এসবিএন নিউজ: আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিক ভাবে কমে যাচ্ছে। বিশ্ব বাজারে ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন দরে তেল বিক্রি হচ্ছে। এখন এই তেল বিক্রি হচ্ছে ব্যারেল প্রতি ২৬ ডলারে।
তেলের অন্যতম ভোক্তা চীনের অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে পড়ায় চাহিদা কমে গেছে। রাশিয়াও আন্তর্জাতিক বাজারে তেল সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিবিসি’র বাণিজ্য বিষয়ক সংবাদদাতা অ্যান্ডু ওয়াকার বলছিলেন দরপতনের সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাজারে তেলের অতিরিক্ত সরবরাহ, এই মুহূর্তে বাজারে তেলের প্রচুর যোগান রয়েছে।
আমেরিকার জেল অয়েলের উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন এর একটি কারণ আবার সৌদি আরবসহ OPEC ভুক্ত দেশগুলো উৎপাদন কমায়নি। ইরানের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে ২০১৬ সালে সেই দেশের তেল ও আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকবে।
ফলে তেলের দাম আরো কমবে। গোল্ডম্যান স্যাক্স ও সিটি গ্রুপ সহ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন চলতি বছর বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানী তেলের দাম কমে ২০ ডলারেও আসতে পারে।
বিশ্লেষকরা অতি দ্রুত তেল এর দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই বলে মত দিয়েছেন। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার দাম কমানোর বিষয়টি নিয়ে শুধুই চিন্তা করছে, কার্যত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সর্বশেষ ২০১৩ সালের জানুয়ারীতে বাংলাদেশে জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানো হয় যখন বিশ্ব বাজারে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ১১০ ডলার। এই সময় দাম বাড়িয়ে লিটার প্রতি অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্টোল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
এরপর জ্বালানী তেলের দাম ধারাবাহিকভাবে কমে ৩০ ডলার নেমে এলেও বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া ঋণ সহ নানা খাতে দেনা পরিশোধের দোহাই দিয়ে মূল্য অপরিবর্তিত রাখে।
কিন্তু বর্তমান ধারাবাহিকভাবে তেলের দাম কমে যাওয়ায় তেল উৎপাদনকারী দেশ হিমশিম খেলেও বাংলাদেশ প্রতি ব্যারেল তেল ৪০ ডলারের বেশি দরে কেনার পরও প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ২০ টাকা, পেট্টোল ৩৫ টকা আর অকটেন ৪০ টাকা মুনাফা করছে।
বিপিসির তথ্য অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে অভ্যন্তরীণ বাজারে তেল বিক্রি করে মুনাফা হয়েছে ৫ হাজার ২শ’ ৬৮ কোটি টাকা।
তেলের দাম কমায় ভারত এ পর্যন্ত ৪ বার তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের দাম কমিয়েছে। সেই সাথে আরো অনেক দেশ তেলের দাম কমিয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, সিপিডি দেশের অর্থনীতিবিদ, জ্বালানী বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা জ্বালানী তেলের দাম কমানোর কথা বললে সরকার তা নাকচ করে দিলেও বর্তমানে কমানোর আশ্বাস দিচ্ছে।
কিন্তু করে নাগাদ তা বাস্তবায়ন হবে তা দেখার বিষয়। গ্লোবাল পেট্রোল প্রাইসেস এই কমের হিসাব অনুযায়ী সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তেলের সবচেয়ে বেশি দাম বাংলাদেশে এবং সবচেয়ে কম দাম মালদ্বীপে।
বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের আগে শুনানীর প্রয়োজন হয়। কিন্তু তেলের দাম নির্ধারণ হয় তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। অর্থাৎ কোন জটিলতা ছাড়াই সরকার দাম যখন তখন কমাতে পারে, তদুপরি বিপিসির ঋণ সমন্বয় হওয়া সত্বেও কেন দাম কমানো হচ্ছে না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
সম্প্রতি সিপিডির এক সেমিনারে তথ্য দেওয়া হয়, জ্বালানি তেলের দাম যতি ১০ শতাংশ কমানো হয় তাহলে জাতীয় প্রবৃত্তি বাড়বে দশমিক ৩ শতাংশ।
তৈরী পোশাক খাতে রফতানি বাড়বে দশমিক ৪ শতাংশ। ভোক্তার চাহিদা বাড়বে দশমিক ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কমবে দশমিক ২ শতাংশ, সরকারের সঞ্চয় কমবে দশমিক ৪ শতাংশ।
সরকার যদি তেলের দাম কমায় তবে ভোক্তার চাহিদা বাড়বে ফলে উৎপাদন বাড়বে, উৎপাদন বাড়ায় জাতীয় প্রবৃত্তি বাড়বে, আবার মুদ্রাস্ফীতির হার কমবে আর মুদ্রাস্ফীতি কমায় বিনিয়োগ বাড়বে।
ফার্নেশ অয়েলের দাম কমানো হলে বিদ্যুতের দাম কমবে। অকটেন ও পেট্টোলের দাম কমানো হলে সিএনজির ওপর চাপ কমবে। ডিজেলের দাম কমানো হলে বাস ভাড়া কমবে। সেচ এর খরচ কমবে ফলে কৃষিজ পণ্যের দাম কমবে। তবে এসব ভোক্তা পর্যায়ে কার্যকর হচ্ছে কিনা তা সরকারকেও মনিটরিং করতে হবে।
তাই সরকারের কিছু রাজস্ব কমলেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে দাম কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com