সরকারকে শুন্য মাঠে খেলতে দেয়া হবেনা: রিজভী

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০১৮

সরকারকে শুন্য মাঠে খেলতে দেয়া হবেনা: রিজভী
মোহাম্মদ অলিদ সিদ্দীকী তালুকদার:

বিএনপি অভিযোগ করেছে, দশম জাতীয় সংসদের মতো সরকার এবারও একতরফা নির্বাচনের দিকেই যাচ্ছে।  দলটি  বলছে, এবার তারা সরকারকে একতরফা নির্বাচন করতে দেবে না। শূন্য মাঠে আর খেলতে দেওয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট)  নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সরকার ভোটারদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে এমনটা এখন আর কেউই ভাবেন না।

রিজভী অভিযোগ করেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বিপর্যস্ত করতে অবৈধ সরকার যে দমননীতির উত্থান ঘটিয়েছে, তা নজিরবিহীন ও হিংসাশ্রয়ী। প্রধানমন্ত্রী যেন ব্যক্তিগত জিঘাংসা চরিতার্থ করতেই তাদের ওপর রাষ্ট্রযন্ত্রকে যথেচ্ছ ব্যবহার করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে গতকাল ঈদের দিনে দলের সিনিয়র নেতাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। অনেক দেরিতে, প্রায় আড়াই ঘণ্টা কারাফটকের বাইরে আত্মীয়-স্বজনদেরঅপেক্ষা করিয়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে দেখা করতে দিলেও বাসা থেকে আনা রান্না করা খাবার নিতে দেওয়া হয়নি। সকাল থেকে না খেয়ে খালেদা জিয়া অপেক্ষা করছিলেন স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে আহার করবেন। অনেক দিন পর প্রিয় নাতনিকে সঙ্গে নিয়ে খাবেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ সরকারকে খুশি করতেই খাবার নিতে দেয়নি। অভুক্ত খালেদা জিয়া নাতনি ও আত্মীয়দের সঙ্গে খাবার খেতে পারলেন না। স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়ার যে আশায় তিনি সারা দিন অভুক্ত থাকলেন, সে আশা তাঁর পূরণ হলো না। বাবাহারা নাতনিও এক বিশাল শূন্যতা নিয়ে দাদির ওপর সরকারি নির্দয়তার বীভৎস্য রূপ দেখে বুকফাটা কান্না নিয়ে ফিরে আসে। স্বজনেরাও কাঁদতে কাঁদতে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। বিএনপি এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে  প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের মন্ত্রীরা প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে নানা বিষয়ে উদ্ভট কথা বলে যাচ্ছেন।

ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, নির্বিঘ্নে নিজের বাড়িতে ঈদ করার জন্য নাকি সরকার সবকিছু করেছে। এই ডাহা মিথ্যাচারের নীরব প্রতিবাদে সারা দেশ উত্তাল। ঈদের দিনেই ১০ জন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্য। জীবন বাঁচাতে অনেক মানুষ এবার সড়কপথের বদলে ট্রেন ও লঞ্চের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। ঘরমুখী মানুষ পরিজনদের সঙ্গে ঈদ উৎসবে অংশগ্রহণ করার জন্য বাদুড়ঝোলা হয়ে ট্রেনে চড়েছে। ট্রেনের ছাদ এবং ভেতর লোকে লোকারণ্য। সড়ক-মহাসড়ক যেন বধ্যভূমি। গ্রামীণ রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে গেছে। দুই যানবাহনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মাল পরিবহন, অস্বাভাবিক দ্রুতগতির জন্য চালকের নিয়ন্ত্রণ হারানো, ওভারটেক ইত্যাদি আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের জন্য ঈদের খুশির দিনেও বাড়িতে বাড়িতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ–ই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করার নমুনা।

রিজভী বলেন, কিছুদিন আগে কোমলমতি শিশু-কিশোরেরা এই যন্ত্রদানবের বেআইনি চলাচলের কারণে সহপাঠীদের মৃত্যুতে প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। তারা গাড়ির লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখিয়ে দিয়েছে সরকারের কর্তব্য কী হওয়া উচিত। কিন্তু সরকার সে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের ওপর নিজেদের ক্যাডারদের লেলিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত করল, গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে বর্বরোচিত নির্যাতন করল। তাতে সড়ক-মহাসড়কে বেপরোয়া গাড়িচালকেরা ও ফিটনেসহীন গাড়ির মালিকেরা আরও বেশি উৎসাহিত হয়ে উঠল। তারা ভাবল, সরকার তাদের পক্ষে। সুতরাং পবিত্র ঈদের দিনেও সড়ক-মহাসড়কে মৃত্যুর মিছিল থামল না। কোরবানি ঈদে মানুষের শান্তি, আনন্দ, উৎসব কোরবানি হয়ে গেল।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো আবারও একতরফা নির্বাচন জনগণ প্রতিহত করবেই। শূন্য মাঠে আর খেলতে দেওয়া হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় ব্যবস্থা চলতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী নেতাদের চিরকাল ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন মানেই ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের আসতে না দেওয়া। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না এ জন্যই যে তিনি বিরোধী দল সহ্য করেন না। তিনি গণতন্ত্রকে ঘৃণা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা তিনি সহ্য করেন না। সমালোচনাকারীদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ দিয়ে রিমান্ডে নিয়ে উৎপীড়ন করান। সমালোচনাকারী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম ও ক্রয় ফায়ার করতেও দ্বিধা করেন না। সুতরাং শেখ হাসিনার অধীনে কখনোই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31