
সদরুল আইনঃ
বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্ক ও অনলাইন জুয়া নিয়ে প্রেমিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন রুফি উরফি জিয়ার (৩৭) সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
দুপুরে রাজধানীর বংশাল থেকে জিয়াউদ্দিন রুফিকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত হিমুর আত্মহত্যার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) রাজধানীর উত্তরার নিজ বাসায় জনপ্রিয় অভিনেত্রী হুমায়রা নুসরাত হিমু আত্মহত্যা করেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
এ ঘটনায় হিমুর খালা বাদী হয়ে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-২।
পরে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত মধ্যরাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর বংশাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আত্মহত্যার প্ররোচণার দায়ে অভিযুক্ত উরফি জিয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। তিনি সূত্রাপুরের মোহাম্মদ ইকবালের ছেলে।
প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে র্যাবকে অভিযুক্ত জানায়, ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোন এর সাথে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা জনিত কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর সাথে ভিকটিম হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সাথে জিয়াউদ্দিন এর বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে গ্রেফতারকৃত জানায়।
পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিবাহ করলেও হিমুর সঙ্গে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং গত ৩৪ মাস আগে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়।
এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন ভিকটিমকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো বলে জানায়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হতো।
এছাড়াও বিগত ২/৩ বছর ধরে ভিকটিম হিমু বিগো লাইভস অ্যাপসে অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমান অর্থ অপচয় করেছে বলে গ্রেফতারকৃত জানায়। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত আরও জানায়, বৃহস্পতিবাপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৩টার সময় গ্রেফতারকৃত জিয়া হিমুর উত্তরার বাসায় আসে। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিমু ও গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায় ভিকটিম ভাঙচুর করে।
ভিকটিম হিমু বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে রুমের বাহিরে থেকে একটি মই এনে রুমের সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সাথে পূর্ব থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়।
তবে হিমু পূর্বেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালেও তিনি পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও পূর্বের ন্যায় ভিকটিম আত্মহত্যা করার ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি।
কিন্তু ভিকটিম হিমু একটু পর বেধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এসময় তিনি পাশের রুমে থাকা ভিকটিম হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনেন। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামান।
এরপর গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিম হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন ‘ও’ লেভেল শেষ করে টেক্সটাইল ক্যামিকেলের ব্যবসা করতেন। ঘটনার দিন ভিকটিম হিমুকে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করার পরে তিনি ভিকটিমের ২টি আইফোন ও ব্যবহৃত গাড়ি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
পরবর্তীতে তিনি ভিকটিমের গাড়ি উত্তরার বাসার পার্কিং এ রেখে দেন এবং ভিকটিমের মোবাইল ফোন ২টি বিক্রির উদ্দেশ্যে রাজধানীর বংশাল এলাকায় পালিয়ে যান। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।