রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে

প্রকাশিত: ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০১৮

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে । দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে ,রাখাইনে সহিংসতার মুখে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবে মিয়ানমার ।

শনিবার গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে গত সপ্তাহে বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির আলোকে আগামী মঙ্গলবার প্রথম দফায় একদল রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরবে ।

এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য রাখাইন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইউ নি পু নেতৃত্বে মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল শুক্রবার নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে এবং তাউয়ং পিও লেতভে ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। সেখানে থাকার ঘর, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত করতে শেষ মুহূর্তের কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রতিনিধি দলে রাখাইন রাজ্য বিষয়ক টাস্ক ফোর্সের চেয়ারম্যান ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর বিষয়ক উপমন্ত্রী উ খিন মং তিন এবং সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী উ সোয়ে অংসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ছিলেন।

কর্মকর্তাদের মংডু শহরের নিকটবর্তী তাউয়ং পিও লেতভে ক্যাম্প পরিদর্শনের একটি ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্রের ওই প্রতিবেদনে। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা প্রাঙ্গণে কাঠের তৈরি বড় ঘর দেখা গেছে ওই ছবিতে।

মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে চার মাসে পালিয়ে এসেছে সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা
গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের অধিকাংশই আছে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে।

এই রোহিঙ্গাদের স্বভূমিতে ফেরতে গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমার ও বাংলাদেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাতে আগামী সপ্তাহে শুরু করে দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

গ্লোবাল নিউ লাইট অফ মিয়ানমার বলছে, মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ অনুযায়ী সপ্তাহে পাঁচ দিন রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করবে মিয়ানমার। যেদিন যাদের পাঠানো হবে, তাদের তালিকা আগেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে দেবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ থেকে স্থল পথ দিয়ে যেসব রোহিঙ্গা যাবে তাদের প্রাথমিকভাবে তাউয়ং পিও লেতভে সেন্টারে রাখা হবে। আর নদীপথে যারা যাবে তাদের নেওয়া হবে নাখুয়ার হ্লা পোয়ে কুংয়ে।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা একটি ট্রানজিট ক্যাম্প করবেন, যেখানে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার থাকার ব্যবস্থা হবে। নিজের এলাকা বা তার কাছাকাছি জায়গায় যাওয়ার আগে এই ক্যাম্পে থাকবেন বাংলাদেশফেরত রোহিঙ্গারা।

এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামে ফিরতে পারবে, নাকি তাদের ক্যাম্পেই থাকতে হবে- সে বিষয়টি স্পষ্ট করা দরকার।

মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ মুহূর্তে প্রত্যাবাসন শুরুর বিরোধিতা করেছে। তাদের ভাষায়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত। এই অবস্থায় তাদের ফেরত পাঠানো সময়োচিত হবে না।

রাখাইনে কয়েকশ বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস থাকলেও ১৯৮২ সালে আইন করে তাদের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতাই রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করে আসছেন ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’ ও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930