এসবিএন ডেস্ক: আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন আদি ঢাকাইয়া খুঁজছেন। তবে শর্ত আছে, এই আদি ঢাকাইয়াকে অবশ্যই সৎ, যোগ্য, দক্ষ, ত্যাগী ও মেধাবী হতে হবে। এই আদি ঢাকাইয়াকে পুরস্কৃত করবেন প্রধানমন্ত্রী। তাকে মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক করা হবে।
আওয়ামীলীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের মৃত্যুর পর সংগঠনের দক্ষিণ শাখার মূল নেতৃত্বের জন্য একজন আদি ঢাকাইয়া নেতাকে খুঁজে বের করার তাগিদ অনুভব করছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাও বলেছেন।
দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃত্বের জন্য একজন আদি ঢাকাইয়া খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশ অনুযায়ী, সৎ, যোগ্য, দক্ষ, ত্যাগী ও মেধাবী একজন আদি ঢাকাইয়া খোঁজা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কমিটি গঠনের কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছেন আওয়ামীলীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ড. আবদুর রাজ্জাক।
তিনি বলেছেন, শীর্ষ দুই পদের একটিতে আদি ঢাকাইয়া খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী। এ অবস্থায় সভাপতিমণ্ডলীর দু’জন প্রভাবশালী সদস্য আদি ঢাকাইয়া নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে কয়েকজন জানিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের যে কোনো একটিতে সব সময়ই আদি ঢাকাইয়া নেতারা প্রাধান্য পেয়ে আসছেন। সংগঠনের সাবেক সভাপতি ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ আদি ঢাকাইয়া। প্রয়াত এম এ আজিজও একজন আদি ঢাকাইয়া ছিলেন।
এবার ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শাখায় এম এ আজিজের সভাপতি হওয়ার বিষয়টি মোটামুটি নিশ্চিত ছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সব হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। সে সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ শাখার রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। আদি ঢাকাইয়াদের অনেকেই শীর্ষ পদে আসার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
এ নিয়ে দলের ভেতরে এক ধরনের অসাধু প্রতিযোগিতাও শুরু হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বে আগ্রহী নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে নিজেদের আদি ঢাকাইয়া প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাদেরই একজন নেতার দাবি, যারা ঢাকায় জন্মেছেন, তারাই ঢাকাইয়া। কিন্তু আদি ঢাকাইয়া নেতারা এমন যুক্তি মানতে নারাজ।
আদি ঢাকাইয়া নেতাদের মধ্যে আলোচনার পুরোভাগে রয়েছেন দলের সাবেক কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজি মোহাম্মদ সেলিম।
আবার প্রয়াত এম এ আজিজ পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকেও আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। তার ছেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আজিজ বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে রাজনীতি করার সুযোগ চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছেন বলেও দাবি করেছেন এ কাউন্সিলর। সম্ভাব্যদের তালিকায় মহানগর কমিটির মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক কোষাধ্যক্ষ নজিবুল হক সরদারও রয়েছেন।
এই নেতাদের মধ্যে কাউকে সভাপতি করা হলে ঢাকার বাইরের একজনকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে। আবার আদি ঢাকাইয়াদের কেউ সাধারণ সম্পাদক হলে সভাপতি হবেন ঢাকার বাইরের একজন। এ হিসেবে ঢাকার বাইরের সম্ভাব্য নেতাদের তালিকায় রয়েছেন ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলন হলেও এখন পর্যন্ত আর কোন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। তবে জাতীয় সম্মেলনের আগে মহানগরের দক্ষিণ ও উত্তর শাখার কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া প্রস্তাবিত কমিটিতে ঢাকা উত্তরে সভাপতি পদে ঢাকা-১১ আসনের এমপি এ কে এম রহমতুল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে মোহাম্মদপুর থানা শাখার সভাপতি সাদেক খানের নাম রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে সাধারণ সম্পাদক পদে শাহে আলম মুরাদের নাম রয়েছে।
সংবাদটি শেয়ার করুন