আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদান

প্রকাশিত: ১২:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২, ২০২৩

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শেখ হাসিনার অবদান

 

ড.সুকান্ত ভট্টাচার্য

“বাবা! তুমি যেখানেই থাক না কেন, তোমার আশীর্বাদের হাত আমার মাথার ওপর আছে-আমি তা অনুভব করতে পারি। তোমার স্বপ্ন বাংলাদেশের জনগণের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার ব্যবস্থা করে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

তোমার দেশের মানুষ তোমার গভীর ভালবাসা পেয়েছে। আর এই ভালবাসার শক্তিই হচ্ছে আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা ।”-এ আবেগঘন শব্দগুলো উচ্চারণ করেছেন বাংলাদেশের চারবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ডের শিকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জেষ্ঠ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক স্মৃতি বিজড়িত “বেদনায় ভরা দিন” শিরোনামে সাম্প্রতিক এক মর্মস্পর্শী লেখনীতে এখানেই প্রিয় স্বজাতির প্রতি পিতার আকাশ সমান প্রগাঢ় ভালবাসার মত তনয়ার এদেশের মা-মাটি মানুষের প্রতি প্রতিশ্রুতি ও অতল, নিখাদ মমতা ফুটে উঠেছে। ১৯৪৭ এ দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের অব্যবহিত পরেই শেখ মুজিবুর রহমান হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছিলেন শোষক, অত্যাচারী পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের অধীনে কোনদিনও পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ও মুক্তি অর্জিত হবে না। ১৯৪৮ সাল থেকে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে সোচ্চার শেখ মুজিবুর রহমান বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ৬ দফা, উনসত্তরের গণঅভ্যু্থান, সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি ও বাঙালির সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা ও অধিকার আদায়ের একচ্ছত্র নেতার অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ । তাইতো তিনি বাঙালির প্রিয় বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতার অনন্য অভিধায় বিভূষিত| স্বাধীনতার দশ মাসের মধ্যেই বিশ্বের এক অনন্য সংবিধান প্রণয়ন, পোড়ামাটির বিধ্বস্থ বাংলাদেশে মাটি ও মানুষকে উপজীব্য করে অর্থনীতির চাকাকে সচল করার দুর্বার প্রয়াস পান। ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করে যুগোপযোগী বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতা হিসেবে সমগ্র বিশ্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে “Friendship to all, malice towards none” পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন । ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দু’লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে ধ্রুবতারা করে বঙ্গবন্ধু যখন অর্থনৈতিক মুক্তির পথে ধাবমান, তখনই দেশে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দেশীয় ও আন্তজাতিক কুচক্রীমহল ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট যখন ভোরের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছিল, তখন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর (যেখান থেকে বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন) ভেসে গেল জাতিকে ভালোবেসে জীবনের বসন্ত দিনগুলোর তেরটি বছর উৎসর্গ করা, লাল সবুজের পতাকাকে বুকের গহীনে ধারণ করা, স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সহ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ কামাল, শেখ জামাল, দশ বছরের নিষ্পাপ শিশু রাসেল এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের প্রায় সব সদস্যের রক্তের স্রোতে । বঙ্গবন্ধুর জ্যোষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা ও ছোট মেয়ে শেখ রেহানা সেই সময় ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বেলজিয়ামে থাকায় বিধাতার অলৌকিক কৃপায় প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু বেচে থেকে তাঁরা কী দুর্বহ বেদনার ভার বয়ে বেড়ালেন সুদীর্ঘকাল। সে নির্বাসিত বেদনা-ক্ষোভ-দুঃখ-ব্যথার জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে জীবন -মৃত্যু পায়ের ভূত্য গণ্য করে শেখ হাসিনা আসেন বাংলাদেশের মাটিতে । তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরকার বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে প্রবেশের অনুমতি দেন নি। নিয়তির কি নির্মমতা! তারপরের ইতিহাস শেখ হাসিনা জীবন বাজি রেখে স্বজাতির ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কন্টকাকীর্ণ ইতিহাস । তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলকে সুসংগঠিত করার প্রয়াস পান। আর জীবন বাজি রেখে চষে বেড়ান বাংলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। সুদীর্ঘ ১৬ বছর চলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণকারী সামরিকতন্ত্র ও স্বৈরাচারের বিরদদ্ধে তাঁর মরণপণ অকুতোভয় আন্দোলন-সংগ্রাম। হৃদয় গভীরে হয়ত প্রেরণা হিসেবে পান পিতার সেই অমর সাহসী বীজমন্ত্র “আমরা যখন মরতে শিখেছি, কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না”।সত্যি পারেনি অসম সাহসী দৃঢ়চেতা বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দাবিয়ে রাখতে । তাঁরই সুযোগ্য নেতৃতে স্বৈরশাসনের অবসানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তাঁকে হত্যা করার চেষ্ঠা চালানো হয়েছে ঊনিশ বার। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের পৈশাচিক গ্রেনেড হামলা থেকে বিধাতাই তাঁকে রক্ষা করেন। মহান সৃষ্টিকতার অসীম কৃপায়, বাঙালির সুগভীর ভালবাসায় তিনি বারবার ফিরে এসেছেন মৃত্যুর দুয়ার হতে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করতে করতেই হেরে যান তিনি। কিন্ত দমে যাননি। দৃঢ় পদবিক্ষেপে অজেয় মনোবল নিয়ে চালিয়ে যান আন্দোলন-সংগ্রাম। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর দেশসেবার সুযোগ পান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা । বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশকে পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণায় গড়ে তোলা হয়েছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র ও গণমাধ্যম থেকে বঙ্গবন্ধুকে নির্বাসিত করা হয় । ৭ই মার্চের বিশ্বখ্যাত, UNESCO স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাওয়া সেই ভাষণও নির্বাসিত হল। সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা অপসৃত হয়। পশুহৃদয় খুনি মোশতাক সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করে যে ইনডেমনিটি বিল আনে, পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান সরকার সংবিধানে তাকে বৈধতা দেয় ৷ ইতিহাস কলঙ্কিত হয় নগ্নভাবে। ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সেই কুখ্যাত কালো আইন ইনডেমনিটি বিল বাতিল করে শুরু করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার । প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে তিনি চাইলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করে হত্যার বিচার করতে পারতেন। কিন্ত ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত আদালতে বন্ধু হত্যার বিচার সুসম্পন্ন করেন। ফাঁসি হয় কুখ্যাত খুনীদের । এখনও পাঁচজন খুনি বিদেশে পলাতক। ২০০৯ এ দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ সেবার সুযোগ পেয়ে তিনি সূচনা করেন যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার কাজ। তাতেও অপরাধীদের ফাঁসি হয়। কারও হয় যাবজ্জীবন কারাদন্ড। ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচনে জয়লাভ করে জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনে প্রাণান্ত প্রয়াস পান।
বঙ্গবন্ধু তনয়ার হাত ধরে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । তথাকথিত তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে আজ মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল বাংলাদেশ । খাদ্য ঘাটতির দেশ থেকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ । ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ। মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক ৷ পৃথিবীতে এ ঘটনা বিরল। বেশ কিছু সংখ্যক উড়াল সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেইটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু টানেল, চার লেইন সড়ক ও অভাবনীয় অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সহজশর্তে কৃষি ঋণ, সার ও বীজের সহজলভ্যতা, দশ টাকায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা, অথৈ পানিতে ভাসতে থাকা স্বদেশ হারা বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয়দান (প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় যেমন করে ভারত ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধকালীন এক কোটি বাঙালি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়), কোন রকম যুদ্ধ-সংঘাত-বৈরিতা ছাড়াই দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র বিজয় সুনিশ্চিত হয় শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায়। এছাড়া বঙ্গোপসাগরে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১০ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার প্রানিজ ও অপ্রানিজ সম্পদের উপর সার্বভোম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল (enclave) সমস্যার সমাধান হাসিনা সরকারের সুনিপুণ কূটনৈতিক সাফল্য মনে করেন বিশ্লেষকগণ ৷ অর্থনৈতিক কুটনীতিতে সাফল্যের পালক হিসেবে যুক্ত হয়েছে ২৮২৪ ডলারের মাথা পিছু গড় আয়, ১৮ শতাংশের নীচে দারিদ্যসীমা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, তালাকগ্রাপ্ত ও বয়স্ক ভাতা যার ফলে দারিদ্যসীমা ক্রমান্বয়ে নীচে নেমে এসেছে। ৩৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতির বর্তমান বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশ ও ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হবে- এ সুদৃঢ় প্রতীতি দেশের খ্যাতিমান অর্থনিতিবিদদের। পদ্মা মেঘনায় যত পানি গড়িয়েছে, শেখ হাসিনা তত পরিনত হয়েছেন। আর আর্থ সামাজিক উন্নয়নে নিজেকে ও সরকারকে নিবেদিত করেছেন। ২০১৪ সালের তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে তিনি দশটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেনঃ

প্রফেসর ও চেয়ারম্যান ,ইংরেজি বিভাগ ,সিনেট সদস্য , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

December 2023
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31