ব্যাংকারদের সতর্ক করলেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০১৯

ব্যাংকারদের সতর্ক করলেন অর্থমন্ত্রী

ব্যাংকারদের সতর্ক করলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ।বুধবার ঢাকার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
খেলাপি ঋণ যাতে কোনোভাবেই আর বাড়তে না পারে সে বিষয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে পর্ষদে পরিবর্তন আনার ব্যবস্থা করবেন ।
অসাধু ব্যবসায়ীদের অপরাধে সহযোগী ব্যাংক কর্মকর্তাদের ছাড় দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেছেন।

পরিচালক নিয়োগে অনেক সুপারিশ সামলাতে হয় জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, অভিজ্ঞতা ছাড়া কোনো পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা।

খেলাপি হওয়া ঋণের পরিমাণ কম দেখাতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণ অবলোপন (রাইট অফ) নীতিমালা শিথিল করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

খেলাপী ঋণের পরিমাণ ২০১৮ সালে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে স্বীকার করে জনতা ব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে উপস্থিত গভর্নর ফজলে কবির বলেন, যদিও এটি জনতা ব্যাংকের একার বিষয় না, পুরো ব্যাংকিং খাতে এটা বড় একটা চ্যালেঞ্জ। এ টাকা যেন আর বৃদ্ধি না হয়।

ব্যাংকারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শীর্ষ খেলাপীদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে, খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পলিসি গ্রহণ করতে হবে। খেলাপী ঋণের মামলা না করে আদায়ের চেষ্টা করবেন। মামলা করবেন অবশ্যই, তবে কুইক ডিসপোজেবলের জন্য নয়। ঋণ দেওয়ার সময়ই সতর্ক হয়ে দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে দেশের অর্থনীতির ‘সবচেয়ে দুর্বল জায়গা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, “একজন অসাধু অফিসার আপনাদের সাফল্য ম্লান করে দেবে। ১০টি ভাল কাজ করেন, একটি খারাপ কাজ বলবে- ‘সব নিয়ে চলে গেছে’। যিনি অন্যায় করেন আর অন্যায়কে সহায়তা করেন- অপরাধ তো একই রকম।”

মন্ত্রী জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতিতে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে চলবে বলে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছেন। এ কারণে ব্যাংক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি না করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক শপথ করাতে চান তিনি।

“হাত তুলে শপথ করতে হবে যে আপনারা দুর্নীতিকে ‘নো’ বলবেন, নিজে দুর্নীতি করবেন না, অন্য কাউকে দুর্নীতি করতে সহয়তা করবেন না। অসৎ কাজ থেকে সব সময় দূরে থাকতে হবে।”

ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, “যারা অসাধু ব্যবসায়ী, তাদের সাথে কিন্তু আমরাও থাকি। আমরা যারা আছি তাদেরকেও কিন্তু কোনভাবে ছাড় দেওয়া হবে না। যারা তাদের পশ্রয় দিয়েছে তাদের বের করা খুব কঠিন না।”

তবে অপরাধ স্বীকার করলে ক্ষমা করে দেওয়া হবে মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সবাইকে সঠিক করে ঠিক পথে নিয়ে আসব। কেউ অপরাধ করে আসলে… ভিন্ন পথে যদি টাকা নিয়ে থাকে- তা যদি ফেরত দিতে পারে, গোপনে আমাকে বললেও মাফ করে দেব।”

লিজ ফাইন্যান্সিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ নিরীক্ষার আওতায় আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই একটি বাদ দিলে কোনো প্রতিষ্ঠানেই ফোন করে কাউকে পাওয়া যায় না।

আর্থিক খাতে অপচয় কমাতে প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নিয়ে আসার কথাও বলেন মুস্তফা কামাল।

“ব্লকচেইন টেকনোলজি নিয়ে আসতে হবে। একটি কমপ্রিহেনসিভ টেকনোলজিতে আনতে হবে, যাতে সবাই একই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে। বিভিন্ন ধরনের টেকনোলজি ব্যবহারে অপচয় বাড়ে।”

যারা ব্যবসার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে ‘খারাপ অবস্থানে’ চলে গেছেন, তাদের সহায়তা করারও প্রতিশ্রুতি দেন অর্থমন্ত্রী।

“একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শুরু করা অনেক কঠিন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার জন্য আসি নাই । যারা ভাল ব্যবসায়ী তাদের অনেক সহায়তা করব। আমরা যা করব, সততার মধ্যে করব। এমনভাবে পলিসি করব যাতে সবাই উপকৃত হয়।“

জনতা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থ বিভাগের সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বক্তব্য দেন।

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31