পুলক ঘটক
গ্রামে আমার পৈত্রিক ভিটা খালি পরে রয়েছে। সেখানে বাবা আর বৌদির শেষকৃত্যের স্থানটিতে নির্মিত স্মৃতিসৌধ ছাড়া তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। পাহারা দেয়ারও কেউ নেই। বছর দুয়েক আগে বাবার সমাধী প্রাচীরের ইটগুলো একদল মানুষ খুলে নিয়ে গেছে। ভিটার গাছপালাও কিছু মানুষ এসে কেটে নিয়ে গেছে। ঢাকায় বসে সংবাদ পেয়েছি। কারা করেছে তাও জেনেছি। কি করব? আমি রংপুরে গিয়ে মামলা করব? সেই মামলা চালাবে কে? আমরা ভাইয়েরা কর্মের প্রয়োজনে বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে আছি।
প্রতিবেশীদের চোখের সামনে অন্যায় ঘটলেও তাদের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। এরকম ভীতু মানুষদের প্রতি আমার চরম বিরক্তি। 'যেভাবেই হোক বেঁচে থাকা'র জীবন দর্শন আমার স্বভাব বৈশিষ্টের সাথে যায় না। সাহস ও মর্যাদা'র সাথে বাঁচতে চাই; নচেৎ নয়।
আমার পৈত্রিক ভিটা প্রতিবেশীরা পাহারা দিল না কেন, এই নিয়ে আক্ষেপ করা বাতুলতা মাত্র। এরা নিজেদের সম্পদ রক্ষার জন্যেও সাহস করে দাঁড়াতে চায় না। "আমরা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, অতএব দুর্বল" - এ রকম মনস্তত্ত্ব দেশের একটি জনগোষ্ঠীকে শেষ করে দিচ্ছে।
কাল কার্তিক বর্মণের বাড়িতে যখন হামলা হয় তখন পাড়ার কেউ রুখে দাঁড়ায়নি। হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে বাড়িটা লুটপাট করেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে গোয়ালের গরু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। কারও মুখে রা নেই।
কার্তিক প্রায় এক সপ্তাহ আগে তার সম্ভাব্য বিপদের কথা আমাকে জানিয়েছিল। তার কাছে টাকা দাবি করছে, জমি লিখে দিতে বলেছে, বউ-বাচ্চাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকী দিয়েছে।
আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, "কাকা, আমি কি করব।" বলেছিলাম, "থানায় যাও, ডায়েরি কর।" তার উত্তর হল, "মামলা করলে এলাকায় আর থাকতে পারব না।"
বলেছিলাম, "গ্রামে সবাইকে জানাও।"
তার ধারণা গ্রামের কেউ এগিয়ে আসবে না।
আমি আবার বলেছি, "শুধু হিন্দু কেন? হিন্দু-মুসলমান সবাইকে জানাও, বিচার চাও।" বলেছি, "হিন্দুদের চেয়ে মুসলমানরা তোমাকে বেশি সহায়তা করবে। চারজন খারাপ লোক থাকলে ১০ জন ভাল লোক তোমার পক্ষে দাঁড়াবে। সমাজ থেকে বিবেক হারিয়ে যায়নি। তুমি মুসলমানদের গ্রামগুলোতে গিয়ে জনে জনে বিচার দাও।"
তার বক্তব্য হল, "সবার কাছে যায়া কি হবে?......দেওয়ানিরা (স্থানীয় নেতারা) টাকা খায়।....."
গতকাল দুপুরে হামলার পর রাতে সে থানায় গিয়েছিল। ঘটনার পর থেকে যারা তাকে সহায়তা করেছে এবং সাহস যুগিয়েছে তাদের বেশিরভাগই মুসলমান। আমার বিশ্বাস মিথ্যা হয়নি।
আমি টেলিফোনে এসপি এবং ওসি'র সঙ্গে কথা বলেছি। নিজের যতটুকু সামাজিক পরিচয় আছে তার সবটুকু ব্যবহার করেছি। পুলিশকে অনুরোধ করেছি বিপন্ন মানুষের প্রতি সুবিচার করার জন্য। থানায় রাত ৩ টা পর্যন্ত মামলা করা না করা নিয়ে ঘষামাজা হয়েছে। হামলা ও লুটপাটকারীদের দলে সরকারের একটি নিয়মিত বাহিনীতে চাকরিরত এক ব্যক্তি ছিল বলে কার্তিক আমাকে জানিয়েছে। কিন্তু মামলায় তার নাম উল্লেখ করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত পুলিশ মালামাল ও গরুগুলো উদ্ধার করতে পারেনি। কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। তবে আমি আস্হা হারাতে চাই না। সর্বত্র মানুষ আছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধে একযোগে এগিয়ে এসো মানুষ।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium, Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: [email protected]
Web Design by: SuperSoftIT.com