মোয়াজ্জেম চৌধুরী
ঘুরাঘুরি করা কার না ভাল লাগে। আমাদের দেশটা প্রাকৃতিক সুন্দর্য্য আর দর্শনীয় স্থান ও ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর। দেশ বিদেশী পর্যটকরা দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে দূর হতে দূর সব জায়গায় বিচরণ করেন নিজেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মাঝে হারিয়ে দিতে। প্রায়শই দর্শনীয় স্থান গুলোতে ঘুরে বেড়াই তার মধ্যে চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) রয়েছে। তাই আজ এই সৌন্দর্যের সামান্য লেখা আপনাদের জন্য।
পর্যটকদের জন্য এক অনন্য দর্শনীয় স্থান চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)।
চায়ের রাজ্যখ্যাত সবুজ শ্যামলে ঘেরা শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) এর প্রধান কার্যালয়। যা মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত।
চা গবেষণা ইনস্টিটিউট নিয়ে কিছু তথ্য
বিটিআরআই বাংলাদেশ চা বোর্ডের গবেষণা উইং চা শিল্পের জন্য ব্যাপক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক গবেষণা নিযুক্ত করা হয়। এটা গবেষণা এবং প্রযুক্তিগত কর্মীরা সহ ১৮২ কর্মীদের জন্য বিধান আছে।
এটি প্রাথমিকভাবে চা শিল্প প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে পাকিস্তান চা গবেষণা কেন্দ্র হিসেবে শ্রীমঙ্গল তার বর্তমান অবস্থানে ১৯৫৭ সালে বোর্ড দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট হিসেবে ১৯৭৩ সালে একটি পূর্ণাঙ্গ গবেষণা ইনস্টিটিউট রূপান্তরিত হয়।
আমার দেখা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর চা গবেষণা ইন্সটিটিউট
শ্রীমঙ্গল শহর থেকে রিকশায় মাত্র ৪/৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে চা বাগানের প্রবেশ করা মাত্রই মনে হবে সত্যি এ যেন এক ভিন্ন পরিবেশ ।
চারপাশে কেবল সবুজে ঘেরা মাইলের পর মাইল কেবল সবুজ আর সবুজ , কাটিং করা চা গাছগুলো এতো শৃঙ্খলভাবে বসে আছে যেন মনে হয় কোনো সবুজ মাঠ ।
মনে হবে কোনো দক্ষ শিল্পী যেন তার মনের মাধুরী মিশিয়ে স্তরে স্তরে সবুজকে সাজিয়ে রেখেছেন । চা গাছের ফাঁকে ফাঁকে একটি বিশেষ দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার ছায়া তরু , যার ডালপালা , শাখা-প্রশাখায় শুনতে পাবেন রঙবেরঙের পাখির কলকাকলি , শহরের কল- কারখানা, গাড়ির শব্দ ব্যস্ততায় কোলাহল অভ্যস্তদের কাছে এটিকে বর্ণাতীত শ্রুতিমধুর লাগবে ।
বাংলাদেশে মোট ৭টা টি ভ্যালী রয়েছে এর মধ্যে সিলেট বিভাগে রয়েছে ৬টি । এই ৬ ভ্যালীতে মোট চাবাগানের সংখ্যা ১৩৮ টি। শুধু শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ৩৮ টি চাবাগান এবং শ্রীমঙ্গলের পাশবর্তী এলাকা সহ চাবাগানের সংখ্যা হচ্ছে ৬০ টি। এ জন্য শ্রীমঙ্গলকে চায়ের রাজধানীও বলা হয় এতো চা বাগান আপনি যখন মাইলের পর মাইল চা বাগানের ভিতর দিয়ে চলবেন তখন আপনার মনে হবে বিশ্বের সকল সৌন্দর্য যেন আপনার সন্মুখে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) বাংলাদেশের চা গবেষণা কেন্দ্রটি পড়েছে শ্রীমঙ্গলের মূল শহর থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার ভিতরে। সংস্থাটিকে সংক্ষেপে সবাই বিটিআরআই বলে জানেন। শহর থেকে ১০ থেখে ১৫ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে সহজেই বিটিআরআই পৌছে যেতে পারেন।
বিটিআরআই ক্যাম্পাসেই রয়েছে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন অফিস। অফিস গেটে রিকশা থেকে নামামাত্রই চোখে পড়বে হরেক রকম ফুলের সমাহারে ভরা ২টি ফুল বাগান , একটি বিটিআরআই এর অপরটি চা বোর্ডের। গেটে অনুমতি নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করুন , ভিতরে দেখতে পাবেন ৫০/৬০ বছরের পুরোনো চা গাছ ।
চা ম্যানুফকচারিংসহ টি টেস্টিং ল্যাব, গবেষণা ফ্যাক্টরিসহ বাংলাদেশর একমাত্র ভেষজ উদ্ভিদের বাগান। রমেশ রাম গৌঢ় এর ৭–রঙ্গা চা (নীলকন্ঠ চা কেবিন।
বেড়ানো শেষে শরীর ক্লান্তি আসলে চলে যেতে পারেন বিটিআরআই সংলগ্ন রামনগরে চা শ্রমিক রমেশে রাম গৌড় এর আবিষ্কৃত সাত রঙ্গা চা- এর দোকান নীলকন্ঠ চা কেবিনে। রমেশ রাম গৌঢ়ের নীলকন্ঠ চা কেবিনে একই পাত্রে পাঁচরঙ্গা চা ছাড়াও আরো বেশ কয়েক রকমের চা পাওয়া যায় এক কাপ চা পান করলে দেখবেন আপনার শরীরে ক্লান্তি সরে গিয়ে অনেকটা সতেজতা ফিরে এসেছে । রমেশ রাম গৌঢ় ইতি মধ্যে তার গবেষনা চালিয়ে একই পাত্রে ৭-রঙ্গা চা আবিস্কারের কৌশল আয়ত্ব করেছেন যা পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয়।
বিশ্বের আর কোথাও এ পযন্ত একই পাত্রে ৭-রঙ্গা চা আবিস্কারের খবর পাওয়া য়ায়নি। ইতি মধ্যে রমেশকে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা লক্ষাধিক টাকা মাসিক বেতনে চাকুরী করার অফার দিলেও রমেশ নিজের দেশের আবিস্কার বাহিরে নিয়ে যাবেন না বলে সকলের অফার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
শ্রীমঙ্গলের চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই)
যেকোনো পর্যটকদের মন ভরিয়ে দিবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
কিভাবে যাবেন/আসবেন :-
সড়ক পথে ঢাকা হতে মৌলভীবাজারের দূরত্ব ২০৩ কিলোমিটার এবং রেলপথে ঢাকা হতে শ্রীমঙ্গল রেল স্টেশনের দূরত্ব ২৩১ কিলোমিটার। আপনি চাইলে সড়ক পথে আসতে পারেন আবার রেলপথেও আসতে পারেন। আসার পর শ্রীমঙ্গল থেকে রিকশাও করে চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) কেন্দ্রে পৌঁছে যাবেন।
লেখক
মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
কলামিস্ট, গবেষক, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মী।
সংবাদটি শেয়ার করুন