সদরুল আইন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমির হোসেন আমু গতকাল আকস্মিকভাবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।
এই প্রস্তাব রাজনীতির অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। আমির হোসেন আমুকে এমনি সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা সরব দেখা যায়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। যদিও ১৪ দলের সমন্বয়ক কিন্তু ১৪ দলের আলাপ-আলোচনা, বৈঠকগুলোতে তাকে খুব একটা পাওয়া যায়নি।
সেই তিনি কিনা জাতিসংঘের প্রতিনিধির তত্ত্বাবধানে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করতে বিএনপিকে আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়েছেন এই প্রবীণ নেতা।
তিনি বলেছেন যে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের প্রতিনিধি আসুক। আমরা আলোচনা করে দেখতে চাই কিভাবে সবাই মিলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা যায়। সেটি একমাত্র আলোচনার মাধ্যমেই সুরাহা হতে পারে, অন্য কোনভাবে নয়।
১৪ দলের এক জনসভায় আমির হোসেন আমু এই মন্তব্য করেন। তার মন্তব্য ঘিরে রাজনীতিতে চলছে নানামুখী আলোচনা।
আমির হোসেন আমু রাজনীতিতে কোন অনাহুত নন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি একজন পরীক্ষিত রাজনৈতিক নেতা। রাজনৈতিক কৌশলে তার চেয়ে পারদর্শী নেতার সংখ্যা বাংলাদেশে আর এই মুহূর্তে আছে কিনা তা ভেবে দেখার বিষয়। তিনি হঠাৎ করেই জাতিসংঘের বিষয়টি আনলেন কেন এবং বিএনপির সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবই বা দিলেন কেন? এই প্রশ্ন এখন রাজনীতিতে নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে।
আমির হোসেন আমুর এই বক্তব্যের পর আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, দেশে এরকম কোনো পরিস্থিতি হয়নি যে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনা হতে হবে।
আমির হোসেন আমুর এই বক্তব্যের পর আজ আওয়ামী লীগের আরেক জন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন যে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। এই সমস্ত বক্তব্যের ফলে এক ধরনের প্রশ্ন রাজনীতির অঙ্গনে এসেছে। তা হলো আওয়ামী লীগ কি এখন বিএনপির সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী?
কদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, কিসের সংলাপ? যারা মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে তাদের সঙ্গে সংলাপ করতে গেলে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায়। তিনি সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বরং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার কথা বলেছেন।
কিন্তু তার এই বক্তব্যের বিপরীত ধারায় অবস্থান নিলেন আওয়ামী লীগের অন্তত দুইজন নেতা। তবে আমির হোসেন আমুর বক্তব্যটি রাজনীতিতে বিভিন্ন ভাবে আলোচনার দাবি রাখে। গতকালই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সাথে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকহয়। এর আগে পিটার ডি হাস কথা বলেন আওয়ামী লীগের দুজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকের সাথে।
এই সময়ে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে যে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের একটি প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে উত্থাপিত হয়েছে। এই প্রস্তাবের বিস্তারিত জানা না গেলেও তখনই জাতিসংঘের বিষয়টি নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা শোনা গিয়েছিল। এরপর পরই আমির হোসেন আমুর এ বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ।
একটা সময় ছিল যখন আমির হোসেন আমু ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন রাজনীতিবিদ। প্রধানমন্ত্রী যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তার সঙ্গে পরামর্শ করতেন।
প্রধানমন্ত্রী যেকোনো রাজনৈতিক স্পর্শকাতর জটিল কঠিন সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব আমির হোসেন আমুর ওপর তুলে দিতেন। কিন্তু এক-এগারো দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। এক-এগোরোতে সংস্কারপন্থী হয়ে মাইনাস ফর্মুলা যারা দিয়েছিল তাদের অন্যতম ছিলেন আমির হোসেন আমু। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সঙ্গে তার দূরত্বের খবর বিভিন্ন সময় শোনা যায়।
যদিও ২০১৪ সালের মন্ত্রী সভায় তিনি মন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু এক-এগোরোর পর আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে তাকে সরে যেতে হয়। উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তিনি হয়েছেন। কাজেই বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে যে তিনি এ ধরনের বক্তব্য রেখেছেন তা নয় সেটি মোটামুটি নিশ্চিত। তাহলে তিনি কার নির্দেশে বক্তব্য দিলেন? কিসের ইঙ্গিত দিলেন, সে প্রশ্নটি থেকেই যায়।
এক-এগোরোর সময় আমির হোসেন আমুর ভূমিকা যেমন রহস্যময় ছিল, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করার প্রস্তাবটি ঠিক একই রহস্যময়। তাহলে কি আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয় দলের মধ্যেই একটি পক্ষ এখন রাজনীতির কৌশলের খেলা খেলছেন?
তারা কি এখন চাইছেন যে আবার আরেকটি এক-এগারো আনার জন্য। সেই জন্য কি বিভিন্ন মহল সক্রিয় হয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন