ঢাকা ১৫ই অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০শে আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই রবিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি


আদিতমারীতে গো-খাদ্যের বাজার লাগামহীন,খামার বন্ধের আশঙ্কা

sumon
প্রকাশিত মে ২৮, ২০২২, ০৪:২৯ অপরাহ্ণ
আদিতমারীতে গো-খাদ্যের বাজার লাগামহীন,খামার বন্ধের আশঙ্কা

মোঃমাহসিনুল হক,আদিতমারী,লালমনিরহাট: লালমনিরহাটের আদিতমারীতে লাগামহীনভাবে বাড়ছে গো-খাদ্যের দাম।বাজার নজরদারিতে আনতে না পারলে খামার বন্ধের আশঙ্কা করছেন খামারীরা।

এই অঞ্চলে গো-খাদ্যের মধ্যে অন্যতম গমের ভুষি,চালের কুড়া,ও রেডি ফিড।খামারিদের কাচা ঘাসের সংকট থাকায় তারা সম্পূর্ণরুপে এসব খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল।রাত পোহালেই এসব খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার হাটবাজার ও দুধের বড় ক্রেতা রেস্টুরেন্ট আর মিষ্টির দোকান।খামারিরা এসব বিক্রেতার কাছে প্রতি কেজি দুধ ৪৫ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।খামারিরা জানিয়েছেন প্রতি কেজি দুধ উৎপাদনে তাদের ৬০ থেকে ৭০ টাকা খরচ হচ্ছে।প্রতি কেজি দুধে তাদের ১৫/২০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

মাংসের জন্য গরু বিক্রি করতে মধ্যসত্বভোগীর মাধ্যমে হাটে বিক্রয় করতে হয়।এতে গরুর লাইভ ওয়েট ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে।গরুর লাইভ ওয়েট যদি ৪৫০ বা ৫০০ টাকা কিংবা খামারি পর্যায়ে প্রতি কেজি মাংস ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রয় হত তাহলে তারা লাভবান হতে পারত।তাছাড়া এমন প্রতিকূল পরিস্থিতে খামার টিকিয়ে রাখা দুষ্কর।

পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়ার সাথে ডিমের দামও কিছুটা বেড়েছে।ব্রয়লার মুরগির দাম হাল্কা।দুগ্ধ খামারিদের দুধ সংরক্ষণের কোনো উপায় না থাকায় তাদের কম দামেই দুধ বিক্রয় করতে হচ্ছে।বাজার পরিস্থিতে তারা অনেকটাই জিম্মি।এবং তারা দিশেহারা।তারা এমন পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান চান।

আদিতমারী বুড়িরবাজার এলাকার রোকেয়া ডেইরি ফিডস এন্ড ফার্মেসীর মালিক মোঃরাকিবুজ্জামান বলেন, একমাস আগেও পাইকারি বাজারে গোখাদ্যের অন্যতম উপাদান গমের মোটা ভুষির ৩৭ কেজির বস্তা ছিলো ১৩০০থেকে ১৪০০ টাকা।এখন সেই বস্তা কোম্পানি ভেদে ১৮০০ থেকে ২২০০ টাকা।চিকন ভুষির ৫০কেজির বস্তা ২২০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০০ টাকা।খুচরা বাজারে যার বাজার মূল্য অনেক বেশি।
রথের পারের খামারী নবিয়ার হোসেন বলেন,যেভাবে গো-খাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে লাভতো দূরের কথা লোকসান গুনতে হবে।তিনি আক্ষেপ করে বলেন বাজার মনিটরিং করার জন্য কি কেউ নেই?সারপুকুর পাঠানটারীর খামারী মহসিন বলেন,খাদ্যের দাম এভাবে যদি বাড়তে থাকে তাহলে গরু বিক্রয় করা ছাড়া উপায় থাকবে না।

সুত্র মতে,জেলার মধ্যে গো খাদ্যের বাজার ১০ কোটি টাকার উপরে।জেলার পাইকারি বাজারে গো খাদ্যের ভুষির দাম বেড়েছে আগের দামের চেয়ে ২০ লক্ষ টাকার বেশি।রেডি ফিড কোম্পানি গুলো তাদের সেলস এর তথ্য সরাসরি দিতে চায়নি।রেডি ফিডের মধ্যে তীর ব্রান্ডের পাঁচ উপজেলার মধ্যে তিন উপজেলায় প্রতি মাসে দেড়শত টন ফিড বিক্রি হয় বলে তারা জানিয়েছে।আলো,আফতাব, নারিশ,সগুনা,এসিআই গোদেরেজের ফিডের বিক্রয় বাজারের অন্যান্য ফিডের চেয়ে বেশি।এর বাহিরে কোয়ালিটি ফিড সহ আরো প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ টা রেডি ফিড কোম্পানি তাদের ফিড বাজারে বিক্রয় করছে।

কৃষি খামার নিয়ে কাজ করা একটি কোম্পানির মাঠ সংগঠক আব্দুল আহাদ বলেন,বাজারে গোখাদ্যের যে অবস্থা তাতে আগামী ৬ মাসের মধ্যে খামারিরা খামার বন্ধ করতে বাধ্য হবে।১৫ বছর আগে যেমন মানুষ এক টা দুইটা গরু পালতো গ্রাম্য পদ্ধতিতে,তেমন ভাবে পালন করবে।তাছাড়া লাভবান হতে পারবেনা।দুই কেজি দুধের জন্য যদি এক কেজি খাবার খাওয়ানো লাগে।দুই কেজি খাবারে সাথে,কুড়া,ভুষি,লেবার,পানি সব কিছুর খরচ যোগ করতে হবে।খড় বা কাচা ঘাসের উপর নির্ভর করে একটা দুইটা পালন করা সম্ভব।৪ টা ৫টা পালন করা সম্ভব না।

 

জেলার একমাত্র গমের মিল নয়নমনি ফ্লাওয়ার মিল।এই মিলের ব্যবস্থাপক আফজাল হোসেন বলেন,সব মিলে গমের চাহিদা বেশি।রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতিতে এমন সংকট হয়েছে।আমাদের ছোট মিল।আমরা প্রতিদিন ২০০ বস্তা ভূষি বিক্রয় করি।আমাদের ভূষি পাইকারি এখন ১৬৫০ টাকা।অন্যদের বেশি।ভূষির দাম আরো বাড়তে পারে।

কয়েকটি কোম্পানির রেডি ফিড ও ভূষির পাইকারি বিক্রেতা লিটন বলেন,আমরা কয়েকটি কোম্পানির ভূষি বিক্রয় করি।গড়ে ৪০০ বস্তা বিক্রয় হয়।আমরা ৩৭ কেজির মোটা ভূষি বিক্রয় করছিনা এক মাস থেকে।এত দাম দিয়ে কিনে বিক্রয় করতে পারবো না।তাই আমাদের মালিকের সিদ্ধান্ত মোটা ভূষি কেনা বেচা বন্ধ।প্রতিটা ভূষির মিল গেটেই প্রচুর দাম বেড়েছে।কে কিনবে ভূষি।আপাতত কম কম করে চিকন ভূষি বিক্রি করছি।৫০ কেজির প্রতি বস্তা এক মাস আগে দাম ছিলো ২২০০ টাকা,এখন ২৭৫০ টাকায় বিক্রয় করছি।আমাদের কোম্পানির ফিড প্রতি মাসে তিন উপজেলায় ১৫০ টন বিক্রয় হয়।
আদিতমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোশাররফ হোসেন বলেন,খাদ্যের দাম স্হানীয়ভাবে শুধু নয়, জাতীয়ভাবে বেড়েছে। তিনি বলেন,ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বা উপজেলা প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া আমরা এককভাবে বাজার মনিটরিং করতে পারি না।কোন দোকানে মনিটরিং করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, আগষ্ট ২০২১ইং আমরা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণসহ বাজার মনিটরিং করেছি। এখন বাজার মনিটরিং করার পরিকল্পনা আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি জানান, শীঘ্রই আদিতমারী উপজেলার বাজারগুলো মনিটরিং করা হবে।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম,এই জেলায় যেহেতু ভুট্টা চাষ হয়,তাই খামারিরা ভুট্টা পাতার সাইলেজ খাওয়াবে।আমরা সাইলেজ খাওয়াতে বলছি।গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর সহ আমরা বাজার মনিটরিং করছি।এটা আমরা প্রতিনিয়ত করছি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

October 2024
S M T W T F S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031