ঢাকা ৯ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৪শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


আদালতে মামলার পাহাড় বড় হচ্ছে

redtimes.com,bd
প্রকাশিত মে ২৯, ২০২৩, ০৮:০২ পূর্বাহ্ণ
আদালতে মামলার পাহাড় বড় হচ্ছে

 

আদালতে মামলার পাহাড় বড় হচ্ছে ।

অনেক মামলা বছরের পর বছর সাক্ষ্যগ্রহণের অভাবে বিচারকাজ আটকে আছে।

মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের কারণের মধ্যে রয়েছে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ, দেরিতে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়া এবং সাক্ষী হাজির না হওয়া। ফলে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা।

সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সারা দেশের আদালতগুলোয় (সুপ্রিমকোর্টসহ) মামলার সংখ্যা ছিল ৩৬ লাখ। আর বর্তমানে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখে। সাড়ে চার বছরে মামলা বেড়েছে ছয় লাখ।

এই ৪২ লাখ মামলা নিরসনে দেশের আদালতগুলোয় বিচারক রয়েছেন মাত্র দুই হাজার।

এদিকে মামলাজট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সম্প্রতি মেহেরপুরে এক সভায় বলেন, দেশে প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার জট কমাতে বিচারক এবং আইনজীবীরা একসঙ্গে চেষ্টা করছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিমকোর্টে গত বছর ৮২ হাজার মামলা ফাইল হয়েছে। এর মধ্যে ৭৯ হাজার মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। অর্থাৎ নিষ্পত্তি হয়েছে শতকরা ৯৫ ভাগ।

প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশের ৪০ লাখ মামলার জন্য জজের সংখ্যা মাত্র দুই হাজার। এটা খুবই অপ্রতুল। আমরা চেষ্টা করছি নতুন বিচারক নেওয়ার। ইতোমধ্যে দু-একজন বিচারক নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এ বছরের মধ্যেই তাদের নিয়োগ দিতে পারব। এছাড়া ১০০ জজ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আশাবাদী, বিচারকরা পরিশ্রম করেই মামলাজট সুরাহা করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আইনজীবীদের আদালতকে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের অধস্তন আদালতে (জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও অধীনস্থ আদালত; ট্রাইব্যুনাল এবং সিএমএম ও সিজেএম আদালত ও অধীনস্থ আদালত) বর্তমানে ৩৬ লাখের ওপরে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মামলা। আর আপিল বিভাগে বিচারাধীন ২০ হাজার।

সারা দেশে অধস্তন আদালতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৩৪৫টি। আর বিচারাধীন ফৌজদারি মামলা ২০ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৫টি। হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলার মধ্যে দেওয়ানি ৯৭ হাজার ২১৪টি, ফৌজদারি ৩ লাখ ৪০ হাজার ৪৪৩টি, রিট ৮৩ হাজার ৮৬৫টি এবং আদিম ১১ হাজার ৫৪২টি।

সারা দেশে স্বত্ব এবং অন্য প্রকার মামলা বিচারাধীন ৭ লাখ ৫ হাজার ৬৭০টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ২ লাখ ৩৬৪টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ৩ হাজার ৬৭৭টি। পারিবারিক মামলা বিচারাধীন ৬০ হাজার ৯২৫টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ৫ হাজার ৭৩৪টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৯৫টি। অর্থ মামলা বিচারাধীন ১০ হাজার ২৫৪টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ৩ হাজার ২৩৫টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৯১টি। অর্থ ঋণ মামলা বিচারাধীন ৪০ হাজার ৮৭৯টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ২ হাজার ৩৪৫টি। আর উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে ৩২৫টি। নির্বাচনী মামলা বিচারাধীন রয়েছে ১ হাজার ২৫টি। পাঁচ বছরের অধিক সময় বিচারাধীন ৫৬টি। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ২০টি।

জানা যায়, ঢাকা জেলার ৪০টি আদালতে দেওয়ানি ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৪৫টি, আর ফৌজদারি ৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৭৯টি মামলা বিচারাধীন। ঢাকার দ্বিতীয় অর্থ ঋণ আদালতে ১২ হাজার ১৪৭টি মামলা ঝুলে আছে। তৃতীয় অর্থ ঋণ আদালতে ঝুলে আছে ১১ হাজার ৭০টি মামলা। চতুর্থ অর্থ ঋণ আদালতে অনিষ্পন্ন মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ৪৬৩টি। প্রথম অর্থঋণ আদালতে রয়েছে ৪ হাজার ১৮২টি মামলা। ৪টি আদালতে ৫ থেকে ১০ বছরের পুরোনো মামলা ১ হাজারেরও বেশি।

আলোচিত যত মামলা : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের রিভিউ, পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যা, পিলখানা হত্যা, শিশু রাজিব ও রাকিব হত্যা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা।

এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল, পার্বত্য শান্তি চুক্তির কয়েকটি ধারা অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে করা আপিল এবং মেয়ের হাতে পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলা। আর উচ্চ আদালতে (হাইকোর্টে) নুসরাত জাহান রাফি হত্যা, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, হলি আর্টিজান হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা, বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যা এবং রমনা বটমূলে বোমা হামলাসহ বেশকিছু মামলা ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ : মামলাজট নিরসনে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে জোরদার করার তাগিদ দিয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তিনি বলেন, জট নিরসনে দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। রাষ্ট্রপক্ষকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে মামলাজট কমিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে আইনও সংশোধন করা হয়েছে। তবে কাঙ্ক্ষিত সুফল এখনো মেলেনি। আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর লাগছে। রায় যখন মেলে, তখন প্রাসঙ্গিকতাই থাকে না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031