২রা অক্টোবর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮
জেসমিন চৌধুরী
আমার প্রথম বই নিষিদ্ধ দিনলিপির প্রকাশ নিয়ে আমি অনেক দ্বিধান্বিত ছিলাম কিন্তু মূলত বন্ধুদের ‘প্ররোচনায়’ প্রকাশিত এই বইটি ভূমিকা-লেখক সেলিনা হোসেন থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকে অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছিল- নারী-পুরুষ, বাচ্চা-বুড়া, আত্মীয়-অনাত্মীয়, বন্ধু-শত্রু, এমনকি অনেক মৌলবাদীও বইটির প্রশংসা করেছিলেন। আমি অভিভূত হয়েছিলাম, উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। প্রকাশ নিয়ে দ্বিধান্বিত থাকলেও বইটিতে সন্বিবেশিত প্রতিটি কলাম ছিল আমার গভীর বিশ্বাস ও বোধ থেকে লেখা, সম্ভবত এটাই ছিল বইটির সাফল্যের মূল কারণ।
আমার দ্বিতীয় বই ‘একজন মায়া অজস্র মধুচন্দ্রিমা’র ক্ষেত্রে ঠিক তা হয়নি। এ পর্যন্ত যারা বইটি পড়েছেন তাদের কাছ থেকে আমি মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। বইয়ের লেখনী, চরিত্র বিন্যাস, সংলাপ রচনা এবং বিষয়বস্তুর প্রশংসা এসেছে। আবার উপন্যাস হিসেবে এর সার্থকতা নিয়ে সমালোচনা এসেছে। আমি নিজে প্রশংসা থেকে সমালোচনাটুকুর সাথেই বেশি একমত।
নাটক হিসেবে গল্পটির সাফল্যই আমাকে এর উপন্যাস রূপদানে ‘প্ররোচিত’ করেছিল, কিন্তু একটা ইস্যুভিত্তিক গল্পের উপন্যাস-রূপ সহজ নয়; তার জন্য অনেক পরিপক্কতা, পরিশ্রম এবং সময়ের প্রয়োজন। কিছুটা মন খারাপ লাগছে নিজের ‘গাট-ফিলিংস’ কে উপেক্ষা করে বইটি তাড়াহুড়ো করে প্রকাশ করার জন্য, বইটির কাহিনীর সম্ভাবনাকে ব্যাহত করার জন্য। আবার ভালো লাগছে এই ভেবে যে আমার পাঠকরা অনেক বোদ্ধা, তারা ‘যাহা পায় তাহা খায় না’। তারা অন্ধ নয়, সমালোচনা করতে পেছপা হয় না। তাদের সাথে আমার ভাবনার একাত্মতাও আমাকে আনন্দ দিয়েছে।
তারপরও আমি বইটির প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি এবং সবাইকে বইটি কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি এই জন্য যে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে- পারিবারিক নির্যাতন, বিশেষ করে বিলেতের সিলেটি সমাজের পটভূমিকায় এবং এই গল্পের একটি শব্দও কল্পিত নয়। যেসব নারীর জীবনে প্রকাশ্য অথবা প্রচ্ছন্ন নির্যাতন উপস্থিত তারা বইটি পড়ে উপকৃত হবেন বলেই আমার বিশ্বাস। যারা নির্যাতক, তাদের মধ্যেও এই বইটি কিছুটা উপলব্ধির জন্ম দেবে বলে মনে করি। যারা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য পড়েন, তাদের কথা আলাদা।
বাস্তব খুব এলোমেলো, বাস্তবের খুব বেশি কাছাকাছি থাকতে গিয়েই বোধ হয় গল্পটাকে তেমন গোছাতে পারিনি। পারিবারিক নির্যাতনের ভয়াবহতা শিশুজীবনকে কীভাবে প্রভাবিত করে এবং সোশাল সার্ভিসেসের কাজের গুরত্ব তুলে ধরতে গিয়ে উপন্যাসের কিছু অংশ তথ্যবহুল লিফলেটের মত হয়ে গেছে।
বইমেলা চলাকালীন অবস্থায় এধরণের আত্মসমালোচনামূলক একটি স্ট্যাটাস হয়তো বইটির ব্যবসায়িক সাফল্যকে ব্যাহত করবে কিন্তু এ নিয়ে আমি বিচলিত নই। আমি জানি এরই মধ্যে আমার খুব ভালো একটি পাঠক-চক্র সৃষ্টি হয়েছে যাদের প্রতি সততার জায়গাটায় একেবারেই কম্প্রোমাইজ করতে চাই না। আমি চাই তারা সমালোচনাটুকুর কথা জেনেই বইটি কিনবেন, পড়বেন এবং প্রতিক্রিয়া দেবেন।
আমার আরো অনেক গল্প বলবার আছে যেগুলো বলা জরুরী কিন্তু দৃঢ় সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে তাড়াহুড়া করে বলতে যাব না আর। ফেসবুকে চটুল উপস্থিতি কমিয়ে এনে আরো অনেক পড়ব, আত্মবিকাশে মন দেব। নিজের মধ্যে কোনো ধরনের অতৃপ্তি নিয়ে প্রকাশে যাব না আর। আশা করি পাঠক ধৈর্য্য ধরে আমার পাশে থাকবেন।
আপনাদের সবার জন্য শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা।
RED TIMES LIMITED
116-117, Concord Emporium,
Kataban, Dhaka-1205.
Mobile: 017111-66826
Email: redtimesnews@gmail.com