচালক।

সিটি ব্যাংক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, রুবেল আজিজ ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকের বোর্ডে যোগদান করেন। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদেও দায়িত্ব পালন করেন।

ইংল্যান্ড থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা রুবেল আজিজ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (এবিএ) ভাইস চেয়ারম্যান। এ ছাড়াও তিনি আজিজ পারটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আরো কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত।

ব্যাংকটির আরেক পরিচালক আজিজ আল কায়সার। তিনি রুবেল আজিজের সহোদর। ইংল্যান্ডের ইউএস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক করেন। সিটি ব্যাংকের পরিচালক ছাড়াও তিনি পারটেক্স স্টার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকও। এ ছাড়া তিনি একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

ব্যাংক পরিচালক আজিজ আল কায়সারের স্ত্রী তাবাসসুম কায়সার বর্তমানে সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। ২০১৬ সালে তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে তিনি ২০০২ সালের মার্চে ব্যাংকের বোর্ডে যোগদান করেন।

তাবাসসুম ফেয়ারহোপ হাউজিং এবং পারটেক্স এগ্রোর পরিচালকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল পদে রয়েছেন। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন শিল্পপতি এমএ হাসেমের এই পুত্রবধূ।

ব্যাংকটির পরিচালক রুবেল আজিজের স্ত্রী সৈয়দা শাইরিন আজিজ ২০১২ সালে থেকে আছেন সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে। তিনি ইংল্যান্ডের হরবর্ন কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি নেন। সিটি ব্যাংক ছাড়াও পারটেক্স, সাত্তার ক্লাস কোম্পানির পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন আইনের এই ছাত্রী।

আজিজ আল মাহমুদের স্ত্রী সাভেরা এইচ মাহমুদ ব্যাংকটির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। মাহমুদ নিজে আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সিটি ব্যাংকের পাশাপাশি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে রয়েছে হাসেম পরিবার। শিল্পপতি এমএ হাসেম এই ব্যাংকের পরিচালক। এ ছাড়া জনতা ইন্স্যুরেন্সের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার স্ত্রী সুলতানা হাসেম রয়েছেন পরিচালক হিসেবে। তাদের আরেক ছেলে আজিজ আল মাসুদ এই ইন্সুরেন্স কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। এম এ হাসেমের অন্তত দুজন পুত্রবধূ জনতা ইন্সুরেন্সের পরিচালক।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক আইনের ১৫ (১০) ধারাটি সংশোধনের জন্য সংসদে বিল উত্থাপন করা হয়। এই সংশোধনীতে দুজনের পরিবর্তে একই পরিবারের চারজনের পরিচালক থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে এটি সংসদে এখনো পাস হয়নি। সেটি পাস হলেও সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে হাসেম পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশিই থাকবে। কারণ ১৪ সদস্যের পর্ষদে হাসেম পরিবারের সদস্য পাঁচজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি সিটি ব্যাংকের কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, ব্যাংক আইনে সংশোধনী আনা হচ্ছে। সংশোধনীর পর পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের চারজন থাকলে কোনো সমস্যা থাকবে না।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব (আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ) মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘কোনো ব্যাংকে একই পরিবারের দুই জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। যদি থাকেন, তাহলে তা বিদ্যমান আইনের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

বর্তমান ব্যাংক আইন সংশোধনের বিষয়ে ইউনুসুর বলেন, ‘ব্যাংকের পরিচালক পদে একই পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে বিল এখনো পাস হয়নি। সংসদে এটি পাস হওয়ার পরই কার্যকর হবে।’

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে আইন লঙ্ঘন করে একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। যেহেতু ব্যাংক আইনের সংশোধনীতে একই পরিবারের চারজনের দায়িত্ব পালনের সুযোগ আছে, সেহেতু আইনটি সংশোধনের আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। সুত্রঃ প্রিয় ডটকম

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31