‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতি’ একটি ভাঁওতা

প্রকাশিত: ১:১৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৫, ২০১৮

‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতি’ একটি ভাঁওতা

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতি’ (trickle down economy)-এর তত্ত্বকে পুঁজিবাদের নয়া-উদারবাদী (neo-liberal) অথনৈতিক মতবাদের একটি প্রধান যুক্তিগত ভিত্তি হিসেবে উপস্থিত করার চেষ্টা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে যে, অর্থনীতিতে ধারাবাহিকভাবে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের ব্যবস্থা না করা গেলে উন্নয়ন সাধন করা যাবে না। অর্থনীতি স্থবির হয়ে থাকবে। অর্থনীতিতে উন্নয়ন সাধিত হওয়ার বদলে তা যদি স্থবির হয়ে থাকে তা হলে দীর্ঘমেয়াদে ধারাবাহিকভাবে জনকল্যাণ বৃদ্ধি করাও সম্ভব হবে না। আর সমাজের সম্পদ যদি ‘সমতার’ ভিত্তিতে সব নাগরিকের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত ‘বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের’ মজুদ পাওয়া যাবে না। তাই ‘বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের’ জোগান সম্ভব করতে হলে সম্পদের ‘সমবণ্টনের’ বদলে সম্পদের ‘কেন্দ্রীভবন’ ঘটতে দেওয়াটিই বরং হবে অপরিহার্য।

নয়া-উদারবাদী চিন্তাবিদদের যুক্তির ধারা হয়তো এটুকু পর্যন্ত মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যুক্তির এই ধারাবাহিকতার সঙ্গে যুক্ত করে তারা একই সঙ্গে আরও যে তত্ত্বটি হাজির করে থাকেন তা হলো, ‘বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের’ জোগান নিশ্চিত করতে হলে সম্পদের যে ‘কেন্দ্রীভবন’ অপরিহার্য তা ‘ব্যক্তিমালিকানার’ কাঠামোর মধ্যেই কেবল ঘটানো সম্ভব। এটিও হলো নয়া-উদারবাদীদের প্রাথমিক যুক্তির উপাদান। একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামোর আওতায় সম্পদের ‘কেন্দ্রীভবন’ ও ‘বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের’ জোগান যে ব্যক্তিমালিকানার বদলে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক মালিকানায় আরও দক্ষ ও কার্যকরভাবে করা সম্ভব সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে নয়া-উদারবাদের প্রবক্তারা একেবারেই অনিচ্ছুক। তারা সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে সম্পদের ‘কেন্দ্রীভবন’ ও ‘বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ’ সৃষ্টির বিষয়টিকে ব্যক্তিমালিকানার বিষয়ের সঙ্গে সমার্থক হিসেবে হাজির করে থাকেন।

এভাবে নয়া-উদারবাদী চিন্তাবিদদের যুক্তির ধারাটি হয়ে ওঠে অনেকটা এ রকম যে, অর্থনীতিতে স্থবিরতা পরিহার করে ‘উন্নয়ন’ নিশ্চিত করার কাজটি হলো জনকল্যাণ সাধনের জন্য একটি আবশ্যিক ও প্রয়োজনীয় শর্ত। এবং তা করতে হলে সম্পদের কেন্দ্রীভবনের মাধ্যমে ‘বিনিয়োগযোগ্য উদ্বৃত্ত সম্পদ’ সৃষ্টি হতে দেওয়া প্রয়োজন। তাদের মতে এ কাজটি কেবল ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক ব্যবস্থার অধীনে সম্পাদন করা সম্ভব। তাই নয়া-উদারবাদী তত্ত্ব অনুসারে, সম্পদের ‘সুষম’ বণ্টনের বদলে সম্পদের ‘অসম’ বণ্টন নিশ্চিত করাটিই হলো কাম্য। এভাবে নয়া-উদারবাদী চিন্তার অনুসারীরা তাদের ভ্রান্ত যুক্তির বদৌলতে নিজেদের ‘ব্যক্তিমালিকানায় সম্পদের কেন্দ্রীভবন ঘটতে দেওয়ার’ সমর্থকে পরিণত করে। তারা হয়ে ওঠেন সমাজের মুষ্টিমেয় মানুষকে বিপুল পরিমাণে বিত্তশালী করে তোলার তাত্ত্বিক অভিভাবক। ‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতির’ তত্ত্বের সুবাদে তারা হয়ে ওঠেন ‘বৈষম্যের’ পূজারি। তাদের দেওয়া তত্ত্বের মূল লক্ষ্য হয়ে ওঠে সমাজের গুটিকতক ‘উঁচুতলার মানুষের’ হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। সম্ভাব্য দক্ষতম প্রক্রিয়ায় বিনিয়োগ নিশ্চিত করে সবচেয়ে দ্রুত ও জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার বিষয়টি তাদের কাছে আর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে থাকে না। এই উল্লিখিত মূল লক্ষ্যকে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে নিছক কথার কথা হিসেবে তারা ‘চুইয়ে পড়ার’ যুক্তি হাজির করে থাকে।

‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতির’ তত্ত্ব অনুসারে, নিচের তলার মানুষের কাছ থেকে তাদের সৃষ্টি সম্পদ উঠিয়ে নিয়ে ওপর তলার মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে ‘কেন্দ্রীভূত করা’ হলো অপরিহার্য একটি কর্তব্য। সেই একই তত্ত্ব অনুযায়ী এ কথা বলা হয়ে থাকে যে, বিনিয়োগের প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক ধারাতেই ‘কেন্দ্রীভূত করা’ সম্পদ আবার বাড়তি পরিমাণে নিচের তলার মানুষের হাতে ফিরে আসবে। এ কারণে বৈষম্যের সাময়িক বৃদ্ধি ঘটা সত্ত্বেও, বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার মাধ্যমে তা নিচের দিকে ‘চুইয়ে পড়ার’ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে। ফলে এই প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত অর্জিত সুফল আম-জনগণের জীবনমানের উন্নতির বাহকে পরিণত হবে। অর্থাৎ অল্প কিছু মানুষের হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার কারণে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পেতে থাকলেও, এর চূড়ান্ত ফল হিসেবে, সমপরিমাণে না হলেও, গরিব মানুষের আর্থিক অবস্থাও ক্রমান্বয়ে উন্নত হতে থাকবে। এভাবে বৈষম্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত আম-জনগণের হাতে তার ‘চুইয়ে পড়া’ ফসল পৌঁছে যেতে থাকবে। নয়া-উদারবাদী তত্ত্বানুসারে নিচের তলার গরিব মানুষদের কাছে উন্নয়নের ফসল পৌঁছে দিয়ে তাদের আর্থিক শক্তি বৃদ্ধি করার এটিই একমাত্র নিশ্চিত পথ। এই পথের বাইরেও যে অন্য পথ ও পন্থায় আরও দ্রুত ও ভালোভাবে একই লক্ষ্য অর্জন করা যে সম্ভব হতে পারে সে বিষয়টিকে নয়া-উদারবাদী তত্ত্ব বিবেচনায় নিতে রাজি নয়। অথচ রাশিয়া, চীন, কিউবা, ভিয়েতনাম প্রভৃতি দেশে সমাজতন্ত্রের পথ অনুসরণ করে একই লক্ষ্যে আরও উন্নত ফল লাভ করা যে সম্ভব হয়েছে, সে কথা ইতিহাসের বাস্তবতা দ্বারা প্রমাণিত।

‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতির’ তত্ত্বের ক্ষেত্রে আম-জনগণের কাছে উন্নয়নের ফসল পৌঁছার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বৈষম্যের ক্রমবৃদ্ধিকে প্রয়োজনীয় শর্ত হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এটিকে জনকল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ‘প্রসব বেদনা’ রূপে গণ্য করে তা মেনে নিতে বলা হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, ধন-বৈষম্য কেবল একটি অর্থনীতিসংশ্লিষ্ট বিষয় নয়। এটির সামাজিক তাৎপর্য খুবই গভীর ও প্রত্যক্ষ। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বৈষম্যের পরিমাণ মাত্রাছাড়া হতে থাকার প্রবণতা অবধারিতভাবে সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দেবে। এরূপ ঘটতে থাকলে তা অর্থনৈতিক কর্মকা-কেও চরম নৈরাজ্যে নিক্ষেপ করবে। ফলে বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ থেকে অর্জিত সুফলের ‘চুইয়ে পড়ার’ প্রক্রিয়া শুধু বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই সৃষ্টি হবে না, বরং তার উল্টো প্রক্রিয়া সূচিত হওয়ার বিপদও তৈরি হবে। সম্পদ নিচের দিকে চুইয়ে পড়ার বদলে উল্টো তা ক্রমাগতভাবে নিচ থেকে ওপর তলার গুটিকয়েক ব্যক্তির হাতে ক্রমবর্ধমান হারে স্থানান্তর হতে থাকবে। ‘বৈষম্যের’ চক্রাকারে বৃদ্ধির এরূপ প্রবণতা অর্থনীতিকে ধ্বংস করার বিপজ্জনক ভিত্তি সৃষ্টি করে চলবে।

ব্যক্তিমালিকানায় ‘সম্পদের কেন্দ্রীভবনের’ ক্ষেত্রে ‘চুইয়ে পড়ার’ প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো এ ক্ষেত্রে ‘কেন্দ্রীভূত সম্পদ’ বিনিয়োগ করা হবে কি হবে না, এবং হলেও তা কতটা হবে, সেসব বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তার সুযোগ নেই। এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই বিত্তবান মালিকের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছা প্রসূত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকবে। বিনিয়োগের প্রশ্নে একজন ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছা নির্ভর করে তার ভোগের মাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ, বিনিয়োগ ছাড়াই ফটকাবাজারি করে বাড়তি মুনাফা করার সুযোগ ইত্যাদিসহ বহুবিধ কারণের ওপর। ফলে ‘কেন্দ্রীভূত সম্পদের’ সবটুকু তো দূরের কথা, তার বেশিরভাগটিও যে উৎপাদনশীল বিনিয়োগে নিয়োজিত হবে, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা থাকবে না। এ কারণে ‘চুইয়ে পড়ার’ প্রক্রিয়া আরও খর্বিত হয়ে পড়বে। ফলে বৈষম্যের মাত্রা যতটুকু হবে বলে অনুমান করা হয়ে থাকে, বাস্তবে তার থেকে তা আরও বেশি হওয়ার মতো পরিস্থিতি জন্ম নেবে।

নয়া-উদারবাদী তত্ত্বের ক্ষেত্রে গোড়াতেই আরেকটি যে বড় ফাঁক রয়েছে তার উৎস হলো এই বাস্তব সত্যটি যে ‘সম্পদের কেন্দ্রীভবন’ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘বিনিয়োগযোগ্য সম্পদে’ রূপান্তরিত হয় না। আমাদের দেশে যে কল্পনাতীত বিপুল পরিমাণ সম্পদ ‘কেন্দ্রীভূত’ হয়ে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে জমা হচ্ছে, তা প্রধানত হয়ে চলেছে অবৈধ লুটপাটের প্রক্রিয়াতে। দেশের অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে এ দেশে অপ্রদর্শিত সম্পদের (অর্থাৎ কালো টাকার) পরিমাণ আমাদের মোট জাতীয় আয়ের ৮০% পর্যন্ত হতে পারে বলে ধারণা করা যায়। এ তথ্যকে সঠিক বলে ধরে নিলে বলা যায় যে, বিনিয়োগযোগ্য বৈধ সম্পদের বাইরে থাকা এরূপ কালো টাকার পরিমাণ ১৬/১৭ লাখ কোটি টাকাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই পরিমাণ হলো আমাদের ৪ বছরের বাজেটের মোট পরিমাণের চেয়ে বেশি। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ জনগণের শ্রমলব্ধ সম্পদ। তাদের শ্রমলব্ধ সে বিপুল পরিমাণ সম্পদ এখন ‘কালো টাকায়’ রূপান্তরিত হয়েছে। কিছুটা পরিমাণে বৈধ, কিন্তু প্রধানত অবৈধ নানা পন্থায় তা কতিপয় মানুষের ব্যক্তিগত মালিকানায় ‘কেন্দ্রীভূত’ হতে পেরেছে। কিন্তু এ সম্পদের খুব অল্প অংশই উৎপাদনশীল বিনিয়োগে নিয়োজিত হচ্ছে। ব্যক্তিগত মালিকানায় সম্পদের ‘কেন্দ্রীভবন’, সম্ভাব্য পরিমাণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার বদলে ভোগ-বিলাসসহ নানা অনুৎপাদনশীল ক্ষেত্রে ব্যয়ের মাধ্যমে তা অপচয় হচ্ছে। কতিপয় বিত্তবানের বিত্ত বাড়লেও সেই অনুপাতে প্রকৃত বিনিয়োগ বাড়ছে না। ফলে যে পরিমাণ সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়েছে তার সামান্য অংশই কেবল ‘চুইয়ে পড়ার’ জন্য সৃষ্ট ভান্ডারে সঞ্চিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ কারণে আপেক্ষিক দারিদ্র্য কমার বদলে তা ক্রমাগত বাড়ছে।

‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতির’ তত্ত্বানুসারে যে ‘কেন্দ্রীভূত সম্পদ’ বিনিয়োগকৃত হওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিচের দিকে প্রবাহিত হওয়ার কথা, সেই বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের একটি বিশাল অংশ উৎপাদনশীল বিনিয়োগে নিয়োজিত হওয়ার বদলে ক্রমাগতভাবে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) হিসাব থেকে দেখা যায় যে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার কোটি টাকার ওপরে (অর্থাৎ মাথাপিছু ৪ হাজার ৫শ টাকা)। ২০০৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ কোটি টাকার উপরে (অর্থাৎ মাথাপিছু প্রায় ৪০ হাজার টাকা)। জনগণের সৃষ্ট এ সম্পদ ‘চুইয়ে পড়ে’ জনগণের কাছে ফিরে আসেনি। জনগণ এ অর্থ পাচার করেনি। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন বলে যুক্তি দেখিয়ে জনগণের কাছ থেকে এ অর্থ উঠিয়ে নিয়ে তা বিনিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘চুইয়ে পড়ে’ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার বদলে কতিপয় লুটেরা দুর্বৃত্ত তা বিদেশে পাচার করেছে। বছরের পর বছর ধরে এই ‘ডাকাতি’ চলছে।

‘চুইয়ে পড়া অর্থনীতির’ তত্ত্ব যে আসলে লুটপাটের প্রক্রিয়াকে আড়াল করার জন্য একটি সস্তা ভাঁওতাবাজি সে বিষয়ে এরপরও কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ আছে কি?

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম : সভাপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

March 2024
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31