রিফাত কান্তি সেনঃ
“তোমাকে পেতেই হবে জিপিএ ফাইভ নয়তো মান আছে যা তা যাবে মোর। জিপিএ ফাইভ মানেই জীবনের সফলতার একটা প্রথম ধাপ।এটা যেন অভিভাবক,শুভানুধ্যায়ী, সকলের প্রত্যাশা।এতে করে সমাজে তৈরি হচ্ছে বৈষম্য, হীনমন্যতা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জন করা হলেও এখন তা অনেকটাই সার্টিফিকেট অর্জনের হাতিয়ার হয়ে গেছে।প্রথম শ্রেণি থেকেই দেখলাম অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু।প্রথম প্রতিযোগিতা, “ভর্তি যুদ্ধ”। এর পরই প্রতিযোগিতায় নামতে হয় কে কত বেশী নাম্বার পেয়েছে,কার গ্রেড কত ভাল।অনেক অভিভাবক,শিক্ষার্থী ভাবে জিপিএ ফাইভ পাওয়া মানে ভবিষতের টার্নিং পয়েন্ট।এতে করে রাতদিন মুখস্ত বিদ্যা অর্জন করে জিপিএ ফাইভ পেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।
আমার এক আত্মীয় আছে।যার সন্তান দামী একটি স্কুলে পড়ে।পড়ালেখার প্রতি এতো বেশী চাপ যে অনেক সময় নাকি খেতেও সময় পায়নি ওনার সন্তানটি।ভোর থেকে কোচিং,প্রাইভেট আর স্কুল শেষে বাসায় ফেরে ক্লান্ত দেহ নিয়ে আবার ভাল রেজাল্ট করার তাগিদে বই নিয়ে পড়তে বসে পরা।অনেকটা যেনো গাঁধার পিঠে বোঝা চাপিয়ে দেয়া আর গাঁধা নির্বাক,অসহায়ের মত সে বোঝা টানা।
আমরা কী একবার ও সন্তানের কথা ভাবছি? আমরা চাই আমাদের সন্তান জিপিএ ফাইভ পাক,আমরা চাই না আমাদের সন্তানটা ভাল মানুষ হোক।
প্রথম শ্রেণি থেকে আমাদের শিশুদের যে প্রতিযোগিতায় নামানো হয় সেটা নিয়েও আমার বড়ই ক্ষোভ মনে পোষিত হয়।
যে বয়সে শিশু আনন্দে বেড়ে উঠার কথা; সে বয়সেই পড়ার চাপে ভর করে যেন জীবন যায় যায়।
জোর করে মাথায় ঢুকানো হয় পড়া।অভিভাবকদের সন্তানের ভবিষৎ নিয়ে বড়ই চিন্তা;সে চিন্তার মহাঔষধ ‘জিপিএ ফাইভ’।
আমি একটি স্কুলে পার্টটাইম চাকরি করি।সেখানকার অনেক শিশুদের মনের ভাব আমি বুঝতে পারি।আমি চাই না তাঁরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামুক।৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ জেএসসি ও পিইসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করা হবে।আমার কাছে অনেক শিক্ষার্থী ফলাফল জানার জন্য উৎকন্ঠা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে।সকাল সকাল একজন শিক্ষার্থী জানালো,রেজাল্ট খারাপ হলে তাঁর বাবা তাকে অনেক বকা দেবে।সে খুবই চিন্তিত এবং মনে খুবই কষ্ট অনুভব করছে।যদি রেজাল্ট খারাপ হয়!
আরেকজন তো ১০০% শিউর হয়ে আছে যে সে খারাপ রেজাল্ট করলে বকা নির্ঘাত।লজ্জ্বার যেন সূত্রপাত একটি খারাপ রেজাল্ট।এমনকী এ কষ্ট থেকে তৈরি হতে পারে মানসিক কোন রোগ।
আর এ রোগের মূল কারণটা কিন্তু আমরাই।আমরা যারা এ পর্যায়টা পার হয়ে এসেছি তাঁরা নিজেদের খুব বিদ্বান মনে করে থাকি।দাম্ভিকতার মারপ্যাঁচে আমরা ছোট করে দেখি অন্যের বিফলতাকে।আসলে আমরা সকলেই সফলতার চাদরে মুখ লুকাতে চাই।আমরা ভুলেই যাই, “ব্যার্থতাই সফলতার চাবিকাঠি”।আমরা শিশুদের শিক্ষা দেই শুধু সফল হতেই হবে;আসলে যে ব্যার্থ হয়নি সে সফল হবে কী করে? সে বিদ্যাটা কখনোই শেখাতে চেষ্টা করিনি।
আজ যারা পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় পাস করবে তাঁদের জন্য অভিনন্দন।যারা অকৃতকার্য হবে তাঁদের জন্যও অভিনন্দন।
রিফাত কান্তি সেন
পার্টটাইম শিক্ষক,কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়।
সংবাদটি শেয়ার করুন