ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা কে কোন ক্যাটেগরিতে পড়েন?

প্রকাশিত: ৭:৪১ অপরাহ্ণ, জুলাই ১২, ২০১৮

ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা কে কোন ক্যাটেগরিতে পড়েন?

 

ম ইনামুল হক

১। পূর্ব পাকিস্তানের চীনপন্থী কম্যুনিস্টরা ১৯৬৭ সালে ভারতের নকশালবাড়ী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ হয়ে ‘স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ গড়ে তোলার সশস্ত্র সংগ্রামে লিপ্ত হয়। ১৯৭১ এর গোড়ায় এরা যুব সমাজের মধ্যে বিশেষ প্রভাবশালী ছিল। বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে এদের এক অংশ ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে শুরু হওয়া প্রতিরোধ আন্দোলনকে জনযুদ্ধ আখ্যা দেন। কিন্তু এদের মূল অংশ রণনীতি নির্ধারণ করতে না পেরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে ‘দুই কুকুরের লড়াই’ বলেন। এর ফলে এরা দেশের ভেতরে পাকিস্তানী সেনা ও দেশের বাইরে ভারতের শত্রু হয়ে যায়। এদের অনেকে ভারতে গেলে সেখানে তাদেরকে চিহ্নিত করে মেরে ফেলা হয়। স্বাধীনতার পর এরা রক্ষিবাহিনীর প্রধান লক্ষ্য হয় ও ক্রমশঃ নিশ্চিহ্ন হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এরা অনেকে দল ছেড়ে দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেয়। বাকি অনেকে এরশাদের সময় জাতীয় পার্টিতে যোগ দেয়।

২। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া আওয়ামী লীগের সদস্যরা ১৯৭১ সালে পাক সেনা বাহিনীর আক্রমণের মুখে পড়লে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার পাকিস্তানী সেনা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। অন্যরা পাক সেনা বাহিনীর আক্রমণের মুখে ভারতে পালিয়ে যান। তারা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন ও শরণার্থী শিবির পরিচালনা করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে এসে এদের অনেকেই সরকার গঠন ও সরকার পরিচালনা করে্ন এবং অনেকে সার্টিফিকেটপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হন।

৩। ১৯৭১ সালে পাক সেনা বাহিনীর আক্রমণের মুখে ভারতে যারা পালিয়ে যায়, তাদের একটা অংশ আগে থেকেই ভারতীয় সাহায্যে স্বাধীনতার পরিকল্পনা করত। এই অংশটির নেতৃত্বেই ভারতে যাওয়া যুবকদের ভারতীয় বাহিনীর দ্বারা প্রশিক্ষিত করে মুজিব বাহিনী সৃষ্টি করা হয়। এই বাহিনীর অনেককে বিশেষ লক্ষ্য সাধনে দেশে পাঠানো হোত। এদের অনেককেই বাংলাদেশ রক্ষী বাহিনীতে নেয়া হয়। ১৯৭৫ সালে রক্ষী বাহিনী বিলুপ্ত হলে এরা মূল সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।

৪। ১৯৭১ সালে পাক সেনা বাহিনীর আক্রমণের মুখে স্থানীয় যুব শ্রেণীর নেতৃত্বে কিছু স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। স্বাধীন বাংলাদেশে এরা অনেকেই আনসার বাহিনীতে যোগ দেয়। অন্যরা জাসদে যোগ দিলে রক্ষী বাহিনী তাদের নিশ্চিহ্ন করে। এদের অনেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রয়োজনে বড় শহরে গিয়ে পেশাজীবী হয় বা বিদেশে পাড়ি দেয়।

৫। ১৯৭১ সালে পাক সেনা বাহিনীর আক্রমণের সময় স্থানীয় কিছু যুবক পাক বাহিনীর সহযোগী রাজাকার আল বদর হয়ে কাজ করে। স্বাধীন বাংলাদেশে এরা অনেকেই জেল খাটে। এদের অনেকেই সার্টিফিকেট কিনে মুক্তিযোদ্ধা হয়।

৬। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কিছু আমলা ও সরকারী কর্মচারী ভারতে গিয়ে ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারে কাজ করেন। এদের অনেকেই স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে সার্টিফিকেটধারী মুক্তিযোদ্ধা হন।

৭। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীর কিছু সদস্য পালিয়ে ভারতে গিয়ে ভারতের অর্থায়নে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোরস গঠন করেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এদেরকে দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালে এদের সাথে পাকিস্তানে আঁটকে পড়া বাঙালি সেনারা মুক্তি পেয়ে ফিরে এসে যোগ দেয়।

৮। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ নারী পুরুষ নিহত হন। হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে অসংখ্য পরিবার ধ্বংস হয়। গ্রাম ও শহরের দালান বাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হয়। এই সব ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা বিষয়ে জানা যায় না।

৯। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে ও গ্রামে অনেক যুদ্ধ হয়েছে এবং অনেক পাক সেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছে। এসব কাহিনী লোকমুখে আছে ও নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলকে খোদাই করা আছে।

১০। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় লক্ষ লক্ষ নারী রাজাকার ও পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়। এই সব নির্যাতিতদেরকে বীরাঙ্গনা বলা হোত। এদের তালিকা ও তাদের সন্তানদের বিষয়ে এখন জানা যায় না।

১১। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা শিশু ও কিশোর বয়সী ছিলেন তাদের অনেকে স্বাধীন বাংলাদেশে বড় হয়ে উপরের ২ ও ৩ ক্যাটেগরির মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট কিনে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।

১২। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক মস্কোপন্থী কম্যুনিস্ট ভারতে যান। এরা অনেকেই সম্প্রতি আদালতের রায়ে সার্টিফিকেট পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31