সহিংস শাসনে অহিংস ভাবনা

প্রকাশিত: ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৩, ২০২০

সহিংস শাসনে  অহিংস ভাবনা

সিমকী ইমাম খান

,

২০০৯ সালের শুরু থেকেই ক্ষমতায় বসে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট সরকার বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা চালায় । কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ও বিরোধীদলগুলো সরকারের প্রতি সহযোগিতার মনোভাব বজায় রেখে চলে । যে কোন ধরণের আন্দোলন সংগ্রাম থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে । কারণ, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে । গণতন্তের ভিত দুর্বল হলেই ওয়ান ইলেভেনের মতো তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় আসে । দেশকে রাজনীতি শুন্য করার অপচেষ্টা চালায় ।সেই অভিজ্ঞতা থেকে বেগম খালেদা “ডোন্ট ডিস্টার্ব হাসিনা” নীতি নিয়ে অগ্রসর হন । বিডিআর বিদ্রোহ, বর্ধিত দ্রব্যমূল্য কোন কিছু নিয়েই আন্দোলনে যায়নি বিএনপি । ২০১৩ পর্যন্ত অহিংস ধারার রাজনীতিই চালিয়ে যান তিনি । বিনিময়ে তিনি হন সহিংস রাজনীতির শিকার ।

১৩ নভেম্বর ২০১০ সালে বেগম জিয়াকে তার ৩৮ বছরের আবাসস্থল ছাড়তে হয় । তিনি অভিযোগ করেন তাকে বলপ্রয়োগে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয় তিনি স্বেচ্ছায় বাসা ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন।
টানা ৩৮ বছর থাকার পর সেনানিবাসের সেই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হলেন খালেদা জিয়া ।
কর্মীদের উত্তেজনা, বিক্ষোভ আর আইনি দেন-দরবারের পরও কাজ হয় নি । সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণে বাক্স-পেটরা নিয়ে শনিবার বিকালে অশ্র”সিক্ত নয়নে ওই বাড়ি ছাড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।

সেনানিবাসের ওই বাড়িতে খালেদা উঠেছিলেন স্বামী জিয়াউর রহমানের সূত্রে। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমান শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ১৯৭৫ সালে সেনাপ্রধান হন জিয়া। তবে থাকেন ওই বাড়িতেই। এরপর প্রথমে সামরিক আইন প্রশাসক এবং পরে রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। কিন্তু মইনুল সড়কে ১৬৫ কাঠা জমির ওপর নির্মিত ওই বাড়ি ছাড়েননি তিনি।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থানে নিহত হলে ওই বছরের ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেন। ইজারা দলিলের মাধ্যমে তাকে সরকারি ওই সম্পত্তি দেওয়া হয়।

দুই সন্তান তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকছিলেন গৃহবধূ খালেদা। কিন্তু এক সময় স্বামী জিয়ার দলের নেতা-কর্মীদের চাপে পা রাখেন রাজনীতিতে, হন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির চেয়ারপারসন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোটা সময় রাজপথে ছিলেন খালেদা, সেনানিবাসের ওই বাড়িতে থেকেই। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সেনানিবাসে থেকে এ আন্দোলনের জন্য কটাক্ষ করতেও ছাড়তেন না রাজপথের সঙ্গী আওয়ামী লীগের নেতারা।

১৯৯০ এর গণঅভ্যূত্থানে এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়। প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। তবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য বেসামরিক এলাকায় নির্দিষ্ট বাসভবনে না থেকে সামরিক এলাকায় থাকাকেই বেছে নেন খালেদা।

১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় দ্বিতীয় বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন বেগম খালেদা। তখনো তিনি এই বাড়িতেই ছিলেন । অল্প কয়দিন পরেই বিরোধী দলের আন্দোলন ও আন্তর্জাতিক চাপে তিনি পদত্যাগ করেন । তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে হেরে গিয়ে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন খালেদা। কিন্তু তখনো বিরোধীদলীয় নেতার জন্য বরাদ্দ বাড়িতে ওঠেননি তিনি।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময়ও ওই বাড়িই ঠিকানা ছিলো খালেদার। এরই মধ্যে বাড়ির কিছু স¤প্রসারণও হয়।

এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন খালেদা। মুক্তি পাওয়ার পর ওঠেন আবার ওই বাড়িতেই।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সালে ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে খালেদার নামে মইনুল সড়কের ওই বাড়ির ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এরপর সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তরের মাধ্যমে ওই বাড়ি খালি করার নোটিশ যায় খালেদার কাছে। ওই বছরের ২০ এপ্রিল প্রথম এবং ৭ ও ২৪ মে পুনরায় দুটি নোটিশ দেওয়া হয়।

নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৩ মে খালেদা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ১৩ অক্টোবর সে আবেদন খারিজ করে হাইকোর্ট বলে, বেআইনিভাবে খালেদাকে ওই বাড়ি ইজারা দেওয়া হয়েছিলো। আদালত বাড়ি খালি করতে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেয় বিরোধীদলীয় নেতাকে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা তার আগেই আপিলের আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। আপিল বিভাগে এর শুনানি চলছে। হাইকোর্টের রায় স্থগিত না করেই শুনানি ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

আপিল আবেদনের মধ্যে বাড়ি খালি করা নিয়ে কয়েকদিন ধরেই সরকার ও খালেদার আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসছিলো।

শনিবার সকালে সামরিক বাহিনী বাড়ি খালি করার সময় আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, খালেদা স্বেচ্ছায়ই বাড়ি ছাড়ছেন। তবে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি বলে, বাড়ি থেকে ‘উৎখাতে’ বাধ্য করতে খালেদাকে গৃহবন্দি করা হয়েছে।

খালেদার কৌঁসুলিরাও জানান, খালেদা স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়তে রাজি হননি। তবে বিকালে বাড়ি খালি করার পরও আইএসপিআর পরিচালক শাহীনুল ইসলাম বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে স্বেচ্ছায়ই বাড়ি ছেড়েছেন খালেদা। তবে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেছেন, খালেদা জিয়াকে জোর করে বাড়িছাড়া করা হয়েছে।

মইনুল সড়কের বাড়ি থেকে নিজের গাড়িতে করেই খালেদা যান গুলশানে তার কার্যালয়ে। অন্য একটি গাড়িতে করে নেওয়া হয় তার কিছু ব্যবহার্য জিনিস। বাকি জিনিসপত্র পরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সামরিক বাহিনী।

রাজনৈতিক নেতা খালেদার সেনানিবাসে অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বরাবরই সমালোচনা করে আসছেন। বিএনপির অনেক নেতাও চান না, খালেদা জিয়া সেনানিবাসে থাকুক।

সেনানিবাসে অবস্থানের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়ই খালেদার দেখা পাননি বিএনপি নেতারা। জরুরি অবস্থার সময়ও একই ঘটনা ঘটে। বিএনপির অনেক নেতাকে আটকে দেওয়া হয় জাহাঙ্গীর ফটক কিংবা কাকলী ফটকে। অন্যদিকে জরুরি অবস্থার সময় খালেদার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনের সামনে থাকতো নেতা-কর্মীদের ভিড়।

সেনানিবাসে ঢুকতে বাধা পাওয়ার কথা তুলে ধরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও স¤প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি চান তার দলের প্রধান এমন স্থানে থাকুক, যেখানে দলীয় কর্মীরা সহজেই যেতে পারে।

খালেদার এই বাড়ির ইজারা বাতিলের পেছনে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘প্রতিহিংসা’কে কারণ মনে করেছে বিএনপি। যাই হোক , এরপরেই খালেদা গিয়ে ওঠেন গুলসানের ভাড়া বাড়িতে । তাঁর শান্তিপূর্ণ আচরণের মূল্য এভাবেই পরিশোধ করা হয় তাঁকে ভিটেহারা করে ।

এ সময় দূর থেকে আমি দেশনেত্রীকে দেখতাম। তাঁর কষ্ট বুঝতাম দরদ দিয়ে । ২০১২ সালে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে আমি নির্বাচিত হই । নবনির্বাচিত নেত্রীবৃন্দকে নিয়ে সেদিনই প্রথম বেগম খালেদা জিয়ার সংগে দেখা করি । ওনার পায়ে হাত ছুঁয়ে সালাম করি। তিনি আমার মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করেন । ম্যাডাম আমাকে জিগাসা করেন আমার নাম কি আমার বাড়ী কোথায় আমাকে শুভেচ্ছা জানান বিপুল ভোটে পাশ করার জন্য । ম্যাডামের সাথে পরিচয় হওয়ার বেশ খানিকটা আগেই আমাদের দুজনের চোখে চোখ পড়ে যায় আমি যখন ম্যাডামের দিকে তাকাই, দেখি তার আগ থেকেই ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে আছেন আমরা দুজনেই যেন চোখ নামাতে পারছিলাম না । আমি পরেছিলাম সাদা জর্জেটের মধ্যে সাদা চুমকির খুবই শোভার কাজ করা একটা শাড়ী যেটা আমি আর দ্বিতীয় কাউকে কোনদিন পরতে দেখেনি আর ম্যাডাম পরেছিলেন গোলাপি কালারের জর্জেটের শাড়ী ।আমাদের দুজনের শাড়ীর মধ্যে একটা প্রেম লুকিয়ে ছিল , আমি সত্যিই ম্যাডামের প্রেমে পরে যাই সেদিন । আর তারপর থেকে আমি তার মেয়ে হয়ে যাই ।
( চলবে )

এডভোকেট সিমকী ইমাম খান ঃ সদস্য, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31