১লা জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৮, ২০২৩
আজিজুল আম্বিয়া
পৃথিবীর মানুষ তাদের প্রয়োজনে বিনোদনের জন্য আবিষ্কার করেছে বিভিন্ন উৎসবের ।
আর মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের আনন্দের জন্য নিজের খুশিমতো উপহার দিয়েছেন দুটি আনন্দ উৎসব । তার একটি হল ঈদ-উল-ফিতর এবং অপরটি হল ইদ-উল-আযহা । যদিও আল্লাহ তাঁর ইবাদতের জন্য বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন তবুও ঈদের দিনে ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্যান্য ইবাদত করতে তিনি নিষেধ
করেছেন । কারণ এই দিনে বান্দাদের আনন্দের কথা চিন্তা করে আল্লাহ পুরাপুরি স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করার অধিকার দেন । তাই প্রতি বছরের এই দুই ঈদ এ মুসলমারা বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে ঈদ উৎসব পালন করে । বাংলাদেশে মুসলমানদের সংখ্যা বেশি থাকাতে এই উৎসব একটা মহা উৎসবে পরিণত হয় । আর এখানে মুসলমানের যেমন অন্যান্য ধর্মের লোকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আছে তেমনি অন্যান্য ধর্মের লোকের ও আছে মহান সম্প্রীতির মনোভাব । এ কারণে প্রতি বছরেই রাষ্ট্রের সকল ধর্মের নাগরিকরা বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে এই মহা উৎসবে নিজেদের মধ্যে মহান সম্প্রীতির জাগরণ ঘটান । আর এই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা প্রবাসে থেকে ও নিয়মিত রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে চলমান রাখতে সহয়োগিতা করেন তাদেরকে বিদেশেই ঈদ করতে হয় ।এমনকি মা, বাবা ও সন্তানদেরকে বাড়িতে রেখে ঈদ করেন। তারা নিজেরা সব সময় ভালো কাপড় না কিনে ও পরিবারের সবার জন্য ভালো কাপড়ের ব্যবস্হা করেন । তাই শ্রদ্ধা জানাই সেই আলোকিত মানুষদের। এ কারণে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে হয় । আরাবী ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দীর্ঘ একমাস রোজা রাখার পর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিনে ঈদুল ফিতর উৎসব পালন করা হয় ।ঈদের আগের দিনের রাতটিকে ইসলামী পরিভাষায় লাইলাতুল জায়জা বলা হয় যার অর্থ পুরস্কারের রজনী। আমাদের দেশের লোক এই রাতকে “চাঁদ রাত” হিসেবে জানে । শাওয়াল মাসের চাঁদ অর্থাৎ সূর্যাস্তে একফালি নতুন চাঁদ দেখা হলে পরের দিন ঈদ ঘোষণা করা হয়। আর এটি হল ইসলামী শরিয়তের বিধান। ঈদ উল ফিতরের ‘ঈদ’ শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ ‘আউদ’থেকে যার অর্থ উৎসব যা বারবার ফিরে আসে এবং ‘ফিতর’ এসেছে আরবি ‘ফিতরা’ শব্দ থেকে যার অর্থ ভেঙে দেওয়া । অর্থাৎ ঈদ উল ফিতর হল রোজা ভাঙ্গার আনন্দের দিন বা উৎসব যা পুনরায় ফিরে আসে। এর সামাজিক অর্থ সর্বজনীন ধর্মীয় উৎসব। বলা যায় রমজান মাসের রোজা শেষ করে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে মুসলমানরা যুগযুগ ধরে যে আনন্দ- উৎসব পালন করে আসছেন তার নামই হল রোজার ঈদ বা ঈদ উল ফিতর।ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যাপক মিয়াজী এর মতে, “হিজরী প্রথম বছরের অষ্টম মাস অর্থাৎ শাবান মাসে রোজা বাধ্যতামূলক করার আয়াত নাজিল হয় এবং তখন নবম মাস অর্থাৎ রমজান মাসে একমাস সিয়াম সাধনাকে ফরজ করা হয়,”। এরপর হিজরী দ্বিতীয় সালে এসে বিধান দেয়া হয় যে, রমজান মাস চাঁদের হিসাবে যা ২৯ দিনেও শেষ হতে পারে বা কখনো ৩০ দিনেও শেষ হতে পারে-শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন ঈদ উদযাপন করা হবে । আরও জানা যায়, মুসলমানরা সর্বপ্রথম ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করেন হিজরি ২য় সনে যা ইংরেজি সাল অনুযায়ী ৬২৪ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসের শেষের কোন একটি দিন বলে ধরে নেওয়া যায়। আর এই সময়টা হল মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর । এ বিষয়ে সাহাবী আনাস (রাঃ)থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিসগ্রন্হ সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে, মদিনায় যাওয়ার পর নবী মোহাম্মদ দেখলেন যে, সেখানকার মানুষ বছরে নওরোজ এবং মিহিরজান নামে দুইটি বড় উৎসব পালন করে।তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)বলেন, “মহান আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন । তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা”(হাদিস নাম্বার:১১৩৬)। তাই বলা যেতে পারে, মূলত ওই দুইটি উৎসবের আদলে মুসলমানদের জন্য বছরে দুইটি ধর্মীয় উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তন হয় । এই দিনে নবী মোহাম্মদ (সাঃ) ছোট-বড় সবার সাথে আনন্দের মাঝে সময় অতিবাহিত করতেন ।এমনকি তিনি মদিনার ছোট ছোট শিশু-কিশোরদের সঙ্গে ও ঈদ আনন্দ শেয়ার করতেন এবং ঐদিন সবাইকে শরিয়তের অন্তর্ভুক্ত সব ধরনের আনন্দ করার অনুমতি দিতেন ।অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এর মতে ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তুল্লাহর সময় বঙ্গে উৎসব করে ঈদ উদযাপনের চল শুরু হয়। মুঘলরা ঢাকায় এসেছিল ১৬১০ সালে । তখন তাদের পাঠানো নায়েব-নাজিমরা ঈদ উদযাপন করতেন। ঈদের চাঁদ উঠলে তারা আনন্দ-উৎসব শুরু করতেন । কামান দাগা হত। ঈদের দিন তারা একসঙ্গে নামাজ পড়তেন,নামাজ পড়ে ফেরার পথে হাতি বা ঘোড়ার পিঠ থেকে তারা সাধারণ মানুষের দিকে পয়সা ছুঁড়ে দিতেন। ঈদ তাদের নিজেদের মধ্যেই উদযাপিত হত, সাধারণ মানুষের তার সাথে সংযোগ ছিল না । এ ছাড়া বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের মতে, ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশে মুসলিম অধিকার এলেও এ দেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ উৎসবের প্রচলন হয়েছে তার বেশ কিছু আগে থেকেই। কেননা, বঙ্গদেশে যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগে থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ ও সাধকরা ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে উত্তর ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আসেন। অন্যদিকে আরবীয় ও অন্যান্য মুসলিম দেশের বনিকরা চট্টগ্রাম নৌবন্দরের মাধ্যমে ও বাংলার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্হাপন করেন। এভাবেই একটা মুসলিম সাংস্কৃতিক, তথা ধর্মীয় প্রভাব পূর্ব বাংলায় এসে
image0.jpeg
পড়েছিল। ঈদ উৎসবের সূচনা ও ওই প্রক্রিয়ায়ই হয়েছে বলে তার মত । এভাবেই চালু হয় বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের সব জায়গাতে পবিত্র ঈদ উৎসবের । ঈদ পালনের কিছু নিয়ম আছে, এর মধ্যে ফিতরা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের হাতে পোঁছে দিতে হয়। উল্লেখ্য প্রত্যেক মুসলমানকে তার সম্পদের যাকাত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহান আল্লাহ তাআলা এবং বলেছেন এটি গরিবের হক । আর এই যাকাত প্রদানের সময় মুসলিম চিন্তাবিদরা রমজান মাসকে উত্তম হিসেবে বেছে নিয়েছেন, তাই মুসলমানরা এই মাসেই যাকাত প্রদান করে থাকেন । আর যদি বিশ্বের সব মুসলমান নিয়মিত যাকাত দেন তাহলে সারাবিশ্ব একদিন গরিব মুক্ত হবে ইনশাআল্লাহ্। আসুন আমরা জেনে নেই আমাদের প্রিয় মোহাম্মদ (সাঃ) কিভাবে ঈদ করতেন, ঈদের দিন মহানবী (সাঃ) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতেন এরপর গোসল করে সুগন্ধি মেখে উত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ঈদুল ফিতরে তিনি নামাজ এ যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি খাবার খেতেন। ঈদগাহে যাওয়ার সময় যে রাস্তা ব্যবহার করতেন ফেরার পথে অন্য এক রাস্তা ব্যবহার করতেন । ঈদগাহে গিয়ে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। নামাজ শেষে তিনি মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করতেন। ঈদুল ফিতরের খুতবায় ঈদের করনীয় কাজ এবং ঈদুল ফিতরের গুরুত্ব বর্ণনা করতেন । তিনি সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব-দুঃখীদের খোঁজখবর নিতেন। ছোটদের ভালোবাসতেন । পরিশেষে বলব মহান আল্লাহ আমাদেরকে এই পবিত্র ঈদের সব নিয়মনীতি মানা ও পালনের তৌফিক দান করুন আমিন ।
লেখকঃআজিজুল আম্বিয়া, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট। email:azizul.ambya@yahoo.co.uk
S | M | T | W | T | F | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | ||||
4 | 5 | 6 | 7 | 8 | 9 | 10 |
11 | 12 | 13 | 14 | 15 | 16 | 17 |
18 | 19 | 20 | 21 | 22 | 23 | 24 |
25 | 26 | 27 | 28 | 29 | 30 |
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com