সীমান্তে হঠাৎ করে মিয়ানমারের সামরিক উপস্থিতি

প্রকাশিত: ১২:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০১৮

সীমান্তে হঠাৎ করে মিয়ানমারের সামরিক উপস্থিতি

সীমান্তে হঠাৎ করে মিয়ানমারের সামরিক উপস্থিতি ।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি-ধমকির পর ফাঁকা গুলিবর্ষণে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সেখানে ।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এই তৎপরতাকে শূন্যরেখায় ক্যাম্প করে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। আতঙ্কিত ওই রোহিঙ্গারা বলছেন, তারা এখন মিয়ানমারেও ফিরতে পারছেন না, আবার বাংলাদেশেও ঢুকতে  পারছে না ।

এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিজিবি। মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের বার্তা পাঠিয়ে তারা। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদও জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর কারণ হিসেবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকানোর কথা বলেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।তাদের এই বক্তব্য বাস্তব অবস্থার বিপরীত বলে মন্তব্য করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তবে সীমান্তে বিজিবির সতর্ক অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলছেন, মিয়ানমারের শক্তি বৃদ্ধির বিষয়টিকে অত ‘গুরুত্ব দিয়ে দেখার কিছু নেই’।

রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা অন্তত ১৭ হাজার রোহিঙ্গা বান্দরবান সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে আশ্রয় নিয়ে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখায়। তাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মিয়ানমার আশ্বস্তও করেছিল।

বান্দরবানের স্থানীয় প্রশাসন ও বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই শূন্যরেখায় অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের সরে যেতে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছিল।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে হঠাৎ তুমব্রু সীমান্তে শক্তি বৃদ্ধি করে মিয়ানমার। বেশ কিছু সামরিক পিকআপ, ট্রাক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিপুল সংখ্যক বিজিপি সদস্য অবস্থান নেয় শূন্য রেখা থেকে দেড়শ গজ ভেতরে।

কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়ে টানা কয়েক ঘণ্টা মাইকিং করে তারা রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বলে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরওয়ার কামাল জানান।

তিনি বলেন, সীমান্তের কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়িয়েছে বিজিবি ও প্রশাসন।

ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের পুলিশ আর সেনাবাহিনী রাতের বেলায় ক্যাম্পের ঝুপড়ি ঘরে খালি মদের বোতল আর ঢিল ছুড়ে মারছে। আজ সকালে তারা গাড়ি করে অনেক লোক এনেছে। আমরা বাঁচতে চাই, মিয়ানমারে ফিরে গেলে আমাদের হত্যা করা হবে।

বিজিবির বান্দরবান সেক্টরের কমান্ডার কর্নেল আব্দুল খালেক বলেন, এর আগেও মিয়ানমার তাদের সীমান্তে লোকবল বাড়িয়ে আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এবার তুমব্রু সীমান্তে এত বেশি শক্তি বৃদ্ধির কারণ স্পষ্ট নয়। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিজিবির পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, সকালে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ক্যাম্পের পাশে মিয়ানমারের ভেতরে বিজিপি অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করে। সকালে বিজিপির কয়েকটি গাড়িতে বেশ কিছু সৈন্য এখানে আসে। দুই শতাধিক সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। আগে থেকেও সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের আরও দুই শতাধিক সীমান্তরক্ষী মোতায়েন ছিল।

শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিনিধি মোহাম্মদ আরিফ বলেন, সকালে বিজিপির সৈন্যরা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এসে অস্ত্র তাক করে রোহিঙ্গাদের সরে যেতে হুমকি দেয়।তারা কাঁটাতারের উপর মই দিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশ করে হামলারও চেষ্টা চালায়।

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31