ভেজাল খাদ্যমুক্ত নগরী চাই

প্রকাশিত: ১২:৩৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২১, ২০১৮

ভেজাল খাদ্যমুক্ত নগরী চাই

শেলী সেনগুপ্তা

প্রতিদিন সকাল হয় ভালোথাকার প্রত্যশা নিয়ে। কারণ ভালো থাকাটা মানুষের আজন্ম অধিকার। ভালো থাকার সাথে উত্তম খাদ্যের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। উত্তম খাদ্য বলতে বুঝি সুস্বাদু কিন্তু ভেজালমুক্ত খাদ্য। কিন্তু আমাদের দেশে ভেজালমুক্ত খাদ্য পাওয়া আর আলাদীনের চেরাগ পাওয়া এক কথা। দিনদিন ভেজালের বিস্তৃতি বেড়েই চলেছে। এখন কোন খাদ্যই ভেজালমুক্ত নয়।
যদি শাকসব্জির কথা বলি তাহলে দেশের অন্য জেলার তুলনায় রাজধানীর বাজারগুলোতে ভেজালমুক্ত শাকসব্জি প্রায় মেলেই না। কখনো কখনো এমন হয় কোনটি আসল পণ্য আর কোনটি ভেজাল পণ্য তা বোঝাও কঠিন হয়ে পড়ে। কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে ক্রয়কৃত পণ্যের কোনটি আসল আর কোনটি নকল তা নিয়ে ক্রেতা নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগে। ভেজালের প্রকোপ শুরু হয় বাজারের শাকসব্জিতে কৃত্রিম রঙ মেশানো থেকে। আমাদের প্রিয় শহর ঢাকার বাজারগুলোতে কৃত্রিম রঙ মেশানো ছাড়া শাকসব্জি নেই বললেই চলে।
রাজধানীতে ভেজাল খাদ্যদ্রব্যের পাশাপাশিভেজাল মশলা আর ফরমালিনযুক্ত মাছ বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে। বাজারে এখন কৃত্রিমরঙ বিহীন মসলা পাওয়া সত্যিই কঠিন। হলুদে কৃত্রিম রঙ , মরিচে কৃত্রিম ঝাল গুড়ো গরমমসলাতে কৃত্রিম সুগন্ধি যেন খুব সাধারণ বিষয়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ফরমালিন। ঢাকার বাজারে ফরমালিনমুক্ত মাছ বা তরলদুধ পাওয়া রীতিমতো সাধনার ব্যাপার।
গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো যুক্ত হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্য, বিশেষ করে শিশুখাদ্য যা শিশুর জীবনের জন্য হুমকিস্বরুপ। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদী রোগভোগের পর মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। শুধু খাদ্যেই বিষক্রিয়ার কারণে দিনদিন মানুষের মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমরা সবাই জানি একটি জাতির শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খাদ্যের অবদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে নিম্নমানসম্পন্ন ও ভেজালযুক্ত খাদ্য গ্রহণের ফলে একটি জাতি শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে, যার কুফল দীর্ঘমেয়াদী।
খাদ্যদ্রব্য,পানীয়,ভোজ্যতেল এমনকি ঔষধেও ভেজাল দেয়া হচ্ছে। ফলমূল পাকানো হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। ক্যালসিয়াম কার্বাইট দিয়ে অসময়ে পাকানো কলা ও পেঁপেতে বাজার ভরপুর। মানুষ আর নির্ভেজাল প্রাকৃতিকখাদ্য বা নির্ভেজাল খাদ্য পাচ্ছে না। ফল ও সব্জির বাইরে ফরমালিন দিয়ে দুধ ও মাছ সতেজ রাখা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
মানুষের সাথে সাথে প্রকৃতিও রঙ্গীন হতে ভালোবাসে। প্রকৃতির মূল সৌন্দর্য রঙের মধ্যে। প্রকৃতি তার রঙ দিয়ে আমাদের চোখ জুড়ায়, আমাদের ভালোলাগার জগত তৈরি করে। মানুষের মনভোলানো রঙ কখন যে নিজের অজান্তেই জীবনঘাতী হয়ে ওঠে তা কেউ বুঝতে পারে না। মানুষের এই রংপ্রীতিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনের খাবারে চোখজুড়ানো রং মেশায়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এসব কৃত্রিম রঙ জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে আজ সমাজের একটি বিশাল অংশ নানা ধরণের মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। অনেকেই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার অপেক্ষা রয়েছে।
আমাদের দেশের সিংহভাগ জনগণ সুচিকিৎসার আওতাভুক্ত নয়, তার ওপর যদি নিয়মিত ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করে তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম কি হবে তা সহজেই অনুমেয়।
আজকাল খাদ্যের মান এবং গুণ নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে সংযুক্ত, কিন্তু স্বতন্ত্র একটি বিষয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট সচেতন মনোভাব পোষণ করে। প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রচার প্রচারণা লক্ষ্য করা যায়।
তবে এর জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার সাথে সাথে বিষয়টি নিয়মিত তদারক করার জন্য দরকার পর্যাপ্ত ও সুদক্ষ জনবল। কারণ খাদ্যে ভেজাল বিষয়টি কোনভাবেই উপেক্ষা করার বিষয় নয়। তাই নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি এই কার্যক্রমের প্রচারণাও বাড়াতে হবে।
তাছাড়া বিশুদ্ধ খাবার গ্রহণের জন্য প্রতিটি নাগরিককেও সচেতন হতে হবে। নিজনিজ উদ্যোগে ভেজালবিরোধী কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। খাদ্যের উজ্জ্বল রঙ দেখে সাথে সাথে তা বর্জন করতে হবে, কারণ আমরা জানি কৃত্রিম রঙ প্রয়োগ করা খাদ্যের বর্ণ অস্বাভাবিক উজ্জ্বল হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে সাথে সমাজের সব স্তরের মানুষ যদি সচেষ্ট হই তাহলে আমরা একটি ভেজালখাদ্যমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে পারি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভেজালের অভিশাপ থেকে মুক্ত একটি স্বাস্থ্যবান, সুন্দর ও সবল প্রজন্ম গড়ে তোলার স্বপ্ন অচিরেই বাস্তবে পরিণত করার আশা রাখতে পারি।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31