ইউরোপের রণক্ষেত্র রক্তাক্ত : ঘৃণার আগুন ক্রমেই ফুঁসছে

প্রকাশিত: ৬:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২৬, ২০১৬

ইউরোপের রণক্ষেত্র রক্তাক্ত : ঘৃণার আগুন ক্রমেই ফুঁসছে

এসবিএন ডেস্কঃ বেলজিয়ামকে বলা হয় ইউরোপের রণক্ষেত্র। ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে এ দেশে। বেলজিয়ামের ওয়াটারলুতে ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ান বোনাপোর্টের পরাজিত হওয়ার ঐতিহাসিক যুদ্ধ অনেকের জানা।

আরো অনেক যুদ্ধ হয়েছে বেলজিয়ামের মাটিতে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ ইউরোপের আগ্রাসী কিছু দেশের মধ্যে আধিপত্য ও সাম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে অধিকাংশ যুদ্ধ হয়।

ইউরোপের ককপিট বা যুদ্ধক্ষেত্র নামে পরিচিত বর্তমানের সার্বভৌম বেলজিয়ামে অনেক দিন পর বড় ধরনের রক্তপাত হলো মঙ্গলবার। কে বা কারা বেলজিয়ামের বিমানবন্দর ও মেট্রোরেল স্টেশনে হামলা চালিয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। হামলার দায়ও কেউ স্বীকার করেনি। কিন্তু ঘৃণার আগুন যেন ফুঁসে উঠছে ইউরোপজুড়ে।

মঙ্গলবারের হামলায় নিহত হয়েছে ৩১ জন। তবে কোনো কোনো গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা বেশি বলা হচ্ছে। হতেই পারে। বহু মানুষ আহত হয়েছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হতে পারে কারো কারো। এ হত্যাকাণ্ডে যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে গোটা ইউরোপ। উৎকণ্ঠা, আতঙ্ক ও উদ্বেগ বিরাজ করছে বেলজিয়াম ও পশ্চিম ইউরোপের দেশে।

এখন শতকোটি ডলারের প্রশ্ন হলো- বেলজিয়ামের মতো সুরক্ষিত দেশে, যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামরিক জোট ন্যাটোর সদর দপ্তর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কমিশনের সদর দপ্তর অবস্থিত, সে দেশে হামলা চালানোর মতো দুঃসাহস আছে কার?

হামলাকারীদের খোঁজা হচ্ছে। তবে ইউরোপের নেতাদের বক্তব্যে একটি বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) বা ইসলামপন্থি কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের কাজ হতে পারে এটি। এর সঙ্গে প্রতিটি খবরে আরো একটি বিষয় উল্লেখ করা হচ্ছে, মাত্র ৩ দিন আগে ব্রাসেলস থেকে প্যারিস হামলার প্রধান অভিযুক্ত সালাহ আবদেসালাম গ্রেফতার হয়েছেন।

আরো খবর হচ্ছে, আইএসের হয়ে ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে, এমন দেশের নাগরিকদের মধ্যে ইউরোপ থেকে বেলজিয়ামের নাগরিক সবচেয়ে বেশি। আইএসের হাতে অর্থ যাওয়ার প্রধান রুট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এই বেলজিয়ামকে। ফলে এ হামলার সঙ্গে বেলজিয়ামের সন্ত্রাসীদের সম্পর্ক থাকতে পারে।

এখন প্রশ্ন হলো- এই সন্ত্রাসী কারা? ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি ব্রাসেলসের হামলার সঙ্গে প্যারিস হামলার তুলনা করেছেন। প্যারিস হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। ওই হামলায় নিহত হয়েছিল ১৩০ জন।

পোপ ফ্রান্সিস, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্কসহ আন্তর্জাতিক মহলের প্রভাবশালী নেতারা বেলজিয়ামের হামলাকে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এরদোয়ান বলেছেন, বেলজিয়ামের হামলায় ‘সন্ত্রাসের আন্তর্জাতিক মুখ’ উন্মোচিত হয়েছে। রাশিয়াও সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করে তাদের ধ্বংস করার কথা বলেছে।

সন্ত্রাসীরা ধ্বংস হোক। কোনো ধরনের রক্তপাত কাম্য নয়। কিন্তু ব্রাসেলস থেকে প্যারিস হামলার হোতা আবদেসালাম গ্রেফতার হওয়ার পর বেলজিয়াম পুলিশ জানায়, মোলেনবিকে আবদেসালাম ও তার সহযোগী বসবাস করত। মোলেনবিকে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়।

কিন্তু মোলেনবিকের প্রায় ২ হাজার মুসলিম রাস্তায় নেমে বলেছে, তারা মুসলিম কিন্তু সন্ত্রাসী নয়। মুসলিমদের গড়পড়তা সন্ত্রাসী বলার বিরোধিতা করে তারা। কারণ মোলেনবিক থেকে আবদেসালাম গ্রেফতার হওয়ার পর মুসলিমদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়। সন্ত্রাসী অভিযোগে তাদের ওপর খড়্গ চালাতে পারে পুলিশ।

ইউরোপে এখন দু’টি প্রধান সমস্যা- (১) অভিবাসী ও (২) সন্ত্রাস। এ ২ সমস্যার সঙ্গে মুসলিমরা জড়িয়ে আছে। ইউরোপে ঢুকে পড়া অভিবাসীরা অধিকাংশ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম।

তাদের মধ্যে কে সন্ত্রাসী, কে ভালো তা নির্ণয় করা দুরূহ। এর আগেই ইউরোপের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, অভিবাসীদের ছদ্মাবেশে আইএসের জঙ্গিরা ইউরোপে ঢুকে পড়তে পারে। এর কোনো প্রমাণ না থাকলেও বেলজিয়ামে হামলার পর ইউরোপে মুসলিমরা চাপের মধ্যে থাকবে- এ কথা বলাই যায়।

পশ্চিমা গণমাধ্যমে মুসলিম ও সন্ত্রাসী গুলিয়ে ফেলা হয়। সন্ত্রাসবাদের জন্য চোখ বুজে মুসলিমদের দায়ী করা হলে, তা সভ্যতার জন্য চরম সংকট তৈরি করবে।

মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করা মানে তাদের সন্ত্রাসীর কাতারে ফেলে দেওয়া। এর অর্থ দাঁড়ায় আরো মুসলিম সন্ত্রাসের উসকানি পায়।

তা ছাড়া, ইউরোপীয়রা যদি মুসলিমদের ঘৃণার চোখে দেখা শুরু করে, তাহলে মুসলিমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারে। বিচ্ছিন্নতা যেকোনো পক্ষের মধ্যে ঘৃণার আগুন ছড়িয়ে দিতে পারে। দাঙ্গাও সৃষ্টি হতে পারে।

সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে গিয়ে যেন মুসলিমদের শত্রু বানানো না হয়। সন্ত্রাসের কোনো ধর্ম নেই। ফলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের বের করে তাদের বিচার করতে হবে। বিশ্ব শান্তি রক্ষার জন্য ইউরোপকে এ দায় নিতে হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

December 2023
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31