ঢাকা ১৩ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


আকাল পাঁচালি

redtimes.com,bd
প্রকাশিত জুন ১৩, ২০২৩, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ণ
আকাল পাঁচালি

 

আসাদ মান্নান

প্রশান্তির স্বপ্নকুঞ্জে একজোড়া কপোত-কপোতি
শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখছে, আহা কী মধুর স্বপ্ন! তারা
বাতাসের হাত ধরে একদিন আকাশে উড়বেই,
উড়ন্ত ডানার নিচে লাল-সবুজের মানুষেরা
হাওয়াকে জড়িয়ে বুকে একদিন মাথা উঁচু করে
দাঁড়াবে অকুতোভয়ে আপন শক্তিতে ; বাস্তুচ্যুত
প্রতিবেশী রোহিঙ্গারা শুধু নয়– দূর থেকে দূরে
পৃথিবীর যে-কোনও দুর্যোগে ওরা ত্বরিতগতিতে
সাহায্যের হাত নিয়ে ছুটে যাচ্ছে –শামুকের মতো
গুটিমেরে নিশ্চল থাকেনি! সেবা ও শুশ্রূষা নিয়ে
বিপণ্নের পাশে সাহসী সৈনিক হয়ে দাঁড়িয়েছে :
নিবিড় মমতা জলে অশান্তির আগুন নিভায়
উদ্বাস্তু শিশুর মুখে গেঁথে দেয় পূর্ণিমার হাসি
মায়ের স্নেহের মতো ধরে আছে শান্তির পতাকা।
২.
সুবর্ণ নদীর ঘাটে বাঁধা আছে বীর বাঙালির
অবিনাশী গৌরবের বিজয়ের সেই নৌকাখানি,
নূহের কিস্তির মতো ঝড়ে ও ঝঞ্ঝায় যে-নৌকায়
রক্তের সমুদ্র থেকে জন্মনেয়া রবীন্দ্রনাথের
আমার সোনার বাংলা চিরদিন নিরাপদ থাকে,
তাঁর শুভ কল্যাণীয় হাত ধরে দুঃসময়ে যেন
নির্বিঘ্নে দুর্গম গিরি মরু আর অকূলদরিয়া
এ দেশের মেহনতি জনগণ পাড়ি দিতে পারে।
যে তিনি পিতার মতো দেশ ও দেশের মানুষকে
শর্তহীন ভালোবেসে অবিশ্বাস্য পরম নিষ্ঠায়
বহুবিধ কর্মযজ্ঞে নিরন্তর মশগুল আছেন–
ভোগে নয় ত্যাগে তিনি অনন্য একক ; তাঁর মতো
এমন কেউ কি আর একজন আছে? কেউ নেই–
যদি থাকে দয়া করে সামনে আসো কাগজেকলমে।
৩.
এটা কোনো স্তুতি কিংবা স্তাবকতা নয় — তাঁর মতো
প্রকৃত দরদী মনে সৎ পথে সঠিক নিয়মে
কেউ তো এমন করে আগে দেশটাকে এগিয়ে নেয়নি–
পারেনি এগিয়ে নিতে; সবাই খেয়েছে লুটেপুটে,
নিজের আখের তারা বেশ করে গুছিয়ে নিয়েছে;
চোরের মায়ের মতো বড় গলা নিয়ে ওরা কারা
মিথ্যারজাহাজে চড়ে স্বপ্নে দেখে মগেরমুল্লুক?
ওদের তাড়ানো ছাড়া এ মুল্লুকে ফসল হবে না।
কী অবাক কান্ড দেখি : যত সব মিথ্যাচারী খুনী
ওঁৎপেতে বসে আছে ; নিজেদের কুৎসিত চেহারা
আয়নায় না দেখে ওরা বারবার মুখোশ পাল্টায় ;
মৃত্যুকে উপেক্ষা করে অন্ধকারে এ নৌকার হাল
যাঁর হাতে ধরা আছে তিনি এ মাটির আলোকন্যা,
তাঁর বুক আমাদের স্বতোজ্জ্বল আলো নিকেতন।
৪.
অন্ধকারে সহায় সম্বলহীন স্বজন হারানো
দুঃখিনীকে তাঁর মতো এত আলো এত ভালোবাসা
বলো, কে দিয়েছে আর?এর আগে কাউকে দেখিনি।
শ্রেণী- গোত্র-ধর্ম – জাত সকল কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে
সবাইকে জড়িয়ে বুকে তাঁর এই দীর্ঘ পথ চলা
কুসুমে আস্তীর্ণ নয়,বরাবরই কন্টকে আকীর্ণ;
মৃত্য ভয় জয় করে তিনি আজ জ্যান্ত ইতিহাস :
ঝড়াক্রান্ত স্বপ্নদ্বীপে কুয়াশায় তিনি বাতিঘর।
জঙ্গী আর জানোয়ার অশান্তির আগুন নাচাতে
বিষাক্ত সাপের মতো বিচিত্র বুলির ঝাঁপি খুলে
বসে আছে মহল্লায়, কখনো বা মিডিয়াপাড়ায় ;
ওদের থামাতে বাজে বাঙালির বুবুর বাঁশিটা
আগামী প্রজন্ম যেন তাঁর নামে শান্তি সমাবেশে
অদম্য আলোর স্রোতে ভেসে যায় মানব সাগরে।
৫.
অদৃশ্য মুখোশ পরে ষড়যন্ত্রী কুচক্রী ভিলেন
অভিনয় মঞ্চে এসে শুরু করে অভিনব পালা–
মিথ্যাচারে ডুবে আছে, বিষ ঢালছে মধুর হাঁড়িতে;
বেজন্মা জঙ্গির সঙ্গী বেতমিজ অসভ্য নারদ
পাতা ও পল্লবে ঘেরা আদমের বনে ঢুকতে চায় ,
কাল্পনিক গায়েবি ভবনে কী আরামে মা জননী
বিবি হাওয়া নব্য বাবা হুজুরের পা দু’ খানি টিপছে-
কী যে সুখ পরকিয়া খাঁটি মার্কিনীয় গণতন্ত্রে!
আঙুল বিহীন পায়ে ভর দিয়ে ইটের অরণ্যে
ময়ূর আসন নিয়ে কামবতী হরিণীর মতো
দিন যদি ফের আসে তবে তাকে কে আর থামাবে!
রঙিন খোয়াবে নাচা অর্বাচীন নির্বোধের হাত
যদি জনতার ভুলে কিংবা নানাবিধ ষড়যন্ত্রে
রাজদণ্ড পায়, তবে কি আগুনে জ্বলবে গণতন্ত্র?
৬.
সূর্যটাকে হাতে নিয়ে শিশুগাছ দাঁড়ায় উঠোনে;
নক্ষত্রের ছায়া তাকে তুলে নেবে মেঘের মিনারে —
এরকম স্বপ্ন নিয়ে কেউ হাঁটে রঙধনু পথে,
কেউ যায় বৃন্দাবনে, কেউ কেউ আরশিনগরে;
পেশাজীবী ব্যস্ত থাকে যথারীতি নিয়মমাফিক
কৃষকের মাঠ জুড়ে বইতে আছে আনন্দের হাওয়া,
শ্রমিকের ঘাম যেন রমণীর সুগন্ধী আতর;
মাঝি ও মাল্লার দল গাজী গাজী বলে বৈঠা মারে।
অথচ নির্মম সত্য: নিয়ত আড়ালে গায় গান
লালনের পোষা পাখি কায়াহীন খাঁচার ভেতর:
মানুষ মৃত্যুর কাছে অতি তুচ্ছ একটা রঙিন
বেলুন অথবা ঠুনকো খেলনা ছাড়া আর কিছু নয়;
তবুও নেশার ঘোরে দু’দিনের মায়াকুঞ্জে ঢুকে
প্রাচুর্যের মোহজালে ধরা খায় দস্যু বনহুর !

মশা ও মাছির মতো বিরক্তি উদ্রেককারী কিছু
কথাজীবী কথারাজ নাকি রাষ্ট্রযন্ত্র মেরামতে
বেশ দক্ষ কারিগর; ওরা কথা দিয়ে কথা ধরে,
উল্টাপাল্টা বোমা মারে ঘুমকাতুরে নাগরিক কানে;
যদিও তেমন কিছু নয়, বিনিময়ে যৎসামান্য
সালামি বা মুদ্রা পাওয়া যাবে; ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে
হয়তো বা মিললেও মিলিতে পারে কিছু রাজভোগ–
সঙ্গে বাড়তি খ্যাতি যশ সামাজিক গুরুত্ব প্রভাব ।
বিবিধ সংকট থেকে মানুষ যদি না মুক্তি পায়
তাহলে কথার গাছে কাজ নেই ফুল ফুটাবার ;
বরং সকলে মিলে ফুল হাতে ভালোবেসে যাও
একাত্তুরে শহিদের স্মৃতিসৌধে, শহিদ মিনারে
এবং টুঙ্গিপাড়ায় জনকের সমাধি ভূমিতে,
তাহলে সে ফুলে দেখবে জন্ম নিচ্ছে প্রকৃত মানব।

রাহুগ্রস্ত পৃথিবীতে এ কেমন নারকীয় যজ্ঞে
সারাক্ষণ মেতে আছে ওই দুর্বিনীত পরাশক্তি!
মানব বিনাশী এক অ্যামোবিক মরণ খেলায়
অবিরাম মেতে আছে মানবীর গর্ভ থেকে নয়
দানবীর গর্ভজাত কতিপয় সহিংস দানব–
ওদের থাবার নিচে অসহায় সভ্যতার শিশু
কী করে জলের মধ্যে খুঁজে পাবে প্রাণের জীবাণু —
মায়ের আঁচলে বেঁধে সমুদ্রকে বাতাসে উড়াবে।
মহাশূন্যে নৈঃশব্দ্যের হাহাকার; মৃতদের গানে
নক্ষত্রের মর্মরিত সুর; তবুও মানুষ কেন
বাঁচে তার মৌলিক ক্ষুধায়? এ ক্ষুধায় দেশে দেশে
ক্ষমতার যিশু জন্মে অস্ত্রে কিংবা ব্যালট পেপারে,
আমাদের শিশু নাকি জন্ম নেবে মার্কিন কাগজে–
উলঙ্গ শিশুর লিঙ্গে চুমু খাবে বেগম বাহিনী!

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031