মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ ও জনগণের ঔষধ নির্ভরতা

প্রকাশিত: ১১:২৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০১৮

মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ ও জনগণের ঔষধ নির্ভরতা

রমিজ উদ্দিন

লেখাটা ঔষধ দিয়েই শুরু করি। দিন দিন ঔষধের চাহিদা বাড়ছে প্রকটভাবে। প্রত্যেক পরিবারের প্রতিটি সদস্য ঔষধ সেবন করছে। একদম যে খাচ্ছে না, সেও একটি গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধ খায়। ছোট বেলায় যতটুকু মনে পড়ে কালেভদ্রে মানুষকে ঔষধ খেতে দেখতাম। আর এখন এমন হয়ে গেছে যেন ঔষধ খাওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। গত বছর এক জরিপে জানা গেছে যে, এই বছরই দেশে শুধুমাত্র গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধ বিক্রয় হয়েছে প্রায় চার হাজার কোটি টাকার। যেন গ্যাষ্ট্রিক এ দেশের মানুষের জাতীয় রোগ। এই গ্যাস কেন উৎপন্ন হচ্ছে কেউ কি একবারও ভেবে দেখেছেন ? কি কারণে এই গ্যাস সমস্যা? প্রতিটি ডাক্তার প্রতিটি প্রেসক্রিপশনে আপনি অবশ্যই গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধ পাবেন এটা আমি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারি। গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধ ছাড়া যেন প্রেসক্রিপশন পরিপূর্ণ হয় না। আমি এটাও বলব ডাক্তাররা এভাবে গণহারে ঔষধ দিতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ যখন রোগিরাই বলে তারা গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তখন ডাক্তার এর আর কি বা করার থাকে। এই যে গণহারে গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যায় এইখানকার মানুষগুলো ভুগছেন এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম কারন হল খাদ্যে ভেজাল এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
গ্যাষ্ট্রিকের ঔষধের পরে যে ঔষধটি মানুষ ব্যাপক হারে সেবন করছে তা হল পেটের বা হজম সংক্রান্ত সমস্যার ঔষধগুলো। তারপর রয়েছে সর্দি, কাশি, জ্বর, মাথা ব্যাথার ঔষধগুলো। এর পরে ব্যাথা বেদনা, এর পর চুলকানির ঔষধ সমূহ এবং তারপর এন্টিবায়োটিক। অন্যান্য ঔষধের পাশাপাশি এই ঔষধগুলোই মূলত বাংলাদেশীরা ব্যাপকহারে সেবন করছে কারণ তারা এই সব রোগেই অধিকহারে ভুগছে। আর তারা কেন অসুখে ভুগছে তার কারণ খুঁজে দেখলে এক ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পাই। আসুন কারণগুলো দেখে নিই।
১. খাদ্যে ভেজাল :
খাদ্যে ভেজাল বাংলাদেশের এক ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। খাদ্যে ভেজাল করায় যেন এখানে অলিখিত নিয়ম হয়ে গেছে। সবাই যার যার সাধ্যমত আপোষে খাদ্যে ভেজাল করছে অধিক মুনাফা লাভের জন্য। প্রথমেই বলব বহুল প্রচলিত খাদ্য ফার্মের মুরগীর ভেজাল সম্পর্কে। এই মুরগীকে দ্রুত বড় করার জন্য যে অত্যাধিক মাত্রায় এন্টিবায়োটিক দেওয়া হয় তার বিষক্রিয়া মুরগী হয়ে সহজে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং এই এন্টিবায়োটিক মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নষ্ট করে দেয়। ফলে মানব শরীরে কোন ঔষধ সহজে কাজ করে না এবং মানুষের হয় বিভিন্ন মরণব্যাধী এবং এরপর অকাল মৃত্যু। এন্টিবায়োটিক কোম্পানিগুলো ফার্মের মালিকদের এই বলে সতর্ক করে দেয় যে মুরগীকে নির্দিষ্ট ও নিরাপদ মাত্রায় এন্টিবায়োটিক সেবনের অবশ্যই এক সপ্তাহ পরে বাজারে ছাড়তে হবে। নইলে এই এন্টিবায়োটিক মুরগীর শরীর হয়ে সহজে মানুষের শরীরে প্রবেশ করবে। কিন্তু আমাদের অতি লোভী ব্যবসায়ীরা বাজারের চাহিদা মেটানোর নামে অধিক মুনাফার লোভে মাত্রাতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে এবং এক সপ্তাহ দূরে থাক সকালে মুরগিকে এন্টিবায়োটিক দিয়ে সন্ধ্যায় বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে আমরা সেই মুরগী খেয়ে শরীরে প্রবেশ করাচ্ছি এন্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত ডোজ। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমাদের শারীরিক অবস্থা কি ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হয়তোবা কয়েক বছর পর এমন সময় আসবে যখন এই দেশের মানুষের শরীরে ঔষধ আর সহজে কাজ করবে না এবং এমনও হতে পারে দলে দলে সাধারণ মানুষ ছোট খাট রোগে মারা যাচ্ছে।
এইভাবে মাছ, শাকসবজি ও ফলমূলে ফরমালিন প্রয়োগ ও এর ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করব। এইগুলো আরো ভয়াবহ। এই ফারমালিন মানব শরীরকে এমনভাবে নষ্ট করে ফেলে যে, কোন চিকিৎসায়ও আরোগ্য লাভ করা সম্ভব হয় না। এছাড়াও প্রয়োগ করা হয় বিভিন্ন ধরনের কিটনাশক ও সার, মানব শরীরে যার প্রভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর।
এবার বলব পানিয় জলের ভেজাল নিয়ে। বিভিন্ন পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায় ঢাকা শহরের ৯৭% জারের পানিতে মলমূত্রের জীবাণু রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কোম্পানির বোতলজাত পানিতেও রয়েছে ব্যাপক ভেজাল। পানির অপর নাম যেমন জীবন, দূষিত পানির অপর নাম অবশ্যই মরণ বুঝে নিয়েছেন আশা করি। সম্প্রতি ওয়াসার পানিতে জন্ডিস ও হেপাটাইটিস রোগের জীবানু থাকার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে এবং চট্টগ্রামের বেশ কিছু মানুষ বিভিন্ন পানি বাহিত রোগের আক্রান্ত হয়েছে। পত্রিকা মারফত আরো জানা যায় রাস্তার ধারের দোকান ও ফুটপাতের খাবারগুলো বিশেষ করে চটপটি, ফুচকা ও অন্যান্য আইটেমের ক্ষেত্রে টাইফয়েডের জীবাণুর স্পষ্ট উপস্থিতি। আরো রয়েছে গুরোদুধে মেলানিন ও সীসার উপস্থিতি। তরল দুধে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণ, ভোজ্য তেলের করুন অবস্থা, চিনিতে ক্যামিক্যাল, মুড়িতে সার, বিস্কুট, কেক জাতীয় দ্রব্যে অত্যাধিক পরিমাণ নিম্ন মানের সোডা, জুস জাতীয় পানিয়গুলোতে নিম্ন মানের ক্যামিকেল ইত্যাদি।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ের পরিচালিত মোবাইল কোর্টের জেল জরিমানা থেকে বিভিন্ন হোটেল রেষ্টুরেন্টের খাদ্যে ভেজালের নিমর্ম রূপ উঠে আসে। এভাবে অত্যন্ত নিমর্মভাবে বাঙালির খাদ্যে ভেজালটা ঢুকেগেছে অনেক আগেই। আর এ ভেজালের বিষক্রিয়ায় বাঙালিদের হচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা আর নিজেদের জীবন বাচাতে ও নিরাপদ থাকতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে ঔষধের উপর। ফলশ্রুতিতে দেশে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা ঔষধ কোম্পানির সংখ্যা, বাড়ছে ঔষধে ভেজাল কমছে ঔষধের গুনগতমান এবং প্রতিটি এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ঔষধের দোকান রয়েছে এবং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর প্রত্যেকটা দোকানে ভাল পরিমাণে ঔষধ বিক্রি হচ্ছে এবং ব্যবসাও ভাল হচ্ছে। মনে রাখবেন ঔষধ ব্যবসা ভাল চলা মানে দেশের জনসাধারণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা হুমকির সম্মুখিন।

২. পরিবেশ দূষণ :
এদেশের মানুষের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এক জরিপে ঢাকা বিশ্বের দূষিত নগরী গুলোর মধ্যে ২য় স্থান অধিকার করেছে। আর জাতিকে দিয়েছে নিদারুন লজ্জা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের শহুরে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত। রাস্তায় রয়েছে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস ক্যাডমিয়াম ও সীসার উপস্থিত। রয়েছে ধুলা, বালি ও মনুষ্যবর্জ্য ও থুথুর মিশ্রন, রয়েছে যান বাহনের কালো ধোঁয়া কার্বন মনোক্সাইডসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রসায়নিক গ্যাসের উপস্থিতি। আর বায়ু দূষণের প্রভাবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বায়ুবাহিত রোগে মানুষগুলো আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি, হাপানী, হুপিং কাশি, যক্ষাসহ বিভন্ন মারাত্মক রোগে। আর রোগমুক্তির আশায় ঝাপিয়ে পড়ছে ঔষধের কোলে।

৩. শব্দ দূষণ:
এরপর রয়েছে শব্দ দূষণ, বলা যায় বাংলাদেশ একটি শব্দ দূষণের দেশ। শহরের রাস্তাঘাট ও মোড় গুলোতে যে পরিমাণ শব্দদূষণ মানুষ ও যানবাহনগুলো তৈরি করে হরণ ও ইঞ্জিনের বিকট শব্দে শব্দদূষণ পরিমাপের মেশিন আনলে তাও অকেজো হয়ে যাবে আশা করি। মানুষের শ্রবন ক্ষমতা ৫০ ডেসিবল থেকে ৬০ ডেসিবল কিন্তু শব্দ দূষণের মারাত্মক হচ্ছে প্রায় ১২০ ডেসিবল অর্থাৎ মানুষ এই অমানবিক শব্দ দূষণের আক্রান্ত হচ্ছে হার্ট ব্রেইন ও কানের বিভিন্ন অসুখে আর উপাযান্তর না দেখে নিজেকে সঁপে দিচ্ছে ঔষধের কোলে।
৪. আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষপট:
আরো রয়েছে মানসিক সমস্যা যেগুলো উদ্ভভ হয় মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ থেকে আর এসবের পিছনে কাজ রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক অবক্ষয়, নেশার মরন থানা অর্থাৎ টেবলেট, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফ্যানসিডিল, ধুমপান আসক্তি মারাত্মক আকার ধারন করে আর তৈরি করে মারাত্মক মানসিক সংকট। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি সর্বাংশে দূর্নীতির কালো থাবা, রাজনৈতিক দস্যুতা, সামাজিক অসামাঞ্জস্যতা, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, বেকার সমস্যা, ধনী-গরীবের শ্রেণি বৈষম্য, শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতিসহ আরো অনেক কিছু। এইসব মানসিক অস্থিরতা ও অবসাদ মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে ঔষধের দিকে। আর মানুষ সেবন করছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ।

৫. পরিবেশগত কারণ:
মশা ও মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে যেমন ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া রাগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এবং মশা নিবারনের জন্য যে গ্যাস কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে তাও বিষাক্ত প্রভাব ফেলে মানব শরীরে এবং বিভিন্ন কারনে কোম্পানীর নিম্নমানের ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল মিশ্রিত মশার কয়েল মানুষকে ঠেলে দিচ্ছে অকাল মৃত্যুর দিকে।

৬. প্রযুক্তিগত কারণ:
এরপর রয়েছে ইলেক্ট্রিক্যাল কয়েলের ক্ষতিকর প্রভাব। এন্ড্রয়েড ফোন ও বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের শরীরে ব্রেইনের সমস্যা, চোখের সমস্যা, মাথা ব্যাথা, বিভিন্ন রোগের উৎপাদন করছে। এছাড়াও সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকা ও সকল মান সম্পন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত এ জাতির রয়েছে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ব্যাপক অসচেতনতা ও উদ্ভট খাদ্যাভাসের বদঅভ্যাস। আর এসবের কারণে তৈরি হচ্ছে জীবনের প্রতি অসন্তোষ।

৭. ডাক্তারদের ব্যবসায়ী মনোভাব ও দুর্নীতিগ্রস্থ ঔষধ কোম্পানী:
আরো একটি কারণ হচ্ছে ডাক্তারদের এন্টিবায়োটিক প্রীতি, এন্টিবায়োটিক পাওয়ারফুল ডোজ দিয়ে তাড়াতাড়ি রোগীকে সুস্থ করে নিজের প্রচার ও প্রসার তথা ব্যবসা বাড়ানোতে এখনকার ডাক্তারা সিদ্ধহস্ত অথচ এন্টিবায়োটিক এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তাদের চাইতে ভালো করে আর কে জানবে। আর এভাবে রোগীরা হারাচ্ছে তাদের শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
এর মধ্যে বিভিন্ন নামকরা ও ভূইফোড় ঔষধ কোম্পানী উৎপাদন ও বাজারজাত করছে ভেজাল ও নিম্নমানের ঔষধ, অথচ বাংলাদেশী ঔষধ কোম্পানীর ঔষধ বিদেশে খুব সমাদৃত কিন্তু দেশের জন্য একই ঔষধ তৈরি করে অনেকখানি নিম্নমান সম্পন্ন করে। কেননা দেশের বাজারে দামী ঔষধ চলে না কারণ গরীব অনুন্নত ও দুর্নীতিগ্রস্থ এদেশের সাধারণ মানুষের নাভীশ্বাস ওঠে নিজেদের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রয়োজন মেটাতে তাই দামী ঔষধ কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দাম কমানোর প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে তারা ঔষধের মান কমাতে কমাতে কোথায় নিয়ে যায় তা কেবল তারাই জানে। আর নিম্ন মানের ঔষধগুলো বাজারে চালানোর জন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে এর মধ্যে একটি হচ্ছে, ঔষধ কোম্পানিগুলো ডাক্তার দের বিভিন্ন রকম উপহার সামগ্রী ও উপঢৌকন দিয়ে থাকে নিম্নমানের ঔষধগুলো রোগীদের প্রেসক্রীপশনে লেখার জন্য। আরো ঔষধ কোম্পানীর এম. আর./ প্রতিনিধিরা প্রত্যেক ডাক্তারের চেম্বারে গিয়ে প্রেস্ক্রিপশনে তাদের ঔষধের নাম লিখেছে কি তা অনুসন্ধান চালায় এবং বিশেষ প্রেসক্রিপশনের ছবি ও তুলে নেয়। এই ঘটনাগুলো সাধারণ মানুষের সাথে কতটা প্রতারনামূলক তা আশা করি আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই, অথচ এই প্রতারনা ও অত্যাচারগুলো এখনে খুব সাধারণ বিষয়ে পরিনত হয়েছে।

এই জাতির জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে দুঃখজনক তা হল এখানে স্বাস্থ্যখাত সেবামূলক না হয়ে মুনাফাধারী ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। মেডিক্যাল, ক্লিনিক, হাসপাতালগুলো অত্যন্ত লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। রোগ-শোক হচ্ছে মানুষের বিপদের সময়, এই সময় মানুষের প্রয়োজন হয় সাহায্য সহানুভূতি। কিন্তু ঠিকই বিপদের সময় এইখানকার সাধারণ মানুষগুলোকে পরতে হয় মারাত্মক আর্থিক সংকটের মুখে। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো গলাকাটা বিল যেন মরার উপরে খরার ঘা। দেশের বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচ্চ মাত্রার বিল বানানোর জন্য এরা অনেক সময় বিভিন্ন রকম ছল চাতুরী দূর্নীতি ও অন্যায়ের আশ্রয় নেয়। এই বিষয়ে পত্র-পত্রিকায় অতীতেও অনেক রিপোর্ট হয়েছে কিন্তু আশানুরূপ কোন পরিবর্তন হয় নি। এর মধ্যে আর একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয় গর্ভবতি মহিলারা। আর তা হল অযাচিত সার্জারি। সার্জারিতে অধিক মুনাফা হয় বলে ডাক্তারগণ এতে বেশি আকর্ষিত হয়। এমন অভিযোগ ভুরিভুরি। অথচ উন্নত দেশগুলোতে সার্জারির হার এদেশের তুলনায় অনেক কম। মুনাফালোভী এইসব ডাক্তার ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ কেন চিকিৎসা খাতকে বেছে নেন অধিক মুনাফা লাভের জন্য যখন চিকিৎসা একটি সেবামূলক খাত হওয়া উচিত। এই প্রসঙ্গে প্রশাসন কেন নির্বিকার? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা সবাই জানি, পুরো সিস্টেম এমনভাবে দূষিত হয়েছে যেন কারো কিছু করার নেই।

এভাবে এদেশের সাধারণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। আর সবচাইতে বেশী হুমকিতে রয়েছে এদেশের শিশুরা, তারা অল্প বয়সেই বিভিন্ন ধরনের শারীরিক মানসিক সমস্যার মুখে রয়েছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষগুলো রাষ্ট্র থেকে, সমাজ থেকে পাচ্ছে এক নির্মম পৈশাচিক অবহেলা। যা এই মানুষগুলোর জীবন যে করে তুলছে দুর্বিষহ ও মারাত্মক সংকটাপন্ন।
সাধারণ মানুষের অসচেতনতা খাবারের ধরন সময় ও পরিমাণের ব্যাপারে অজ্ঞতা, ঔষধের দোকানদারের পরামর্শ গ্রহণের প্রবণতা, ঔষধ সেবনের বিষয়ে ব্যাপক অজ্ঞতা ও অসচেতনতা-অনেকাংশে দায়ী স্বাস্থ্য খাতের চরম বিপর্যয়ের পিছনে।

সর্বক্ষেত্রে ভেজালময় এদেশের রয়েছে সরকার, প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা প্রণয়ন ও সরকারী সংস্থা, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কমিটিসহ রয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে যে ভয়ঙ্কর খেলা সমাজে চলছে তা যেন কেউ দেখেও দেখছে না, সাধারণ মানুষ যেন অবহেলার পাত্র। এদের আপাদমস্তক সমস্যাগুলি আজ উপেক্ষিত। কেন সাধারণ মানুষকে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে মারাত্মক ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে? অথচ এই সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত আয় ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য খাত থেকে উর্পাজিত টাকায় দেশের সরকার, মানবাধিকার সংস্থা, আইন প্রয়োগকারীসংস্থা সহ সবার আমোদ প্রমোদ ও রাজকীয় জীবন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে থাকে তাদের ও তাদের আত্মীয় স্বজন, পাইক- পেয়াদার জীবন। সাধারণ মানুষের অমানুষিক কষ্ট তাদের কে ছুতেও পারে না। তারা ভাল খায়, ভালো পরে, তাদের থাকে না কোন লোড শেডিং এর যাতনা, আর্থিক অভাব, পানির অভাব, গ্যাসের অভাব, ছিনতাই হওয়ার ভয়, মশার উপদ্রব। ওরা সব সময় থাকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। ফলে কোন ময়লা আবর্জনা, কালোধোঁয়া, ধুলা-বালি তাদের গায়ে লাগতে পারে না। ফলে তারা বেঁচে থাকেদীর্ঘ কাল, সুস্থও থাকে। তারপরও তারা যার যার অবস্থান থেকে অত্যন্ত সুকৌশলে দেশের বারোটা বাজাতে পিছুপা হয় না। লুণ্ঠন করে দেশীয় সম্পদ ও টাকা, পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলে ঐশ্যর্যের পাহাড়। তাদের আরো চাই! আরো চায়!! আরো চায়!!!

উপরের বাস্তব ও বিভৎস্য এ চিত্র দেখার পরে আমি রীতিমত হতাশ ও নির্বাক, এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যে কি পরিমাণ কষ্টসাধ্য হবে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। তার পরেও বলব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও মানবতার খাতিরে আমাদেরকে অবশ্যই সম্পূর্ণ দুর্নীতিগ্রস্থ এ নষ্ট সিষ্টেম থেকে পরিত্রাণের উপায় খুজে বের করতে হবে।

প্রথমেই দেশকে ভেজাল খাদ্য মুক্ত করতে হবে। এজন্য সচেতনতার পাশাপাশি কঠিন আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই প্রধান ও প্রথম শর্ত। পাশাপাশি পরিবশে দূষণ রোধ করতে হবে যে কোন উপায়ে। কোন রকম ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না, বরং এসব ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডের মত বড় শাস্তির বিধান করে তা বাস্তবে রূপ দিতে হবে। তবে ধীরে ধীরে এগুলো কমে আসবে আশা রাখি। এভাবে ডাক্তার এবং ঔষধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবশেষে বলব সব ধরনের দূর্নীতি থেকে দেশকেমুক্ত করতে হবে কারণ দুর্নীতিগুলো একটি সাথে আরেকটি ওতপ্রোতঃভাবে জড়িত।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

April 2024
S M T W T F S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930