একজন সিঙ্গেল ফাদারের গল্প

প্রকাশিত: ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮

একজন সিঙ্গেল ফাদারের গল্প

শিরিন ওসমান

আমি এক সিঙ্গেল ফাদারকে জানি। নাম মাসুম । অনেকদিন হয় আমাদের পারিবারিক বন্ধু। মাসুম শান্ত হাসিখুশী স্বভাবের ছেলে।

মাসুম বিয়ের পর থেকেই বৌয়ের নির্যাতন সয়ে আসছে। সারাক্ষন অন্য পুরুষের সাথে ফোনে কথা। বন্ধুদের সাথে গিয়ে দেখা করা। এর মাঝে মেয়েটি প্রেগনেন্ট হয়ে গেলো। বাচ্চা হলো বাপের বাড়ীতে মুন্সিগঞ্জে। বাচ্চাটি এত সুন্দর। নাম শান। এক বছরের জন্মদিন করলো। আমরা গেলাম। মাঝে মাঝে ফোন করে মাসুম বলতো নানা রকম উদ্ভট কথা।

একদিন মন খারাপ করে আমার কাছে আসে। বলে, অনেক বোঝাচ্ছি আপা, সারাক্ষন ঝগড়া করে, সন্দেহ করে। আমি বললাম, আমার তো ভালই লাগলো। কী সুন্দর হাসিমুখে কথা বলে। বলে, আপনি বাইরে থেকে বুঝবেন না। ছেলেটির কথা আমার বিশ্বাসযাগ্য মনে হয়। ওকে আমি বহুদিন থেকে চিনি। বড় বোনের মত দেখে। আপা আপা করে। সিনসিয়ার টাইপ ছেলে। নিজের পেশার প্রতি মনোযোগী । এমন স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অল্প বয়সে গুছিয়ে নিয়েছে। ছোট বেলা বাবা মা হারিয়েছে। একা একা বলতে গেলে মানুষ হয়েছে। বোনরা খোঁজ নেয়। স্বাবলম্বী।

আসলে বলে না সুখে থাকলে ভুতে কিলায়।হয়েছেলো তাই। মেয়েটি একদিন তার প্রেমিকের সাথে চলে যায়। মাসুম তার শ্বশুর শ্বাশুরীকে জানায়। তারাও কোনো কুল কিনারা করতে পারলেন না। তারাও অবাধ্য মেয়ের উপর হাল ছেড়ে দিলেন। মেয়েটির নাম লোপা। লোপা তার ছেলেকে মাঝে মাঝে দেখতে আসতো। মাসুম সিদ্ধান্ত নেয় ডিভোর্সের।যথারীতি ডিভোর্সের কাগজ পাঠায়।ডিভোর্স হয়ে যায়।আদালত ছেলেকে বাবার কাছে থাকার অধিকার দেয়। মেয়েটি পুলিশ লাগিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্থা করতে চায়। কিন্তু সুবিধা করতে পারে না। তবে শান মাঝে মাঝে মায়ের বাসায় যায়। একসময় তার আর যাওয়ার ইচ্ছা থাকে না।

মাসুম খুব প্রত্যয়ী ছেলে । শিশু বয়স থেকে ছেলে মানুষ করার ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলছে। সবসময় শান বাবার সাথে থাকতো। অফিসে, বাজারে, কারো বাড়ীতে। বাস, সিএনজি, রিকশা করে বাবার সাথে শান ঘুরে বেড়ায়। সাথে একটা ব্যাগ। যেখানে শানের খাওয়া ও প্রয়োজনীয় জিনিস থাকতো।

চার বছর বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়। এখন আট বছরের শান বুঝে গেছে তার জীবন কেমন, কিভাবে তার চলতে হবে। এইটুকু বয়সে সে এত দায়িত্বশীল, দেখলে অবাক হতে হয়। স্কুল গাড়ী এসে নিয়ে যায় আবার ছুটি হলে পৌছে দেয়। শান চাবি দিয়ে দরজা খুলে। খাবার গরম করে খায়।গোসল করে। টিভি দেখে। হোম ওয়ার্ক করে। ওর বাবা ফোন করে খবর নেয়।

মাসুম চেষ্টা করছে স্কলারশীপ জোগার করতে। তাহলে শানকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে। মাসুমের পডাশোনায় খুব আগ্রহ। খুব পজেটিভ মনের ছেলে সে। কখনো তার সাবেক স্ত্রী নিয়ে আলাপ তোলে না। জীবনটাকে সে মেনে নিয়েছে। কোনদিন মনমতো সাথী পেলে বিয়ে করবে। ভাগ্য তার ওপর যে পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে মাসুম প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে। আমি বলি তোমার ওপর মা বাবার দোয়া আছে। তাই তুমি সবকিছু সামলে দিয়ে চলতে পারো। মাসুম সৎ ও বুদ্ধিমান পুরুষ। আমার বিশ্বাস জীবনে সে কামিয়াব হবে।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

লাইভ রেডিও

Calendar

September 2023
S M T W T F S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930