অতিপুষ্টি : অপুষ্টির আরেক রুপ

প্রকাশিত: ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২২

অতিপুষ্টি : অপুষ্টির আরেক রুপ

 

রিফাত জাফরীন

পারভীন, তূর্ণাকে ঘুম থেকে উঠিয়েই ওটস্ মুরগীর স্যুপের সাথে মিশিয়ে খাওয়াবে। তারপর মাখন দিয়ে ডিম ভেজে বাদামসহ খেতে দিবে।

এরপর কলা, আম এবং কমলার রস ফাঁকে ফাঁকে খাওয়াবে। লাঞ্চে ভাতের সাথে ওর জন্য মিষ্টি করে রান্না করা মুরগীর ৬/৭ টুকরা নিবে; ডাল, সবজি নিও যদি তূর্ণা খেতে চায়। না হলে দরকার নাই। বিকালে কাবাব আর চিকেন বল দিও, সাথে দুধ, সন্ধ্যায় ভারী খাবার দিও। নুডুল্স কিমা আর পনির দিয়ে বানিয়ে দিবে। রাতে রুই মাছের বড় দুই টুকরা দিবে ভাতের সাথে। ঘুমানোর আগে আবারও দুধ দিবে। তূর্ণার বয়স পাঁচ। সে ওভার ওয়েট, ডাক্তার ওর খাওয়া কমাতে বলছেন বার বার।

গোল্লা বাবুর অনেক স্বাস্থ্য। এক বছরের একটা বাচ্চা হলেও গোল্লাকে বেশিক্ষন কোলে রাখা ভীষণ কঠিন ব্যাপার। ওর মা গোল্লাকে ২৪ ঘণ্টা খাওয়ানোর উপরই রাখে। কিছুদিন আগে থেকে হঠাৎ গোল্লা আর চোখে কিছু দেখতে পারছেনা। গোল্লার ডাক্তার মাকে জানিয়েছেন, গোল্লার অন্ধত্বের কারণ ওর অতিপুষ্টি। গোল্লাকে খুব অল্প খাবার দিতে হবে, সম্ভবহলে দিনে রাতে বেশ কিছু সময় গোল্লাকে না খাইয়ে রাখতে হবে। শুধু, তাহলেই হয়তো গোল্লা আবার দেখতে পাবে। গোল্লার এ অন্ধত্বের কারণ তার অতিপুষ্টি!

বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি প্রাণীই খাদ্য গ্রহণ করে, যেখানে পুষ্টি প্রধান চালিকাশক্তির কাজ করে। মানুষসহ তাই প্রতিটি প্রাণীর খাদ্য গ্রহণ ছাড়া জীবন অচল। তবে সব খাদ্য সঠিক নয়, কারণ তা শরীরের জন্য উপকারী নয়। উপকারী খাদ্যগুলো শরীরের পুষ্টিচাহিদা পূরণের জন্য অপরিহার্য। উপকারী খাদ্য হলো সে খাদ্য, যেখানে পুষ্টি উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে থাকে এবং দেহের যাবতীয় পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে। এসকল খাদ্যকে সুষমখাদ্য বলে। সুষমখাদ্যে খাদ্যের সকল উপাদান সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। সুষমখাদ্য আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সুষমখাদ্য গ্রহণে মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

সুষমখাদ্যে পুষ্টির ৬টি উপাদান বিদ্যমান থাকে। এ উপাদানগুলো হলো : কার্বহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন বা আমিষ, ফ্যাট বা চর্বি, ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ, খনিজলবন ও পানি।

কার্বহাইড্রেট বা শর্করা হলো এক ধরনের জৈব রাসায়নিক পদার্থ, যা কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বিত রুপ। এ জৈবযৌগকে সুগার বা চিনিও বলা হয়। এর প্রধান কাজ হলো শরীরে শক্তির যোগান দেয়া। কার্বোহাইড্রেট শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে থাকে। এক গ্রাম কার্বোহাইড্রেট সম্পূর্ণ দহনে ৪.০ ক্যালরি তাপশক্তি উৎপন্ন হয় এ তাপশক্তি মানুষকে কাজ করতে সহায়তা করে। এছাড়া; শর্করা, প্রোটিন ও ফ্যাটসংশ্লেষনেও ভূমিকা রাখে।

প্রোটিন বা আমিষ হলো অ্যামাইনো এসিডের পলিমারবেষ্টিত উচ্চভরবিশিষ্ট নাইট্রোজেনযুক্ত জটিল যৌগ। খাদ্যের ছয়টি উপাদানের মধ্যে প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন মূলত কোষ গঠনে সাহায্য করে। অঙ্গের গঠন, কার্যকারীতা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। মাছ-মাংস, দুধ-ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর প্রোটিন বিদ্যমান। একটি ডিমে প্রায় ৬(ছয়) গ্রাম পুষ্টি বিদ্যমান। উদ্ভিদ ও প্রাণীজ উভয় খাবারেই প্রোটিন থাকে। শিম ও শাক-সবজি, বাদাম ও বীজের মধ্যেও প্রোটিন থাকে।

ফ্যাট বা চর্বি হলো প্রাকৃতিক তৈলাক্ত পদার্থ, যা প্রাণীজ শরীরে স্তর আকারে বা ত্বকের নীচে অঙ্গের চারপাশে জমা থাকে। ফ্যাট বা চর্বি মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানগুলোর অন্যতম। মস্তিষ্কের শতকরা ৬০ শতাংশ ফ্যাট দিয়ে তৈরি। ফ্যাট দেহের সঠিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করে এবং শরীরকে বিভিন্নভাবে সুরক্ষিত রাখে, যদিও অনেকে মনে করে চর্বি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খাদ্য হিসেবে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষের দৈনিক ৫০ গ্রাম ফ্যাট প্রয়োজন।

স্বাভাবিক খাদ্যের মধ্যে যে উপাদানগুলো মানুষের বৃদ্ধি, পুষ্টি ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করে, তাকে ভিটামিন বলে। ভিটামিন মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত জরুরি। ভিটামিনের অভাবে মানুষের শরীরে নানা ধরনের রোগ হয়। আমাদের জন্য ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ডি, ভিটামিন-ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন দেহের বৃদ্ধি ঘটায় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ভিটামিন-ডি শরীরে অস্থি গঠনে সাহায্য করে এবং ভিটামিন-ই শরীরে অন্যান্য উপকার করার সাথে সাথে গর্ভপাত বন্ধ করতেও সাহায্য করে।

প্রতিদিনের খাদ্যে আমরা যে লবন ব্যবহার করি, এছাড়াও রয়েছে খনিজ লবন, যা শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। খনিজ লবন আমাদের দেহে শর্করা ও আমিষের মতো তাপ উৎপন্ন করে। দেহকোষ ও দেহ তরলের জন্যও খনিজ লবনের বিকল্প নেই। খনিজ লবনের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন, আয়োডিন, লৌহ, সালফার খাদ্যের সাথে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে এবং দেহ গঠনে সাহায্য করে। অস্থি, দাঁত, এনজাইম ও হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবন অপরিহার্য। খনিজ লবন স্নায়ু উদ্দীপন ও পেশি সংকোচন নিয়ন্ত্রণ করে। দেহের বিভিন্ন এনজাইম সক্রিয় রাখে বলেই দেহ গঠনে খনিজ লবনের গুরুত্ব অপরিসীম।

সুষম খাদ্যের দুইটি উপাদানের মধ্যে পানিও একটি উপাদান। মানবদেহের জন্য পানি অপরিহার্য। পানি ছাড়া আমাদের শরীর অচল। আমাদের শরীরের রক্ত, মাংস, হৃদপিন্ড, হাড়, দাঁত, মজ্জা, ত্বক সবকিছুর জন্য পানি অপরিহার্য। পানি মানুষসহ সকল প্রাণী ও জীবকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে বলে পানির অপর নাম জীবন। মানুষের অভ্যন্তরীন যাবতীয় কাজে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মানবদেহে রয়েছে ৬০-৭০% পানি। একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করতে হয়। মানুষের শারীরিক ক্লান্তি দূর করতে পানির বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না। পিপাসার্ত অবস্থায় পানি পান করলে মানুষের তৃষ্ণা নিবারন হয়। গাছ যেমন পানি না পেলে শুকিয়ে যায়, তেমনি পানি পান না করলে আমাদের শরীরের পুষ্টি সরবরাহ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়। সঠিক নিয়মে পরিমানমতো পানি পান না করলে আমাদের শরীরের পানি শুকিয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিকভাবে নির্গত হয় না, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন গড়ে সর্বনিম্ন ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। তা না হলে আমাদের শরীরের জারন-বিজারন ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।

খাদ্য গ্রহণ ছাড়া মানুষ কোনো শক্তি পায়না, কাজ করতে পারেনা। খাদ্য শরীরে শক্তি যোগায়। তাই সুষমখাদ্য গ্রহণ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সুষমখাদ্য দেহের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে, শরীরের ডায়েটকে সঠিক রাখে। স্বাস্থ্যকর খাবার শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষমখাদ্য যেমন শরীরের পুষ্টিমান নিয়ন্ত্রনে রাখে, শক্তি যোগায়, তেমনি ডায়াবেটিসসহ বিভিন্নধরনের রোগ নিয়ন্ত্রন ও প্রতিরোধে সাহায্য করে। সুষমখাদ্যের অভাবে শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগ বৃদ্ধি পায় এবং বিকাশ ব্যহত হয়। সুষমখাদ্যে, খাদ্যের সকল উপাদান বিদ্যমান থাকে বলে তা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সব মানুষের খাদ্যাভাস সমান নয়। বিভিন্ন প্রথা, প্রচলিত কুসংস্কার এবং পছন্দ মানুষের খাদ্যাভাসের ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে, কোনো বিশেষ প্রকার খাদ্য প্রহণ না করলে তার অভাবে দেহে পুষ্টিচাহিদার তারতম্য ঘটে এবং চাহিদা পূরণ না হলে শরীরে ঊনপুষ্টি দেখা দেয়। শিশুর খদ্যে নিয়মিতভাবে প্রোটিন ও ক্যালোরির অভাবে ক্যারাসমাস ও কোয়াশিওর কর রোগ দেখা দেয়। ভিটামিন-এ এর ঘাটতিতে জেরম্যালমিয়া, কোরাটোম্যালেশিয়া, রাতকানা, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি হয়। ভিটামিন-সি এর ঘাটতিতে স্কাভি রোগ হয়। আবার ভিটামিন-ডি এর অভাবে বড়দের অস্টিওম্যালেশিয়া এবং শিশুদের রিকেট রোগ দেখা দেয়। গর্ভবতী নারীদের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং কয়েকটি খনিজ পদার্থের অভাবে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয়।

অ্যামিনো এসিডের অভাবে দেহ গঠনের কাজ ব্যাহত হয়। সম্পৃক্ত এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের অভাব হৃদরোগ এবং চর্মরোগের কারন হয়ে দাঁড়ায়। খনিজ লবনের অভাবে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস অস্থিগঠন ও পেশিসংকোচনে ব্যাঘাত ঘটায়। শর্করা, আমিষ ও স্নেহ পদার্থের অসামঞ্জস্যতা অতিপুষ্টি বা ঊনপুষ্টি ঘটায়।

কিন্তু দেহে পুষ্টি নিশ্চিত করতে এবং সুষম খাদ্য সঠিক পরিমাণ ও নিয়মে না খেয়ে অতিরিক্ত পরিমানে গ্রহণ করলে আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। পুষ্টি নিশ্চিত করতে গিয়ে অতিপুষ্টি গ্রহণ করলে, তা আরেক ধরনের অপুষ্টি সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে অতিপুষ্টি হয় অপুষ্টির আরেক নাম।

চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর অতিপুষ্টির কারনে প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হচ্ছে। গবেষকরা মনে করেন অতিরিক্ত চিনি, লবন ও মাংস খাওয়ার কারনেই কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে প্রতিবছর। জাতিসংঘের তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে আক্রান্ত। এর বিপরীতে ২০০ কোটি মানুষ অতিরিক্ত পুষ্টিতে ভুগছে। প্রকাশিত গবেষনা থেকে দেখা যায়, ১৯৫টি দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষই প্রতিদিন ভুল ধরনের খাবার খায়। একই সাথে না বুঝে তারা স্বাস্থ্যকর খাবারও ভুলভাবে গ্রহণ করে। উদাহরন হিসেবে বলা যায়, বিশ্বে প্রতিটি মানুষের গড়ে যে পরিমান চিনি খাওয়া প্রয়োজন, এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি চিনি তারা মিষ্টিজাতীয় খাবারের মাধ্যমে শরীরকে দিচ্ছে। এছাড়া, প্রতিটি মানুষের জন্য যতটুকু লবন খাওয়াকে নিরাপদ মনে করা হয়, এর চেয়ে ৮৬ গুণ বেশি লবন তারা গ্রহণ করে।

১৯৯০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত খাদ্যাভাস ও নানা ধরনের রোগবালাইয়ের প্রবনতার ওপর করা এক গবেষনায় দেখা গেছে, খুব অল্প সংখ্যক মানুষই সুস্থ জীবনধারা বজায় রাখতে পারছে। আর এ জন্য তারা প্রতিদিন দানাজাতীয় খাদ্য, ফলমূল, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার খাচ্ছে।

আবার স্থূলতার কারনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত মারা গেছে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখের ওপর মানুষ। গবেষনাটির লেখক ওয়াশিংটন ইউনিভার্সির ইনস্টিটিউটের হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক ক্রিস্টোফার মুরের মতে, যেকোনো ধরনের শারীরিক হুমকির চেয়েও ভুলভাবে খাদ্যগ্রহণ বিশ্বে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটাচ্ছে। গবেষনায় দেখা গেছে, অতিমাত্রায় খাদ্য গ্রহণের কারণে উজবেকিস্তানে মানুষ মারা যাওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে এর ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে ইসরায়েলে (সূত্র এএফপি)। খাদ্যে এক বা একাধিক পরিপোষক না থাকলে অথবা অন্য পরিপোষকের সঙ্গে সঠিক অনুপাতে না থাকলে অপুষ্টি হয়, পুষ্টি ত্রুটিপূর্ণ হয়; একইভাবে এসব পরিপোষক বেশি থাকলেও তা অপুষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং পুষ্টিকে ত্রুটিপূর্ণ করে তোলে। খাদ্যোপাদানের আধিক্য অতিপুষ্টির নামে মূলত অপুষ্টিই সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে খাদ্যোপাদানে এক বা একাধিক দেহপরিপোষক দেহের চাহিদার তুলনায় অত্যধিক হয়ে অতিপুষ্টি বা ওভারনিউট্রিশন নামক অসুস্থতা তৈরি করে। এভাবে খাদ্যে ক্যালোরি, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের পরিমান বেশি হয়ে অতিপুষ্টি সৃষ্টি করে।

আমাদের দেশে অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারন হলো জনগণের মধ্যে খাদ্য বিষয়ে অজ্ঞতা। জীবনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন শৈশব, কৈশোর, গর্ভাবস্থা এবং প্রসূতি অবস্থাতেও যে বিশেষ ধরণের খাদ্য প্রয়োজন, সে বিষয়ে অনেকেই অজ্ঞ। বিভিন্ন ধরণের খাদ্যসামগ্রীর পুষ্টিমূল্য এবং রান্না করার সময়ে খাদ্যের পুষ্টিমান বজায় রাখার বিষয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে।

অপুষ্টির জন্য অসচেতনতার পাশাপাশি আর্থিক, অসচ্ছলতা, খাদ্যাভাস, কুসংস্কার, অতিসচেতনতা এবং সর্বোপরি অনেকক্ষেত্রে আর্থিক অতিসচ্ছলতাও অতিপুষ্টির নামে অপুষ্টির জন্য দায়ী। তাছাড়া, শরীরে রোগ সংক্রমণ ঘটলেও অনেক সময় খাদ্যগ্রহণের পরও পুষ্টি আত্তীকরণ হয়না। ফলে অপুষ্টি সৃষ্টি হয়।

সরকার শিশুদের অপুষ্টি প্রতিরোধে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। তারমধ্যে স্কুলে শিশুদের পুষ্টি বিসকিট সরবরাহ করা একটি অন্যতম উল্লেখযোগ্য সেবা। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি নিশ্চিতে ভাতা সহায়তা, দুগ্ধ প্রদানকারী মায়েদের দুগ্ধ ভাতাসহ, ছোট শিশুদের মায়েদের পুষ্টিভাতা প্রদানও সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত জনিত বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার পুষ্টি নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি ভাতা প্রদান করেও অসচ্ছলদের হাতে মাসিক হারে অর্থ প্রদানও এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ডেকেয়ারের ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন এবং ৬ মাস পর্যন্ত মাতৃত্বকালীন ছুটির অনুমোদনও শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

অপুষ্টিতো বটেই, অতিপুষ্টি নিরসনে সরকার সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। স্থূলতাসহ অন্ধত্ব, ডায়াবেটিস, কিডনি বৈকল্য এবং অন্যান্য আরো জটিল রোগব্যাধী সৃষ্টি হয় অতিপুষ্টির ফলে। অতিপুষ্টির কারনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও নষ্ট হয়ে যায়। কাজেই অতিপুষ্টির নামে অপুষ্টি বিষয়ে আমাদের সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। শুধু বেশি বেশি খাদ্য গ্রহণ করলেই হবে না, সঠিক পরিমিত এবং সঠিক, মাত্রায় খাবার নির্বাচন ও গ্রহণ করাই আসল কথা। কাজেই, শুধু সচ্ছলতা থাকলেই হবেনা, খাদ্য বিষয়ে সচেতন না হলে অপুষ্টির নামে অতিপুষ্টি কখনই নিরাময় করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে সবার আগে প্রয়োজন আমাদের সচেতনতা এবং পরিমানমতো সঠিক এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যাভাসের চর্চা করা। আমাদের পরিমিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভাস, সর্বোপরি আমাদের সচেতনতাই পারে কেবল অতিপুষ্টির নামে অপুষ্টি প্রতিরোধ করতে।
#
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, পিআইডি, ঢাকা।

লাইভ রেডিও

Calendar

November 2023
S M T W T F S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930