৭ই মার্চ ২০২১ ইং | ২২শে ফাল্গুন ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০১৯
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যামামলায় তিন জনের মৃত্যুদণ্ড ।
রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার রায় ওই তিন আসামিকে দণ্ডিত করার পাশাপাশি বাকি আট আসামিকে খালাস দিয়ে সোমবার রায় দেন ।
দণ্ডিতরা হলেন রাজশাহীর কাটাখালি পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি আরিফুল ইসলাম মানিক, আবদুস সামাদ পিন্টু ও সবুজ শেখ।
এর মধ্যে সবুজ শেখ পলাতক রয়েছেন। অন্য দুজন রায়ের সময় আদালতে ছিলেন।
দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে পাঁচ বছর আগে অধ্যাপক শফিউল কুপিয়ে হত্যার পর ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দিকেই ছিল সন্দেহের তীর।
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপককে ক্যাম্পাসের পাশে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়ির সামনে হত্যার পর আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে খোলা ফেইসবুক একাউন্টে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকারের বার্তাও এসেছিল।
২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের তদন্তও সেদিকে এগোচ্ছিল। পরে র্যাবের মাধ্যমে তদন্তের বাঁক বদল ঘটে।
র্যাব ওই বছরই যুবদল ও ছাত্রদলের দুই নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করে, বিভাগের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের প্রতিশোধ নিতে শফিউলকে হত্যা করা হয়।
নাসরিন আক্তার রেশমা নামে ওই সেকশন অফিসারের স্বামী হলেন দণ্ডিত পিন্টু। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। আর বেকার যুবক সবুজকে এই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা হয় বলে র্যাবের ভাষ্য।
মানিক রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার চোরাচালান, বালুমহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি নেতাদের ভাড়াটিয়া হিসাবে কাজ করতেন বলে পুলিশের ভাষ্য। পিন্টুর সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় যুক্ত হন তিনি।
র্যাব জানায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলে পিন্টু তাকে অনুসরণ করেন এবং মোবাইল ফোনে তার গতিবিধি অন্যদের জানান।
অধ্যাপক শফিউল ইসলাম হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাবের অভিযানে গ্রেপ্তার ছয়জন
সেদিন মোটর সাইকেলে এক সহকর্মীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছিলেন শফিউল। ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুরে সহকর্মীকে নামিয়ে দিয়ে চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। মহাসড়ক থেকে ২০০ গজ দূরে বাড়িতে যেতে কাঁচা রাস্তায় নামার পর তিনি হামলার মুখে পড়েন।
শফিউলের ছেলে জঙ্গিদের দায়ী করে গেলেও র্যাবের বক্তব্যের পর তাদের দেখানো পথেই এগোয় পুলিশের তদন্ত।
২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
তখন তিনি বলেছিলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা রেশমার সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে অধ্যাপক শফিউলকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর ফেসবুকে দেওয়া দায় স্বীকার করে আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশের স্ট্যাটাসের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
অভিযোগপত্রে আসামির তালিকায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, পিন্টুর স্ত্রী রেশমার নামও ছিল।
তখন আটক হওয়ার পর রেশমা ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। তবে রায়ে তিনি খালাস পেয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনতাজুল হক বাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রারের করা এই মামলায় গত ১৩ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছিল। এ মামলায় ৩৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায় দিল।
অন্যদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যাকাণ্ডের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তার ছেলে মৌমিন শাহরিদ।
সোমবার রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, অসৌজন্যমূলক আচরণের মতো ‘ঠুনকো’ কারণে তার বাবাকে হত্যা করা হয়নি । এর পেছনে অন্য কিছু রয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লেখক-ব্লগার-শিক্ষকদের উপর জঙ্গিদের চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর অধ্যাপক শফিউলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রথমে পুলিশের তদন্তও জঙ্গিদের দিকেই এগোচ্ছিল। পরে র্যাব ছয়জনকে গ্রেপ্তারের পর দাবি করে, বিভাগের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক’ আচরণের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।পরে পুলিশের তদন্তও সেদিকে যায়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মৌমিন শাহরিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে এত ঠুনকো কারণে হত্যা করা হতে পারে না। আমার মনে হয়েছে এতটা অগভীর না এ খুনের কারণ।
তদন্তে খুনের সঠিক উদ্দেশ্য বা কারণ যৌক্তিকভাবে উঠে আসেনি। মামলাটি আরও গভীরভাবে তদন্ত করা প্রয়োজন।
Corporate Office:
6/A Eskatan Garden
Dhaka, Bangladesh.
Mobile: 017111-66826
Email: mansoumit@yahoo.com
Helpline - +88 01719305766