স’লিপকঃ
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবলা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নিমারাই (হিলরকান্দি) এবং পশ্চিম নিমারাই (সোনাপুর) গ্রামের হাওরাঞ্চলের বাসিন্দাদের একমাত্র যাতায়াতের রাস্তাটি সংস্কারের অভাবে অবহেলায় পড়ে আছে। প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাতায়াতকারী ২ গ্রামের হাজারো মানুষ।
বর্ষা মৌসুমে এলাকাবাসীকে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান কাদায় মাড়িয়ে চলতে হয়। গ্রামের গুরুত্বপুর্ণ একমাত্র রাস্তাটি এখন ব্যবহারের অনুপযােগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে সংস্কারবিহীন থাকায় বর্তমানে এ সড়কের বেহাল দশা। এছাড়াও রাস্তাটি উচু না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তার উপর হয়ে যায় হাটুপানি।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এলাকাবাসী সংষ্কারের দাবী জানিয়ে আসলেও এখনো হয়নি কাঙ্খিত সংস্কার কাজ। এভাবে বছরের পর বছর অতিবাহিত হলেও সড়কটির বিষয়ে এখনো দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারী।
বর্তমান সরকারের আমলে দেশে কাঁচা রাস্তা নেই বললেই চলে। এই সরকার উন্নয়নের রোল মডেল। ইতিমধ্যে দেশের অলিতে-গলিতে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই একটিমাত্র মাটির সড়ক যেন অভিভাবকহীন! বর্ষা আসলেই নিমারাই এলাকার হাজারোধিক বাসিন্দারা চলাচলে পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। রাস্তার অবস্থা দেখে মনে হয় এ যেন আদিম যুগে বসবাস।
সরে জামিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর রাস্তাটি খানাখন্দের কারণে গাড়ি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। একটু বৃষ্টিতেই স্যাৎস্যাতে হয়ে পড়ে রাস্তাটি। আর বর্ষায় হয়ে যায় কাদাতে ভরপুর। দেখলে মনে হয়, যেন চাষের জমি! অথচ এ সড়কেই প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ চলাচলা করতে হয়। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু সমান কাদায় মাড়িয়ে হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, অফিস, দোকান, ক্ষেত-খামার কিংবা হাসপাতালে যাতায়াতে হয় নানা অসুবিধা। এভাবে হাঁটু সমান কাদা নিয়ে মধ্যবয়সীরা বহু কষ্টে চলাচল করলেও বয়ো:বৃদ্ধ এবং শিশুরা চলাচলে পড়তে হয় নানান বিপাকে। কখনো কখনো ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।
এ পরিস্থিতিতে স্কু্ল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের চরম ঝুঁকিতে যাতায়াত করতে হয়। বিকল্প রাস্তা না থাকায় দৈনিক এই সড়ক দিয়ে কৃষক যেতে হচ্ছে ক্ষেত-খামারে,মুসল্লী যতে হচ্ছে মসজিদে, মামলা-মুকদ্দমা, হাট-বাজার এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষদের নানা কাজে রাস্তাটি ব্যবহার করতে হয়। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে আত্মীয়-স্বজনরা প্রয়োজন হলেও আসতে চান না এ এলাকায়। জনবহুল বসত-বাড়ি থাকায় বিভিন্ন বয়সের মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটিতে অতিরিক্ত কাদার কারণে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন এলাকার হাজারো মানুষ। এখনো রোগীকে আদিম যুগের মতো পলো দিয়ে কাঁধে বহন করে হাসপাতালে নেয়া হয়! স্কুল-কলেজ-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জুতা হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়!
এদিকে দীর্ঘ কয়েক যুগ পার হলেও রাস্তার সংস্কার কাজ না করায় জনপ্রতিনিধিদের উদাসীনতা আর অবহেলাকে দায়ী করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বারবার আশ্বাস পেলেও কাজ হয়নি কখনো। রাস্তটির কাজের বাজেট পাস হয়ে গেলেও শুরু হয়নি এখনো কাজ।
এলাকার প্রবীণ মুরব্বি সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের একমাত্র চলাচলের রাস্তাটির অবস্থা খুবই নাজুক। বর্ষায় রাস্তার মধ্যে হাঁটু সমান কাদায় আমাদের হাঁটা চলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা এলাকাবাসীরা কষ্ট ভোগ করছি। আমি নিমারাই গ্রামের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
গ্রামের কৃষক মোঃ লিটন মিয়া বলেন, দীর্ঘ ২৫ বছর পর আমাদের গ্রামে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। আমরা আশাবাদী আর ভোগান্তি পোহাতে হবেনা। নির্বাচন আসলে অনেক লম্বা লম্বা বক্তব্য রাখেন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। কাজের কাজ কিছুই করেন না। এইবার হয়তো নিমারাই গ্রামে উন্নয়নের কিছুটা ছোয়া লাগবে।
ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল রকিব জানান, আমাদের গ্রামের একমাত্র রাস্তাটির কাজ অচিরেই শুরু হবে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে হয়তো একটু কষ্ট করতে হবে। তবে আগামীতে আর রাস্তার জন্য নিমারাই গ্রামবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হবেনা।
সংবাদটি শেয়ার করুন