ফেসবুক থেকে নেয়া, চন্দ্রশিলা ছন্দাঃ প্রকৃতিকে অস্বীকার করে জন্ম নয় কোন প্রাণীর। আর প্রকৃতিই লিঙ্গভেদ করেছে তার সৃষ্টিকে ধরে রাখতে বা বৃদ্ধি করতে। দৃৃশ্যে-অদৃশ্যে জীবকুল মানেই পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ। তাই মানবকুলে নারী পুরুষের বৈশিষ্টগত পার্থক্যকে অস্বীকার করা বা তর্কে হারজিতের কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা। আমি মনে করি না, আমি নারী তাই সৃষ্টিগতভাবে আমি দুর্বল। হ্যা, পুরুষের তুলনায় শারীরিকভাবে নারী দুর্বল হতে পারে। একটা সিংহের কাছে যেমন হয় পুরুষেরাও। সেটাও আরেক ধরণের প্রকৃতিগত ব্যাপার। কিন্তু পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষ যদি নারীকে অবজ্ঞা না করে, ভেদাভেদ সৃস্টি না করে নারীকে নারীর মত চলতে বলতে কাজ করতে বাঁচতে দিতো, তাহলে নারী কখনোই কোন অংশেই কম হতো না। তবে প্রকৃতিগত কিছু বাধা নারী জীবনে আছে এবং অনাদিকাল থাকবে। যেমন নারীর ঋতুকালিন সময়। আবার গর্ভাবস্থা। গর্ভবতী কোন নারী কি দৌড়ে, বা ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করতে পরবে? পারবে না। কিন্তু পুরুষরা এই সুবিধাগুলো প্রকৃতি প্রাপ্ত।তাদের কোন বাধা নেই কোন কিছুতেই। সে ক্ষেত্রে নারীকে অপেক্ষা করতে হয়। অথবা ছাড় দিতে হয়। কিন্তু কখনো না কখনো নারী চায়লে ঠিকই তা পুষিয়ে ওঠে।
সুতরাং আমি নারী বলে কেন আমি হীনম্মন্যতায় ভূগবো? তবে হ্যা, লিঙ্গবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে এখন যখন মানবতাবাদ সব কিছুর উর্দ্ধে, তাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। মানবতার পক্ষে সোচ্চার আমি নিজেও। কিন্তু তারমানে এই নয় যে আলাদাভাবে আমি আমার নারীত্বকে অস্বীকার করবো। নারী বলে কুন্ঠিত বা লজ্জা বোধ করবো। পুরুষবাদ কিংবা নারীবাদ সমাজেরই সৃষ্টি। এবং তা পুরুষ শাসিত সমাজের নগ্ন একটা রূপ। নারীকে দাবিয়ে রাখা কিছু পুরুষের একটা কটুকৌশল মাত্র। এখন এই রশি টানাটানির খেলায় আমি নারী হয়ে যদি নারীর পক্ষে না থাকি তো সেইটাই তো বরং লজ্জার। আর নারীর পক্ষে অবস্থানের কারণে কেউ আমাকে নারীবাদী বললে তাতে গা-জ্বালার কিছু আছে বলেও আমি মনে করি না। বরং কখনো কখনো যখন দেখি বা শুনি, নারীরাই নারীর শত্রু, সেখানে আমার সাথে নারীদের বন্ধুত্ব তুলনা মুলক বেশি ভালো, শাশুড়ি ননদের সাথে মিষ্টি সম্পর্ক এইটাতে একধরণের প্রগাঢ় শান্তি পাই। তাই আমি অকপট বলতে পারি, হ্যা, আমি নারীবাদী। তারমানে এই নয়, পুরুষ বিদ্বেষী। বিদ্বেষ যা আছে, তা অমানবিকতায়। সেটা নারীর সাথে নারীর অমানবতা হোক, পুরুষে পুরুষে হোক বা নারী পুরুষে হোক। অথচ এই সমসজেরই উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত বহু নারীকে দেখি,নারীর জন্য কাজ করছেন। অথচ তাঁদেরকে নারীবাদী বললে বেশ চটে যান! তারা নারীবাদে কী লজ্জিত হন? নাকি লিঙ্গ বৈষম্যে? কিন্তু লিঙ্গ বৈষম্যকে কী গায়ের জোরে অস্বীকার করা যায়? কেউ কেউ করলেও আমি করি না।
একথা ঠিক যে, কবি-মহিলা কবি, ডাক্তার-ডাক্তারনি শুনতে ভালোলাগে না। শুধু তাই নয়, এভাবে বললে মেধাকেও আলাদা করে দেয়া হয়। সে অর্থে তো নারী প্রথমে মানুষ, পরে মেয়ে মানুষ এটা যেমন সত্য। তেমন পুরুষও তাই। প্রথমে মানুষ।পরে পুরুষ মানুষ।
সংবাদটি শেয়ার করুন