২৮শে জুন ২০২২ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আষাঢ় ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৫৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০২২
নিউজ ডেস্ক:
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শেষে বুধবার রাতে স্থানীয় জনতার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় গুলিতে এক নারীসহ ৪ ব্যক্তি নিহত এবং আরও অন্তত ৩জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহতরা হলেন- কালাইহাটা মধ্যপাড়া গ্রামের মধ্যপাড়ার খোকন মণ্ডলের স্ত্রী কুলকুস বেগম (৪৫) ও কালাইহাটা পশ্চিমপাড়ার মৃত ইফাত উল্লাহ প্রামাণিকের ছেলে আব্দুর রশিদ (৪৮), কালাইহাটা মধ্যপাড়ার মৃত মাবদুলের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৫) ও ছহির উদ্দিন আকন্দের ছেলে খোরশেদ আকন্দ (৬৫)।
আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৩জনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কালাইহাটা গ্রামের রাকিব (১৫), আব্দুল্লাহ্ (৪৫) ও ছহির উদ্দিন (৬০)। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র কুলসুম বেগমের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে। অবশ্য অপর ৩জনের নিহত হওয়ার কথা তাদের স্বজনরা সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।
জনতার ইট-পাটকেলের আঘাতে ওই কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপালনকারী পাশবর্তী শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা সামান্য আহতও হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নির্বাচনের ফলাফল কেন্দ্রের বাইরে অন্যত্র ঘোষণা করা হবে- এমন সন্দেহ থেকে বুধবার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর পরই বিক্ষুব্ধ জনতা কালাইহাইটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ঘেরাও করেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদস্যরা তাদের নিবৃত্ত করত গেলে রাতে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় এক ঘন্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ওই কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনুস আলী ফকির প্রতিদ্বন্দ্বী দুই সন্তন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচন কর্মকর্তার কার্র্যালয়, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৩জন প্রার্থী হন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউনুস আলী ফকির (নৌকা), বিএনপি সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহবুবর রহমান (ঘোড়া) ও বিএনপি নেতা সাকিউল ইসলাম তিতু (চশমা)। ওই ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি ৩ হাজার ২২ ভোটার ছিলেন। কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইউনুস আলী ফকিরের বাড়ির কাছাকাছি। আর সে কারণে নৌকা মার্কার কর্মী-সমর্থকরা ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকেই কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিকে নজর রাখছিলেন।
কালাইহাটা গ্রামের বাসিন্দা এইচ এম রাঙ্গা জানান, বিকেল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাকিউল ইসলাম তিতু তার পরিচিত স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তাকে দিয়ে ওই কেন্দ্রের ভোট গাবতলী উপজেলা পরিষদে নিয়ে গণনা করাবেন বলে খবর রটে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় জনগণের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তার পরপরই নির্বাচনী ফলাফল দ্রুত ঘোষণার দাবিতে জনতা ওই কেন্দ্র ঘেরাও করেন। এক পর্যায়ে ওই কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনকারী শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফিস আহমেদকে অবরুদ্ধ করে তার গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বিক্ষুব্ধ জনতার কবল থেকে রক্ষা পেতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। তাতেও জনতা নিবৃত্ত না হওয়ায় গুলি চালানো হয়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ওই কেন্দ্র ত্যাগ করেন। তবে পরিস্থিতি যাতে আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায় সেজন্য সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গুলিতে ঘটনাস্থলেই ৪জন নিহত হয়েছেন।
বগুড়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুব আলম শাহ জানান, প্রতিটি কেন্দ্রের ভোট স্ব স্ব কেন্দ্রে গণনা করে সেখানেই ফলাফল ঘোষণার নির্দের্শনা রয়েছে। কাজেই এক কেন্দ্রের ভোট অন্য কোথাও গণনার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর শুনেছি এর আগে অনুষ্ঠিত বালিয়াদীঘি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কালাইহাটা কেন্দ্রের ফলাফল কোন এক কারণে উপজেলা পরিষদে গণনা করা হয়েছিল। এবারও সেটা করা হতে পারে বলে জনগণের মধ্যে এক ধরনের সন্দেহ ছিল। সেই সন্দেহ থেকেই তারা ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনার সময় চড়াও হন।’
কালাইহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বপালনকারী শাজাহানপুরের ইউএনও আসিফ আহমেদ বলেন, ‘আমি বর্তমানে কথা বলার পর্যায়ে নেই।’
তবে বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোঃ জিয়াউল হক বলেন, ‘শাজাহানপুর ইউএনও আসিফ আহমেদকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলের পাশাপশি গুলিও চালানো হয়েছে। পরে তাকে বাঁচানোর জন্য আত্মরক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধ্য হয়েই গুলি চালিয়েছে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়েছে কি’না সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমার কাছে নেই।’
সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঠিক কতজন মারা গেছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সংখ্যাটা নিয়ে নিশ্চিত নই। তবে আমরা এখন পর্যন্ত শুধু কুলসুম বেগম নামে একজনের লাশের সন্ধান পেয়েছি। আরও কেউ নিহত হয়েছে কি’না সেটা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছি।’
সূত্র পুন্ড্রুকথা
Editor in Chief
Contact: 017111-66826
National Desk In-charge
Sumon Suddha
Contact: 01710010218
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com