সৌরভ দত্ত, যুক্তরাজ্য থেকেঃ দেশ শেষবার গিয়েছিলাম ২০১৪ সালের এপ্রিলে । ২০ দিনের মাথায় ফেরত আসতে হয় প্রাণ ভয়ে । কারণ আমি বিজ্ঞানসম্মত যুক্তি দিয়ে লেখালেখি করে আসছি ২০০৯ সাল হতে । দেশে থাকতে পারিনি, মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের কারনে । আমাকে হুমকি দেয় নানা ভাবে । শত প্রতিকুলতার ভেতর সহায় হয় স্টুডেন্ট ভিসা । সেই ভিসাতেই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাই ২০০৯ সালে । এখানে এসে একটি ব্লগ পেজ ওপেন করি । পড়া-লেখার ফাঁকে ব্লগ চালাতাম, ব্লগে এমন সব অকথ্য ভাষায় কমেন্ট আসত, স্তম্ভিত হয়ে যেতাম মানুষের ভাষার প্রয়োগ দেখে । কমেন্ট-এ এসব লেখলে সামনে পেলে শকুনের মরা গরু খাওয়ার মতো খেয়ে নেবে উগ্র মৌলবাদ বিশ্বাসীরা । পড়ার চাপে সময় দিতে পারিনা বলে একটি সময় ব্লগপেজ ডিলিট করে দেই । মাঝে-মাঝে সময় পেলে কয়েটি পোর্টালে লেখা পাঠাই । নিজ নামে আবার কখনো ছদ্মনামে । ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চ যখন শাহবাগে শপথ নিচ্ছে, তখনও শিশুরা বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রজন্ম চত্বরে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে কণ্ঠ মিলিয়েছে । তারই ধারাবাহিকতায় আমি যুক্তরাজ্যে সংগঠিত করি একদল তরুণ যুবক ।
খুবই কম সময়ের মধ্যে আমরা রাস্তায় অবস্থান নেই বাংলাদেশে মৌলবাদ এর বিপক্ষে । রাজাকারদের ফাঁসির দাবি জানাই আন্তর্জাতিক ভাবে । আমাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন । চিন্তা ও চেতনায় ৭১কে লালন করি । বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। পাঠ্যপুস্তকের ইতিহাস বিকৃতি আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি; আজকের সাম্প্রদায়িকীকরণ তাদেরও ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না । গণজাগরণ মঞ্চের একজন কর্মী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, একটি গণআন্দোলনের এর চেয়ে ফলপ্রসূ কোনো প্রভাব থাকতে পারে না । গণজাগরণ মঞ্চ গণমানুষের শক্তি। গণজাগরণ মঞ্চের সবাই কর্মী।
সর্ব শেষ যখন জানতে পারি, সিলেটে অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল স্যারের ওপর প্রাণ নাশের হামলা করেছে, দেশে ফোন করতে ভয় হচ্ছিলো । এই হয়ত শুনব আমরা স্যারকে হারালাম । রাতের বেলায় টিভিতে বাংলা সংবাদে দেখি স্যারকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে নেয়া হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে । শঙ্কা তখনও কাটেনি স্যারের অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে মনে করে পায়চারি করে রাত কেটেছে । স্থানীয় সময় (৪মার্চ) সকাল ৮.৩০ টার সংবাদে দেখতে পেলাম প্রধানমন্ত্রী স্যারকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন, ডাক্তার বললেন স্যার সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত ।
এমন বড় মাপের ব্যক্তিদের পুলিশ প্রহরায় হামলা হলে দেশে, মাতৃভূমি , জন্মমাটি আমরা সাধারণ লেখক কি কখনো দেখতে পারবনা ? আর কতটা রক্তের বন্যা হলে শুদ্ধভাবে মুক্ত হবে মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িক, জঙ্গিবাদ থেকে ? আমার মতো দেশের ছেলে মাতৃভূমিতে পা রাখতে পারবে না ? আমি কী দেখবনা শান্তিময় জননিরাপত্তার সোনার বাংলা ?
সংবাদটি শেয়ার করুন