শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে জাফর ইকবালের ওপর হামলা হয়। সেখানে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দুদিনব্যাপী ‘ইইই ফেস্টিভ্যাল-২০১৮’-এর সমাপনী অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাফর ইকবাল। অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরি হাতে একজন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা করেন। এ সময় ইব্রাহিম নামে পুলিশের এক সদস্যও আহত হয়েছেন। হামলাকারীকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা, তার সঙ্গে থাকা আরেকজন পালিয়ে যায় । চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ছয় শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের নামে সারা রাত মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগে ২১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এর মধ্যে সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের (সিইই) শিক্ষার্থী আশিক আহমেদ হিমেল ও হামিদুর রহমান রঙ্গনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে । ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২ মার্চ ‘ইইই ফেস্টিভ্যাল-২০১৮’ উদ্বোধনকালে মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানান, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের যে ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে তিনি শঙ্কিত । র্যাগিংয়ের দায়ে দুই শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের শাস্তিকে সমর্থন করে জাফর ইকবাল বলেন, ‘যারা এ ধরনের কাজ করেছে, তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কোনো অধিকার নেই। যখন তাদের অপরাধ প্রমাণ করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, সেই শাস্তিটা গ্রহণ করে ওদের ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল । কিন্তু সেটা না করে তারা আন্দোলন করা শুরু করেছে । আন্দোলনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ছাত্রদের কষ্ট দিচ্ছে এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে বেয়াদবিও করেছে । বহিষ্কারের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় আইনে অভিযুক্তদের জেলে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন এই অধ্যাপক । এর একদিন পরই তার ওপর হামলা হলো ।
রোববার ভোর পাঁচটার দিকে ফয়জুরের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের কলিয়ার কাঁপন ইউনিয়নের জগদল গ্রামে অভিযান চালিয়েছে র্যাব। এ সময় ফয়জুরের চাচা আবদুল কাহারকে (৫০) আটক করা হয় বলে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য প্রিয়.কমকে নিশ্চিত করেছেন। অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর রহমানের মামা আব্দুর রহমান ও চাচা আব্দুল কাহারকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে ৩ মার্চ, দিবাগত রাত ১২ টার দিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের পাশের শেখ পাড়ার বাড়ি তল্লাশি করার সময় তালাবদ্ধ বাসার ভেতর থেকে ফয়জুরের মামা আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় বলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুর রহমান জানিয়েছেন ।
মামলার বিষয়ে ওসি শফিকুর রহমান সংবাদকর্মীদের জানান, হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনো কোন মামলা করা হয়নি । তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি ।
৩ মার্চ শনিবার রাত ১১টা ৫৮মিনিটে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রাশিদুল হাসান। তিনি জানান, বর্তমানে অধ্যাপক জাফর ইকবাল শঙ্কামুক্ত রয়েছেন ।
হামলার পর জাফর ইকবালকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে তাকে ঢাকার সিএমএইচে আনা হয়।
জাফর ইকবালের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রবিবার দুপুরে ড. ইয়াসমিন হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জাফরের ওপর হামলা হয়েছিল। আর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে তিনি নিজেই আমাকে ফোন করেছিলেন। ফোনে তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপরে একটি হামলা হয়েছে। আমি চাই না তুমি টিভি দেখে এই খবরটা পাও। আমার খুব ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ) হচ্ছে। আমাকে এখন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। তোমরা কোনো চিন্তা করো না’।”
জাফর ইকবালের স্ত্রী বলেন, ‘‘ঘটনার পরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ফোন করে বারবার তাঁর খোঁজখবর নিয়েছেন। তাকে রাতেই সিএমএইচে আনা হয়েছে। রাতে দেড়টা পর্যন্ত আমি হাসপাতালেই ছিলাম। আশা করছি এখানেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তাকে বিদেশে নেবার কোনো দরকার হবে না। কারণ এখানকার চিকিৎসার ওপরে আমার আস্থা আছে। আর জ্ঞান ফেবার পরে জাফর আমাকে বলেছেন, ‘ছাত্রদের খবর দাও, তারা যেন উত্তেজিত না হয়’।’’
নিরাপত্তার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘‘আমাদের দুজনের ওপরই নানা রকম হুমকি ছিল। কাফনের কাপড় পর্যন্ত পাঠানো হয়েছে। দুই বছর ধরে পুলিশ জাফর ইকবালের নিরাপত্তার জন্য তাঁর সাথে আছে। মাঝে-মধ্যে জাফর পুলিশকে বলত, ‘তোমরা চলে যাও।’ আর গতকালের ঘটনার সময়ে জাফর ইকবালকে বাঁচাতে গিয়ে পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। এখানে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি ছিল বলে আমি মনে করি না।”
রবিবার জাফর ইকবালের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সিএমএইচের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, হামলাকারী অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের শরীরে ছয়টি স্থানে আঘাত করেছিলেন। জাফর ইকবালের কনসালট্যান্ট সার্জন মেজর জেনারেল মো. মুন্সি মজিবুর রহমান বলেন, ‘জাফর স্যারের মাথায় চারটি, পিঠে একটি ও বাঁ হাতে একটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে । অর্থাৎ তার পুরো শরীরে মোট ছয়টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।’
মুজিবুর আরও জানান, রবিবার সকাল ৯টায় জাফরের শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সব পরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন, তিনি সম্পূর্ণ আশঙ্কামুক্ত ।
সংবাদটি শেয়ার করুন